লিবিয়ায় অপহৃত ৪ শ্রমিককে উদ্ধার, পরিবারে স্বস্তি

লিবিয়ায় অপহৃত সোহান প্রামাণিককে নির্যাতনের ভিডিও দেখার পর স্বজনের ভেঙে পড়েছিলেন। গত বৃহস্পতিবার বিকেলে গুরুদাসপুর উপজেলার বিয়াঘাট ইউনিয়নের চরপাড়া গ্রামেছবি: সংগৃহীত

ভাগ্য ফেরাতে লিবিয়ায় গিয়ে দুর্বৃত্তদের হাতে অপহৃত বাংলাদেশি চার শ্রমিককে উদ্ধার করা হয়েছে। আজ রোববার স্থানীয় সময় সকাল ৯টার দিকে অভিযান চালিয়ে তাঁদের উদ্ধার করে লিবিয়ার সেনাবাহিনী। উদ্ধার চার শ্রমিক বর্তমানে দেশটির পুলিশের হেফাজতে আছেন। তবে অপহরণকারীদের আটক করা সম্ভব হয়নি।

উদ্ধার ওই চার শ্রমিকের বাড়ি নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার চড়বিয়াঘাট গ্রামে। গুরুদাসপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উজ্জ্বল হোসেন তাঁদের উদ্ধারের বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, নাটোরের পুলিশ সুপার তারিকুল ইসলাম দুপুর ১২টার দিকে তাঁদের উদ্ধার হওয়ার তথ্য নিশ্চিত করেন। তাঁর নির্দেশেই ওই শ্রমিকদের পরিবারের কাছে জিম্মিদশা থেকে মুক্ত হওয়ার খবরটি তিনি পৌঁছে দেন। এ সময় পরিবারগুলোর মধ্যে স্বস্তি ফিরে আসে।

পুলিশ ও ভুক্তভোগী শ্রমিকদের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সংসারের সচ্ছলতা ফেরাতে গুরুদাসপুরের চড়বিয়াঘাট গ্রামের সোহান প্রামাণিক (২০), সাগর হোসেন (২৪), নাজিম আলী (৩৬) ও বিদ্যুৎ হোসেন (২৬) লিবিয়ায় গিয়ে দুর্বৃত্তদের হাতে অপহৃত হন। অপহরণকারীরা তাঁদের স্বজনদের কাছে মুঠোফোনে নির্যাতনের ভিডিও পাঠিয়ে ১০ লাখ টাকা করে মুক্তিপণ দাবি করে আসছিলেন। এ নিয়ে গত শুক্রবার প্রথম আলো অনলাইনে ও ছাপা পত্রিকায় পৃথক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

জিম্মিদশা থেকে মুক্ত সোহান প্রামাণিকের মা দুলি খাতুন প্রথম আলোকে বলেন, জিম্মিদশা থেকে মুক্ত হয়েই মুঠোফোনে ভিডিও বার্তায় তাঁর ছেলে কথা বলেছেন। ছেলে ভিডিওতে বলেছেন, ‘আব্বা-আম্মু, আমি ভালো আছি, আমার জন্য কোনো চিন্তা করবেন না।” ছেলে ভালো থাকায় তাঁর পরিবারের সবাই খুব খুশি। একপর্যায়ে আনন্দে কেঁদে ফেলেন দুলি খাতুন। তিনি বলেন, অপহৃত থাকার সময় ছেলেকে অমানবিক নির্যাতনের ভিডিও দেখে নিজেকে ঠিক রাখা কঠিন ছিল। পুরো পরিবারে ভয়-শঙ্কা কাজ করেছে। ছেলেকে মুক্ত করতে অপহরণকারীদের মুক্তিপণের টাকা জোগাড়ের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এখন ছেলে মুক্ত হওয়ায় স্বস্তি পেয়েছেন।

আরও পড়ুন

আরেক যুবক নাজিম আলীর স্ত্রী নাদিরা বেগম বলেন, সংসারের অভাব ঘোচাতে দুই শিশুসন্তানকে রেখে ধারদেনা করে স্বামীকে লিবিয়ায় পাঠিয়েছিলেন। অপহরণ ও নির্যাতনের খবর পাওয়ার পর থেকে মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছিল। অবুঝ সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কায় পড়েছিলেন। প্রতিবেশীরা পাশে থেকে শক্তি ও সাহস জুগিয়েছেন। স্বামীর মুক্ত হওয়ার খবরে মনে সাহস ফিরে এসেছে।

উদ্ধার সাগর হোসেন ও বিদ্যুতের স্বজনদের প্রতিক্রিয়া একই ধরনের। পরিবারগুলোর দেওয়া তথ্যমতে, দুই বছর আগে ওই চার শ্রমিক লিবিয়ায় যান। অপহরণের পর এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে তাঁরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছিলেন। গত ২ জুন তাঁদের পরিবারকে নির্যাতনের ভিডিও পাঠিয়ে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে অপহরণকারীরা। ভুক্তভোগী চার যুবক অপহরণকারীরা বাংলাদেশি বলে তাঁদের পরিবারকে জানান।