সবচেয়ে বড় সমস্যা জলাবদ্ধতা

নর্দমাগুলো ময়লা-আবর্জনায় ভরে যাওয়ায় পানি নামতে সময় নেয়। আর মশার যন্ত্রণায় দুই ওয়ার্ডের বাসিন্দারাই অতিষ্ঠ।

সিলেট সিটি করপোরেশনের ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের হাতিমবাগ-সবুজবাগ এলাকার সড়কটির সংস্কারকাজ দীর্ঘদিন ধরে চলছে। ৪ মে সবুজবাগ এলাকায়ছবি: প্রথম আলো

‘বর্ষার সময় নগরের অন্যান্য এলাকায় না থাকলেও মাছিমপুরে জলাবদ্ধতা থাকে। মশার যন্ত্রণার কথা আর বলে লাভ নেই। সুরমা নদীর তীরসংলগ্ন এবং একটি ছড়া ও হাওরসংলগ্ন থাকায় ময়লা-আবর্জনা এলাকাটি ঘিরে রেখেছে বলা যায়। এর একটি স্থায়ী সমাধান প্রয়োজন। এ ছাড়া শুঁটকির আড়ত থাকায় ওই এলাকায় দুর্গন্ধ থাকে।’

কথাগুলো বলছিলেন সিলেট নগরের মাছিমপুরের বাসিন্দা ছায়েদ মিয়া। তিনি সিলেট সিটি করপোরেশনের ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা। সিলেট সিটি করপোরেশনের ২৩ নম্বর ওয়ার্ড বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিধন্য। ১৯১৯ সালে বিশ্বকবি সিলেটে সফরকালে ওই এলাকায় গিয়েছিলেন। সেখানে মণিপুরি নৃত্য দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন।

ওয়ার্ডের এলাকাগুলো হচ্ছে মাছিমপুর, মাছিমপুর মণিপুরি পাড়া, কুড়িপাড়া, মেন্দিবাগ, দুবড়ি হাওর, দেওয়ানবাগ, উপকণ্ঠ, দক্ষিণ সাদিপুর ও নোয়াগাঁও। ৪ ও ৫ মে এলাকাগুলো ঘুরে দেখা গেছে, মাছিমপুরে প্রবেশের পর সুরমা নদীর ওপর নির্মিত শাহজালাল সেতুর নিচে রয়েছে দুবড়ি হাওর। হাওরের পাশে কয়েকটি বসতবাড়ি। হাওর আর বাড়ির সঙ্গে কোনো সুরক্ষা দেয়াল নেই। সেটি পেরিয়ে মাছিমপুর এলাকায় প্রবেশ করলে পথে দেখা যায় ছোট-বড় কয়েকটি গতিরোধক। সেটি পেরিয়ে মাছিমপুর মণিপুরি পাড়ায় প্রবেশের পর দেখা মেলে নারীদের হাট। স্থানীয় ব্যক্তিদের কাছে সেটি ‘বউবাজার’ নামে পরিচিত। সেখানে কেনাকাটা করেন অনেকে। মহল্লায় সবজির বাজার হওয়ায় প্রবেশপথ সরু হয়ে গেছে। ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে ময়লা-আবর্জনা। একটু সামনে এগিয়ে পাওয়া যায় সুরমা নদীর তীরে একটি ঘাট। ঘাটে স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকে গোসল সেরে নেন। এ ছাড়া চলে দৈনন্দিন ধোয়ামোছার কাজ। এর পাশে ফেলা হয়েছে ময়লা-আবর্জনা। এ ছাড়া মাছিমপুরের গোয়ালিছড়া-সংলগ্ন শুঁটকির আড়তের গন্ধও নাকে লাগে।

মাছিমপুরের বাসিন্দা সুনীল সিংহ বলেন, এলাকার নর্দমাটি ছোট। বর্ষার সময় পানির ঢল গোয়ালিছড়া হয়ে সুরমা নদীতে নামে। এলাকাটি গোয়ালিছড়া ও সুরমা নদীর সংযোগস্থল হওয়ায় পানি বাড়লে বসতবাড়িতে ময়লা-আবর্জনা আসে। এসব ময়লা-আবর্জনায় পানি চলাচলের পথে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে।

মোস্তাক আহমদ, সোহেল আহমদ

ওয়ার্ডটির আরও পাঁচ বাসিন্দা জানান, এলাকায় নির্দিষ্ট একটি ময়লার ভাগাড় প্রয়োজন। এলাকাগুলো ঘনবসতি হওয়ায় ময়লা-আবর্জনা বেশি জমছে। নর্দমাগুলো সরু হওয়ায় ময়লা-আবর্জনায় সেগুলো আটকে যাচ্ছে। নর্দমাগুলো পরিষ্কারের পাশাপাশি আকার বৃদ্ধি করতে সংস্কার প্রয়োজন।

ওয়ার্ডের টানা দুবারের নির্বাচিত কাউন্সিলর মোস্তাক আহমদ বলেন, তাঁর মেয়াদে পরিকল্পনা অনুযায়ী ৮০ শতাংশ কাজ করেছেন। বাকি কাজ ভবিষ্যতে নির্বাচিত হতে পারলে সম্পন্ন করবেন।

সরু সড়কে দীর্ঘদিন ধরে চলছে নির্মাণকাজ

সিলেট সিটি করপোরেশনের ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের এলাকাগুলো হলো হাতিমবাগ, সৈদানীবাগ, সবুজবাগ, বোরহানাবাদ, গঙ্গাদাস (হাতিমবাগ), কুশিঘাট, লামাপাড়ার একাংশ, মিরাপাড়া পশ্চিম, সাদাটিকর, সাদারপাড়া, উত্তর সাদিপুর, তেররতন ও টুলটিকর।

ওয়ার্ডের তেররতন এলাকার উন্মুক্ত নর্দমায় ময়লা-আবর্জনার স্তূপ দেখা গেছে। এলাকার বাসিন্দা তারেক আহমদ বলেন, ওয়ার্ডের তেররতন এলাকাটি নিচু। নিচু এলাকায় বর্ষার সময় জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। নর্দমাগুলো ময়লা-আবর্জনায় ভরে যাওয়ায় পানি নামতে সময় নেয়।

হাতিমবাগ থেকে সবুজবাগ সড়কটির নর্দমার কাজ শেষ হলেও সড়কের কাজ শেষ হয়নি। এতে সড়কটির ইট-খোয়া উঠে গিয়ে মাটি বের হয়ে থাকতে দেখা গেছে। নর্দমার কিছু অংশ উন্মুক্ত অবস্থায় রাখা হয়েছে। নর্দমার মুখে ময়লা-আবর্জনার স্তূপ দেখা গেছে। সবুজবাগের বাসিন্দা দিনার আহমদ বলেন, সড়কের নির্মাণকাজ করা হয়নি। নর্দমাটি উঁচু হয়ে রয়েছে এবং সড়কটি নিচু। এ জন্য যানবাহন চলাচল করতে পারছে না।

ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী হুমায়ন কবীর বলেন, ওয়ার্ডে সড়কবাতি কম, রাতে অন্ধকার লাগে। রাস্তাঘাট ছোট, পয়োনিষ্কাশন সমস্যা আছে। দীর্ঘদিন ধরে সাদারপাড়া মসজিদ লাগোয়া সড়কটি ভাঙাচোরা অবস্থায় রয়েছে। বর্তমান কাউন্সিলর ভোট নষ্ট হওয়ার ভয়ে রাস্তা বড় করছেন না। তিনি নামমাত্র নোটিশ দিয়ে দায় সেরেছেন। তিনি নির্বাচিত হলে ওয়ার্ডের উন্নয়নের পাশাপাশি সুবিধাবঞ্চিত ব্যক্তিদের পাশে দাঁড়াবেন।

ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সোহেল আহমদ বলেন, এলাকায় ময়লা সংগ্রহের জন্য গাড়ি পাঠানো হয়। কিন্তু বাসিন্দারা সচেতনতার অভাবে যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা ফেলছেন। তৃতীয় মেয়াদে তিনি দায়িত্ব পেলে বিভিন্ন এলাকার অসমাপ্ত উন্নয়নমূলক কাজ সমাপ্ত করতে চান। তিনি বলেন, ‘সরু সড়ক বড় করতে হাতিমবাগ ও মিরাপাড়া এলাকার বাসিন্দারা যাতে কিছু জায়গা ছেড়ে দেন, এটি নিয়ে আলোচনা করেছি। তাঁরা কিছুটা রাজিও হয়েছেন। ভবিষ্যতে সে কাজ করা হবে।’

সোহেল আহমদ আরও বলেন, এলাকায় একটি ময়লার ভাগাড় করার পরিকল্পনা রয়েছে, যাতে বাসিন্দারা যত্রতত্র ময়লা না ফেলে সেখানে নিয়ে ফেলেন। ঘনবসতি এবং বস্তি এলাকা থাকায় মানুষজন ময়লা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ফেলছেন। তিনি তাঁদের সচেতন করতে স্থানীয় তরুণদের নিয়ে কাজ করছেন।