সন্তান বিক্রির টাকায় শিল্পী পরিশোধ করলেন বকেয়া ভাড়া

ঠাকুরগাঁওয়ের শিল্পী বেগমকে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরের চাবি তুলে দিচ্ছেন ইউএনও বেলায়েত হোসেন
ছবি: সংগৃহীত

স্বামী রায়হান যখন ছেড়ে যান, তখন শিল্পী বেগম সন্তানসম্ভবা। তিন সন্তানের খরচ সামলাতে গিয়ে ঘরভাড়া আর মুদিদোকানে কয়েক হাজার টাকা বকেয়া পড়ে যায়। অন্যদিকে অনাগত সন্তানের ভরণপোষণের খরচ। সব মিলিয়ে ভেঙে পড়েন শিল্পী। পরে অনাগত সন্তানকে স্থানীয় এক চক্রের মাধ্যমে নিঃসন্তান এক দম্পতির কাছে বিক্রি করে দেন। সেই টাকায় পরিশোধ করেন বকেয়া বাড়িভাড়া আর মুদিদোকানের বকেয়া।

ঠাকুরগাঁও শহরের গোয়ালপাড়া মহল্লায় গত বৃহস্পতিবার এ ঘটনা ঘটেছে। স্থানীয় লোকজন ও শিল্পীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০১১ সালে গ্যারেজ শ্রমিক রায়হান আলীর সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। তাঁদের ঘরে আরও তিন সন্তান আছে। স্বামীর স্বল্প আয়ে সংসার চলত না। তাই শিল্পী গৃহপরিচালিকার কাজ শুরু করেন। এর মধ্যে শিল্পী চতুর্থবারের মতো অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন। পরে হঠাৎ শিল্পীকে ছেড়ে চলে যান রায়হান।

খরচ সামলাতে না পেরে মেয়েকে কাছে রেখে দুই ছেলেকে বাবার বাড়ি রেখে আসেন শিল্পী। এক মেয়েকে নিয়ে খেয়ে না খেয়ে থেকেও সাড়ে চার হাজার টাকা বাড়িভাড়া ও পাঁচ হাজার টাকা মুদিদোকানে বকেয়া পড়ে যায় তাঁর। এমন অবস্থায় গর্ভের সন্তান জন্ম নিলে ওর মুখে কীভাবে খাবার তুলে দেবেন, এ চিন্তায় তিনি অস্থির ছিলেন। পরে প্রতিবেশীদের সঙ্গে পরামর্শ করলে তাঁরা প্রসবের পর শিশুটিকে অন্যের কাছে দিয়ে দিতে বলেন। এ নিয়ে প্রতিবেশী এক নারী এক দম্পতির সঙ্গে চুক্তিও করে ফেলেন। ওই চুক্তির পর ওই নারী শিল্পী ও তাঁর গর্ভের সন্তানের নিয়মিত দেখভাল করতে লাগলেন।

গত বুধবার একটি ছেলেসন্তানের জন্ম দেন শিল্পী। জন্মের পর শিশুটি অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে ঠাকুরগাঁওয়ের ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে গত বৃহস্পতিবার শিল্পীর সন্তান বিক্রির বিষয়টি জানাজানি হয়।

আরও পড়ুন

শিল্পী বেগম বলেন, স্বামী ছেড়ে যাওয়ার পর খুবই কষ্টে দিন কাটছিল। সাড়ে চার হাজার টাকা বাড়িভাড়া আর পাঁচ হাজার টাকা মুদিদোকানে বাকি পড়ে যায়। ছেলেকে অন্যের কাছে দিয়ে বিনিময়ে হাতে পেয়েছেন ১৫ হাজার টাকা। সে টাকা পেয়ে তিনি বাড়িভাড়া ও দোকানের বকেয়া পরিশোধ করেছেন। আর বাকি টাকায় চাল কিনে বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছেন। তিনি অত্যন্ত অসহায়। তা না হলে কোন পরিস্থিতিতে পড়লে একজন মা সন্তানকে অন্যের হাতে তুলে দেন?

স্থানীয় লোকজন আরও বলেন, জেলায় একটা চক্র দরিদ্রদের নবজাতক নিঃসন্তান দম্পতির কাছে বিক্রির সঙ্গে জড়িত। এ চক্রের সদস্য সদর উপজেলার রুহিয়া এলাকার মিনি বেগম ও পৌর শহরের গোয়ালপাড়া এলাকার মাহমুদা বেগম।

আরও পড়ুন

এ বিষয়ে মিনি বেগম বলেন, ‘নিঃসন্তানদের জন্য আমি বাচ্চা জোগাড় করে দেই। বিনিময়ে তাঁরা (শিশুগ্রহীতা) যা দেন, তা ভাগ করে নেই।’

সন্তান বিক্রির বিষয়টি জেনে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বেলায়েত হোসেন গতকাল শুক্রবার শিল্পীর বাড়িতে ছুটে যান। পরে তিনি শিল্পীকে আশ্রয়ণ প্রকল্পের একটি ঘর বরাদ্দ দেন। গতকাল শিল্পী মেয়েকে নিয়ে সেই ঘরে উঠেছেন। ইউএনও বলেন, ‘বিষয়টি জানার পর আমরা খোঁজখবর নিয়েছি। সেই মাকে আশ্রয়ণের একটি ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তিনি যাতে নিজেই স্বনির্ভর হতে পারেন, সেই জন্য দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।’