মির্জা আজমের উপস্থিতিতে একক প্রার্থী ঘোষণা, মানেননি আওয়ামী লীগের ছয় নেতা

জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় চেয়ারম্যানসহ অন্য পদে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। গতকাল উপজেলার এসএম সিনিয়র মাদ্রাসা মাঠেছবি: সংগৃহীত

জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হওয়ার দৌড়ে রয়েছেন আওয়ামী লীগের অন্তত সাত নেতা। গতকাল শনিবার আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভায় তাঁদের মধ্য থেকে একজনকে দলীয় প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়। তখন অন্য নেতারা নির্বাচনের মাঠে থাকার ঘোষণা দিয়ে ওই সভা ছেড়ে চলে যান।

দলীয় নেতা-কর্মী ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বিশেষ বর্ধিত সভার ব্যানারে গতকাল সকাল সাড়ে নয়টার দিকে প্রথমে উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে রুদ্ধদ্বার বৈঠক হয়। পরে বেলা ১১টার দিকে ওই কার্যালয়–সংলগ্ন এসএম সিনিয়র মাদ্রাসা মাঠে সভা হয়। ওই সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন জামালপুর-৩ (মাদারগঞ্জ-মেলান্দহ) আসনের সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম।

আগামী ৪ মে প্রথম ধাপের ভোট গ্রহণের মধ্য দিয়ে ভোট শুরু হচ্ছে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে। গত ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন কমিশন থেকে জানানো হয়, প্রথম ধাপে ৪ মে, দ্বিতীয় ধাপে ১১ মে, তৃতীয় ধাপে ১৮ মে এবং চতুর্থ ধাপে ২৫ মে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।

মাদারগঞ্জ উপজেলা পরিষদে তৃতীয় ধাপে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এখনো তফসিল ঘোষণা করা হয়নি। তবে চেয়ারম্যান পদের জন্য বেশ আগে থেকেই দৌড়ঝাঁপ করছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ওবায়দুর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল্লাহ আলামিন, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মো. দৌলতুজ্জামান ওরফে দুলাল, উপজেলা আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক জয়নাল আবেদীন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোশারফ হোসেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রায়হান রহমতুল্লাহ ও উপজেলা শ্রমবিষয়ক সম্পাদক ফরিদুল ইসলাম।

গতকাল আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভায় ওবায়দুর রহমানকে একক প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। যদিও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়া হবে না এবং দলীয় প্রতীক নৌকাও কেউ পাবেন না।

উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলের একক প্রার্থী সম্পর্কে মাদারগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক জয়নাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘হঠাৎ করে আমাদের প্রিয় নেতা মির্জা আজম মহোদয় সিদ্ধান্ত দেন, আমাদের ও তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের নিয়ে তিনি বসবেন। তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের ভোটে প্রার্থী চূড়ান্ত করার কথা জানানো হয়। কিন্তু বর্তমান চেয়ারম্যান উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক (ওবায়দুর রহমান)। তিনি সুনির্দিষ্ট নেতা-কর্মীর কাছে চিঠি দিয়েছেন। কিন্তু তাঁদের মধ্যে অনেকেই দলে নেই। এ জন্য ভোটের মাধ্যমে প্রার্থী নির্বাচনের সিদ্ধান্ত বর্জন করে এবং সেখান থেকে আমরা স্লোগান দিয়ে বেরিয়ে আসি। আমরা নির্বাচন করব।’

চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে গতকাল রাতে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল্লাহ আলামিন ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন। সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘প্রিয় মাদারগঞ্জবাসী, আসসালামু আলাইকুম, আগামী ১৮ মে মাদারগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী হিসেবে ছিলাম, আছি এবং থাকব। ইনশা আল্লাহ।’ আজ রোববার দুপুরে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা যাঁরা প্রার্থী হতে আগ্রাহী, তাঁরা কেউ ওই সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত হইনি। ছয়জনই ওই সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করেছি। যাঁর কোনো জনভিত্তি নাই, তাঁকে (ওবায়দুর রহমান) কেন বারবার প্রার্থী করতে হবে? আমাদের ছয়জনের মধ্য থেকে যে কাউকে প্রার্থী করা যেত। কিন্তু সেটা করা হয়নি।’

উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রায়হান রহমতুল্লাহ বলেন, ‘আমরা তাঁর (মির্জা আজম) সব সিদ্ধান্তই মাথা পেতে নিতাম। কিন্তু এবার তিনি জনবিচ্ছিন্ন এক নেতাকে একক প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেছেন। তাঁর প্রতি আমাদের আর আস্থা নেই।’

এ বিষয়ে মির্জা আজম বলেন, ‘মাদারগঞ্জে তৃণমূলের ২ হাজার ৭০০ নেতা-কর্মীকে ডাকা হয়েছিল। কিন্তু আমি বলেছি, কে প্রার্থী হবেন, সেটা ভোটের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত হোক। সে অনুযায়ী ১৯ জন প্রার্থী ছিল। যখন পুরো সিদ্ধান্তটি ভোটের মাধ্যমে দিয়েছি, তখন পাঁচজন ভোটে অংশ নেননি। একজন ভোটে অংশ নিয়েছিলেন। কিন্তু ভোটের অবস্থা দেখে তিনি ভোট বর্জন করে চলে যান। আমার সিদ্ধান্ত ছিল, যিনি সর্বোচ্চ ভোট পাবেন, তিনি দলীয় সমর্থন পাবেন। আমি একক প্রার্থী ঘোষণা করিনি।’

মির্জা আজম আরও বলেন, তৃণমূলের ভোটে দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত হয়েছে। এই প্রার্থীর পক্ষে দলের নেতা-কর্মীরা কাজ করার জন্য উন্মুক্ত থাকবেন। অন্যরা ইচ্ছা করলে প্রার্থী হতে পারবেন। কিন্তু তাঁরা দলের সমর্থিত প্রার্থী নন। যেহেতু কেন্দ্র থেকে সিদ্ধান্ত হয়েছে উন্মুক্ত নির্বাচনের। সে কারণে কেউ প্রার্থী হলে, তাঁর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না।