খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত হলেও পুষ্টিনিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়নি

বরিশালে ‘পুষ্টি খাতে অর্থায়ন’ শীর্ষক সংলাপে বক্তব্য দেন জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার বাংলাদেশ প্রতিনিধি জিয়াওকুন শি। আজ সোমবার দুপুরে নগরের একটি হোটেলে
ছবি: প্রথম আলো

বরিশালে পুষ্টি খাতে অর্থায়নবিষয়ক এক সংলাপে বক্তারা বলেছেন, খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিতে বাংলাদেশ অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করেছে। খাদ্য উৎপাদনে সফলতা পাওয়া পৃথিবীর ১০টি দেশের মধ্যে অন্যতম বাংলাদেশ। খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত হলেও এখনো পুষ্টিনিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়নি। এটা করতে না পারলে সুস্থ, সবল প্রজন্ম গড়ে তোলা অসম্ভব। এ জন্য পুষ্টি খাতে বিনিয়োগ প্রয়োজন।

আজ সোমবার নগরের একটি হোটেলে পুষ্টি খাতে অর্থায়নবিষয়ক এ সংলাপ হয়। সকাল সাড়ে ১০টায় শুরু হওয়া সংলাপ চলে বেলা দুইটা পর্যন্ত। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) বাংলাদেশ প্রতিনিধি জিয়াওকুন শি। বাংলাদেশ সরকার, এফএও এবং দ্য গ্লোবাল অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড ফুড সিকিউরিটি প্রোগ্রাম (জিএএফএসপি) যৌথভাবে এ সংলাপের আয়োজন করে।

সংলাপে জিয়াওকুন শি বলেন, বাংলাদেশ একটি উন্নত দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করছে। সে ক্ষেত্রে পরবর্তী প্রজন্মকে একটি স্বাস্থ্যসম্মত জাতি হিসেবে গড়ে তোলার বিকল্প নেই। স্বাস্থ্যসম্মত জাতি গড়তে হলে পুষ্টিনিরাপত্তা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। তিনি আরও বলেন, এফএও পুষ্টিনিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য আন্তরিকভাবে বাংলাদেশের পাশে থাকতে চায়। বাংলাদেশে পুষ্টিনিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এ কাজে সব ধরনের কারিগরি ও অন্যান্য সহায়তা দিয়ে পাশে থাকতে চান তাঁরা।

অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব ও বর্তমানে কৃষি ব্যাংকের চেয়ারম্যান মো. নাসিরুজ্জামান, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বাদল চন্দ্র বিশ্বাস, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক দেবাশীষ সরকার, ডাচ্‌-বাংলা ব্যাংকের সিএসআর রিসার্চ কমিটির চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মো. মঞ্জুরুল আলম, বাংলাদেশ ব্যাংকের অতিরিক্ত পরিচালক মো. শহীদ রেজা, কৃষি ব্যাংকের বরিশাল অঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক মো. হোলাম মাহবুব ও সারা বাংলা কৃষক সোসাইটির সভাপতি রিতা ব্রহ্ম। সংলাপটি সঞ্চালনা করেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (পরিকল্পনা উইং) মাহবুবুল হক পাটোয়ারী।

দেশের এখনো ৭৩ শতাংশ মানুষ যথাযথ পুষ্টি পায় না উল্লেখ করে বক্তারা বলেন, খাদ্য উৎপাদনে অভূতপূর্ব অগ্রগতি এলেও খাদ্যের মান নিশ্চিত করা যায়নি। ক্ষতিকর কীটনাশক, উচ্চমাত্রার হরমোন প্রয়োগ করায় পুষ্টিশৃঙ্খলে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। জনস্বাস্থ্য হুমকিতে পড়ছে। এটা রোধকল্পে সম্মিলিত প্রয়াস দরকার। সেই সঙ্গে উৎপাদনের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে ভালো ও মানসম্মত বীজ কৃষকদের হাতে পৌঁছে দিতে হবে।

বক্তারা বলেন, জলবায়ুর অভিঘাত মোকাবিলায় প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতাকে বাড়াতে হবে। কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট এ লক্ষ্যে অনেক প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে। বিশেষ করে ভাসমান বেডে সবজি ও মসলা চাষ প্রযুক্তি উদ্ভাবনের ফলে তা পতিত জমিকে আবাদের আওতায় আনা সম্ভব হচ্ছে। দেশে ২২ লাখ হেক্টর জমি আগে পতিত ছিল। সরকার উদ্যোগ নিয়ে এক লাখ হেক্টর জমিকে আবাদের আওতায় এনেছে। ভাসমান কৃষি প্রযুক্তি ব্যবহার করে জলাবদ্ধ ২০ হাজার হেক্টর জমিকে কৃষি উৎপাদনের আওতায় আনা হয়েছে।

অনুষ্ঠানে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব মো. নাসিরুজ্জামান বলেন, পুষ্টি বলতে আগে দেশের মানুষ কেবল মাছ, মাংস, দুধ, ডিমকেই বুঝত। কিন্তু শাকসবজিতেও যে পুষ্টিগুণ রয়েছে, সেই ধারণা ছিল না। এ ধারণা সম্প্রসারণ করতে করোনার সময়ে বাড়ি বাড়ি পুষ্টি বাগান করার প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল। এ জন্য কারিগরি ও অর্থসহায়তা দেওয়া হয়। এক শতক জমিতে এসব বাগান করে বেশ সাফল্য এসেছে। এখন তাঁদের লক্ষ্য ৪ লাখ ৮৯ হাজার ৯০০ পরিবারকে এ প্রকল্পের আওতায় আনা। পুষ্টিনিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। কৌশল নির্ধারণ করতে হবে।

সংলাপে কৃষিবিজ্ঞানী, ব্যাংকার, গবেষক, বরিশাল, খুলনা ও কুষ্টিয়া অঞ্চলের নারী কৃষকসহ নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।