অস্থায়ী স্মৃতিস্তম্ভে ফুল দিয়ে নিহতদের স্মরণ

রানা প্লাজা ধসে নিহতদের স্মরণে অস্থায়ী স্মৃতিস্তম্ভে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের সদস্যরা। আজ সোমবার সকালে সাভারে
ছবি: শুভ্র কান্তি দাশ

সাভারে রানা প্লাজা ধসের ১০ বছর হচ্ছে আজ সোমবার। ভয়াবহ সেই ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের স্মরণ করছেন বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের সদস্য, নিহত ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্য ও সহকর্মীরা। আজ সকাল থেকে ধসে পড়া রানা প্লাজার সামনে অস্থায়ী স্মৃতিস্তম্ভে ফুল দিয়ে তাঁরা এ শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন।

আজ সকাল আটটার দিকে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের সদস্যরা বিক্ষিপ্ত মিছিল নিয়ে রানা প্লাজার সামনে জড়ো হন। পরে তাঁরা সেখানে অস্থায়ী স্মৃতিস্তম্ভে নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।

আরও পড়ুন

এদিকে রানা প্লাজা ধসের পর গত ১০ বছরে বিভিন্ন সময়ে শ্রমিকের এক জীবনের আয়ের সমান ক্ষতিপূরণ, ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের শাস্তিসহ নানা দাবি জানায় শ্রমিক সংগঠনগুলো। এখনো দাবি আদায় না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নেতা-কর্মীরা।

রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় জড়িতদের শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন। আজ সোমবার সকালে সাভারে
ছবি: প্রথম আলো

রানা প্লাজা ধসে আহত সুইং অপারেটর বুলবুলি খাতুনও এসেছিলেন শ্রদ্ধা জানাতে। কান্নাজড়িত কণ্ঠে প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘ভবনধসের পর লাশের ওপর পড়ে ছিলাম। আমার চারপাশে ছিল লাশ। ওই দিন রাত আটটার দিকে আমাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হয়। ডান পা নষ্ট হয়ে গেছে। হাঁটতে পারি না।’

একাধিক শ্রমিক সংগঠনের নেতা-কর্মীরা জানান, রানা প্লাজা ধসে শ্রমিক হতাহতের পর থেকে বিভিন্ন সময়ে নানা দাবি তোলা হয়। এর মধ্যে ছিল শ্রমিকদের এক জীবনের আয়ের সমান ক্ষতিপূরণ, আহত শ্রমিকদের বিনা মূল্যে আজীবন চিকিৎসা ও ধসের ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের শাস্তি, রানা প্লাজার জমি বাজেয়াপ্ত করে হতাহত শ্রমিকদের স্থায়ী পুনর্বাসন, রানা প্লাজা এলাকা যথাযথ সংরক্ষণ ও সেখানে স্থায়ী স্মৃতিস্তম্ভ তৈরি, ২৪ এপ্রিল শোক ও নিরাপত্তা দিবস হিসেবে সব কারখানা বন্ধ রাখা, শ্রমিকদের জন্য মালিক-সরকার ও বায়ারের উদ্যোগে জরুরি তহবিল গঠন ইত্যাদি।

বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতির সভাপ্রধান তাসলিমা আখতার প্রথম আলোকে বলেন, রানা প্লাজা ধসের পর গার্মেন্টস সেক্টর ও মালিকদের অর্থনৈতিক উন্নয়ন হলেও শাস্তি হয়নি দোষী ভবনমালিকসহ অন্যদের। ১০ বছরে যেখানে বিচারপ্রক্রিয়া শেষ হওয়ার কথা, সেখানে সোহেল রানাসহ দোষী ব্যক্তিদের পার পাইয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। দোষী ব্যক্তিদের শাস্তি না হলে বিচারহীনতার সংস্কৃতি টিকে থাকবে।

আরও পড়ুন

গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের উপদেষ্টা আবদুল্লাহ আল কাফী প্রথম আলোকে বলেন, ‘রানা প্লাজা ধসে নিহত ব্যক্তিদের বিষয়টি একটি কাঠামোগত হত্যাকাণ্ড। দীর্ঘ ১০ বছরেও এর বিচার হয়নি। এর মধ্য দিয়ে সরকারে দৃষ্টি প্রতিফলিত হয়। আমরা এর নিন্দা জানাই। আমরা কল্যাণ তহবিলে জমাকৃত টাকা যথাযথ প্রক্রিয়ায় ক্ষতিগ্রস্তদের দ্রুত দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।’

আরও পড়ুন

প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ধসে পড়ে রানা প্লাজা। এতে ১ হাজার ১৩৫ জন নিহত হন। গুরুতর আহত হয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করেন আরও ১ হাজার ১৬৯ জন। পরে এ ঘটনায় মোট তিনটি মামলা হয়। এর মধ্যে অবহেলাজনিত মৃত্যু চিহ্নিত হত্যা মামলাটি করে পুলিশ। ইমারত নির্মাণ আইন লঙ্ঘন করে ভবন নির্মাণের অভিযোগে অপর মামলাটি করে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। আর দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ভবন নির্মাণসংক্রান্ত দুর্নীতি নিয়ে আরেকটি মামলা করে।