ইছামতী খালে সেতু নির্মাণ
ক্ষতিপূরণ পাননি জেলেরা
সেতুর বর্ধিত অংশে জেলেপল্লির তিনটি পরিবারের প্রায় ৩২ শতক জমি চলে গেছে। ওই জায়গায় তাঁদের একটি রান্নাঘর এবং ছয়টি দোকান ছিল।
যশোরের অভয়নগর উপজেলায় ইছামতী খালের ওপর নির্মিত ৩০ মিটার দীর্ঘ একটি সেতু ছিল। সেটি ভেঙে আরও বড় আকারের নতুন একটি সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে। সেতুর মূল অবকাঠামোর কাজ শেষ হয়ে গেছে। সংযোগ সড়কের কাজ বাকি। সড়কের এক পাশের বর্ধিতাংশ পড়েছে স্থানীয় জেলেপাড়ার বাসিন্দাদের জমিতে। কিন্তু জেলেরা এখনো কোনো ক্ষতিপূরণ পাননি। জমি হারিয়ে ক্ষতিপূরণের আশায় ঘুরছেন তাঁরা।
১১ অক্টোবর ইছামতী খালের পাড় এলাকায় দেখা যায়, পশ্চিম থেকে পূর্ব দিক চলে গেছে ইছামতী খাল। সেতুর উত্তর পাশে ছোট একটি বাজার। দক্ষিণ পাশে জেলেপল্লি। সেতুর দক্ষিণ প্রান্তের সংযোগ সড়কের বাঁ পাশে তিনটি দোকান। আগে তিনটি দোকান ভাঙা হয়েছে। সড়কের ডান পাশে কয়েকটি ভিটাবাড়ি। সেতুর কাজ শেষ হয়েছে। সেতুর দুই পাশে বালু ফেলে উঁচু করা হয়েছে।
সেতুর পাশে দাঁড়িয়ে কথা হয় জেলেপল্লির কয়েক ব্যক্তির সঙ্গে। তাঁরা বলেন, সেতুর বর্ধিত অংশে তাঁদের তিন পরিবারের প্রায় ৩২ শতক জমি চলে গেছে। ওই জায়গায় তাঁদের একটি রান্নাঘর এবং ছয়টি দোকান ছিল। রান্নাঘর ও দোকান ভেঙে সরিয়ে নিতে বলা হয়েছে। এর মধ্যে তিনটি দোকান ভেঙে ফেলা হয়েছে। বাকি তিনটি দোকানও ভেঙে ফেলতে হবে। সেতুর সংযোগ সড়কটিও তাঁদের জায়গার ওপর দিয়ে গেছে। এতে তাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। ক্ষতিপূরণের আশায় তাঁরা এলজিইডি (স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ) কার্যালয়ে বারবার ধরনা দিচ্ছেন। কিন্তু তাঁদের কোনো ক্ষতিপূরণ দেওয়া হচ্ছে না।
সেতুর পাশেই জেলেপল্লির বাসিন্দা মন্টু পদ বিশ্বাস বলেন, ‘আমার মোট ১৩ শতক জমির ওপর ভিটেবাড়ি। এর মধ্যে ৭ দশমিক ১০ শতক জমির ওপর নতুন ব্রিজ চলে এসেছে। আমার জমির ওপর সেতুর কাজ শেষ হয়েছে। এতে আমার খুব ক্ষতি হয়েছে। সংযোগ সড়কের কাজ করতে গেলে বাধা দিয়েছি। ইঞ্জিনিয়ার সাহেব এসে জমি মেপে গেছেন। তিনি বলে গেছেন ক্ষতিপূরণ পাবেন। কিন্তু আদৌ ক্ষতিপূরণ পাব কি না, জানি না।’
বিপ্লব কুমার গাইন বলেন, ‘ব্রিজ করতে আমার ১৪ শতক জমি চলে গেছে। ওই জমিতে আমার ছয়টি দোকান ছিল। ইতিমধ্যে তিনটি দোকান ভেঙে সরিয়ে নিয়েছি। বাকি তিনটি ভেঙে সরিয়ে নিতে বলছে।’
জেলেপল্লির বাসিন্দাদের শঙ্কা নিয়ে গত বছরের ২৮ জুন ‘জেলেদের জমিতে সেতু হচ্ছে ক্ষতিপূরণের উদ্যোগ ছাড়াই’ ও ১১ আগস্ট ‘ক্ষতিপূরণ পাওয়া নিয়ে শঙ্কা’ এবং গত ১১ জুন ‘জমিতে সেতু নির্মাণ, ক্ষতিপূরণের আশায় ঘুরছেন’ শিরোনামে প্রথম আলোতে তিনটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল।
এ বিষয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স আনোয়ারা ট্রেডার্সের প্রকল্প ব্যবস্থাপক মো. শাহিন খান বলেন, সেতুর লে-আউট অনুসারে তাঁরা কাজ করেছেন। মূল সেতুর কাজ শেষ হয়েছে। সেতুর দুই পাশের সংযোগ সড়কের কাজ শুরু করেছিলেন। আপাতত কাজ বন্ধ আছে। যে কাজ বাকি আছে, তা শেষ করতে দুই মাস সময় লাগবে।
অভয়নগর এলজিইডি সূত্র জানায়, উপজেলার ইছামতী খালের ওপর ৩০ মিটার দীর্ঘ একটি সেতু ছিল। এলজিইডির গ্রামীণ সেতু সহায়তা কর্মসূচির আওতায় পুরোনো সেতুটির জায়গায় ৬০ দশমিক শূন্য ৫ মিটার দীর্ঘ এবং ৫ দশমিক ১৮ মিটার প্রস্থ একটি আরসিসি গার্ডার সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে।