গাছ বিক্রির প্রায় ৯ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ, বন কর্মকর্তা বরখাস্ত

বালিজুড়ী রেঞ্জের সাবেক রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. রবিউল ইসলামছবি: সংগৃহীত

দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলায় বন বিভাগের বালিজুড়ী রেঞ্জের সাবেক রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. রবিউল ইসলামকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে বালিজুড়ী রেঞ্জের সরকারি ও বেসরকারি অংশীদারি সামাজিক বনায়ন প্রকল্পের ৯ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে।

শেরপুরের সহকারী বন সংরক্ষক সাদেকুল ইসলাম খান আজ মঙ্গলবার প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। গত ৩০ মে প্রধান বন সংরক্ষক মো. আমির হোসাইন চৌধুরী এক আদেশে রবিউল ইসলামকে বরখাস্ত করেন বলে জানান তিনি।

বন বিভাগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রবিউল ইসলাম ২০১৬ সালে বালিজুড়ী রেঞ্জ কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন। তাঁর বাড়ি জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলায়। একই কর্মস্থলে আট বছর চাকরি করেন তিনি। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে তাঁকে শ্রীবরদী উপজেলা থেকে জামালপুর জেলায় বদলি করা হয়। তিন মাস আগে বালিজুড়ীর নতুন রেঞ্জ কর্মকর্তা হিসেবে সুমন মিয়া যোগ দেন। এরপরই সাবেক রেঞ্জ কর্মকর্তা রবিউল ইসলামের অর্থ আত্মসাতের ঘটনাটি প্রকাশ পায়।

বন বিভাগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২১-২২ ও ২০২২-২৩ অর্থবছরে বালিজুড়ী রেঞ্জের আওতায় সরকারি ও বেসরকারি দুই শতাধিক সামাজিক বনায়নের বাগান দরপত্রের মাধ্যমে ১৬ কোটি টাকায় বিক্রি করা হয়। সরকারি আইন অনুযায়ী এই টাকা ঠিকাদার সরকারি কোষাগারে (রাজস্ব খাতে) জমা দিয়ে অনাপত্তিপত্র নিয়ে গাছ কেটে নেবেন। পরবর্তীকালে বন কর্তৃপক্ষ মূল টাকার ৪০ ভাগ অংশীদারি জনগণকে চেকের মাধ্যমে বুঝিয়ে দেবে। ঠিকাদারেরা রেঞ্জ কর্মকর্তা রবিউলের হাতে নগদ টাকা বুঝিয়ে দিয়ে গাছ কেটে নিয়ে যান। কিন্ত রেঞ্জ কর্মকর্তা রবিউল কিছু টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দেন এবং বাকি টাকা আত্মসাৎ করেন। এভাবে তিনি ৯ কোটি টাকা সরকারি কোষাগারে জমা না দিয়ে আত্মসাৎ করেন বলে তদন্ত কমিটি প্রাথমিকভাবে অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে। এদিকে অংশীদারত্বের টাকা খোয়া যাওয়ার আশঙ্কায় রয়েছেন সামাজিক বনায়নের উপকারভোগী দুই শতাধিক মানুষ।

শেরপুরের সহকারী বন সংরক্ষক সাদেকুল ইসলাম খান আজ দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, রবিউল ইসলামের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ তদন্তের জন্য বন্য প্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের পরিচালক মো. ছানাউল্লাহ পাটওয়ারীকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটি এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছে। তদন্তে প্রাথমিকভাবে রবিউলের ৯ কোটি টাকা আত্মসাতের প্রমাণ পাওয়া গেছে।

অভিযোগের বিষয়ে বন কর্মকর্তা রবিউল ইসলামের মুঠোফোনে আজ একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়।

ময়মনসিংহের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আ ন ম আবদুল ওয়াদুদ প্রথম আলোকে বলেন, রেঞ্জ কর্মকর্তা রবিউল ইসলামের বিরুদ্ধে প্রাথমিকভাবে ৯ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। ইতিমধ্যে তাঁকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার পর তাঁর বিরুদ্ধে ফৌজদারি ও বিভাগীয় আইনে মামলা করা হবে।