রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের কর্মীকে ট্রেন থেকে নামিয়ে মেরে মাথা ফাটিয়ে দেওয়ার অভিযোগ
সদ্য নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার এক কর্মীকে জামায়াত-শিবির পরিচয়ে ট্রেন থেকে নামিয়ে বেধড়ক মারধর করে মাথা ফাটিয়ে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। মারধরের সময় ওই ছাত্রলীগ কর্মীকে উদ্ধার করতে গিয়ে তাঁর ১২ জন সহপাঠী মারধরের শিকার হয়েছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনে এ ঘটনা ঘটে।
হামলার শিকার ওই ছাত্রলীগ কর্মীর নাম আজিজুল হক (আকাশ)। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমানের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। মারধরের পর তাঁকে নগরের বোয়ালিয়া থানায় সোপর্দ করেন হামলাকারীরা। পরে জামায়াতের করা আগের এটিক মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাঁকে আজ দুপুরে আদালতে পাঠানো হয়।
ঘটনার সময় উপস্থিত শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, হামলাকারীরা নিজেদের শিবিরের নেতা-কর্মী হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন। বোয়ালিয়া থানা–পুলিশ বলছে, কয়েকজন লোক জামায়াতের নেতা-কর্মী পরিচয়ে ছাত্রলীগ কর্মীকে থানায় সোপর্দ করেছেন। তবে তাঁদের নাম–পরিচয় জানা যায়নি। যদিও এই ঘটনার সঙ্গে জামায়াত ইসলামী ও ছাত্রশিবিরের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই বলে দাবি করেছেন সংগঠনের শীর্ষ নেতারা।
প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের ২৫ জন শিক্ষার্থী পঞ্চগড় ভ্রমণের উদ্দেশ্যে বৃহস্পতিবার রাতে রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশন যান। সেখানে ‘বাংলাবান্ধা এক্সপ্রেস’ ট্রেনে উঠে বসার পর ৪০-৪৫ জন ব্যক্তি এসে জানালা দিয়ে শিক্ষার্থীদের কাছে বিভাগের নাম জানতে চান। শিক্ষার্থীরা বিভাগের নাম জানালে তাঁরা সানি নামে কোনো শিক্ষার্থী ট্রেনে আছেন কি না, জানতে চান। সানি ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। এই নামের কেউ নেই জানালে তাঁরা আজিজুল হককে দেখে সন্দেহ করেন এবং সানি ভেবে ধাওয়া করেন। এ সময় আজিজুল ট্রেন থেকে নেমে দৌড় দেন। হামলাকারীরা বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে তাঁকে ধাওয়া করেন। এ সময় হকিস্টিক দিয়ে আঘাত করলে তাঁর মাথা ফেটে যায়।
সহপাঠীরা আরও জানান, আজিজুলকে বাঁচাতে সহপাঠীরা পেছন পেছন ছুটে যান। একপর্যায়ে হামলাকারীরা আজিজুলকে ধরে মারধর শুরু করেন। সহপাঠীরা তাঁকে বাঁচানোর চেষ্টা করলে তাঁদেরও মারধর করা হয়। একপর্যায়ে আজিজুলের মুঠোফোন ও মানিব্যাগ কেড়ে নিয়ে তাঁকে অন্য কোথাও নিয়ে যেতে চান। পরে শিক্ষার্থীরা জোরাজুরি করলে তাঁরা আজিজুলকে বোয়ালিয়া থানায় নিয়ে যান।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সভাপতি মোজাম্মেল হোসেন (সাজ্জাদ বকুল) বলেন, রাতে বিষয়টি জানার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও বিভাগের কয়েকজন শিক্ষকসহ তাঁরা থানায় গিয়েছিলেন। প্রথমে আহত আজিজুলের প্রাথমিক চিকিৎসা নিশ্চিত করা হয়েছে। তাঁকে কেন গ্রেপ্তার করা হয়েছে বা তাঁর বিরুদ্ধে কোনো মামলা আছে কি না, তা থানার ওসি তখন জানাতে পারেননি।
অভিযোগের বিষয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবিরের সভাপতি আবদুল মোহাইমেন বলেন, ‘একজন শিক্ষার্থীকে মারধর করা হয়েছে শুনেছি। তবে ওই শিক্ষার্থী কে বা কেন মারধর করা হয়েছে, তা জানি না। ওই ঘটনার সঙ্গে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবির জড়িত নয়।’ একই দাবি করে রাজশাহী মহানগর ছাত্রশিবিরের সভাপতি মো. সিফাত আলম বলেন, ‘একটা পক্ষ শিবিরের নাম ব্যবহার করে বিশৃঙ্খলা চেষ্টা করতে পারে। কারও ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীদের তথ্য দিয়ে সহায়তা করব।’
কিছু লোক জামায়াতের পরিচয় দিয়ে ছাত্রলীগ কর্মী আজিজুল হককে থানায় নিয়ে এসেছিলেন বলে জানিয়েছেন বোয়ালিয়া মডেল থানার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেহেদী মাসুদ। তিনি বলেন, ‘গতকাল রাতে জামায়াতের কিছু লোক এক ছাত্রলীগ কর্মীকে থানায় সোপর্দ করেছেন। পরে জামায়াতের করা আগের এক মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে।’
এ বিষয়ে রাজশাহী মহানগর জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি ইমাজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘কে বা কারা জামায়াতের নাম ব্যবহার করে এটা করেছে, তা জানি না। তবে জামায়াতের কেউ জড়িত থাকলে আমি বিষয়টি জানতাম বা সেখানে উপস্থিত থাকতাম। তবে আওয়ামী লীগ বা ছাত্রলীগের কোনো সক্রিয় সদস্য যারা আন্দোলনে হামলা বা হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিল, তাদের ধরে পুলিশে সোপর্দ করা হবে।’