আদালতে মামলা করলেন ‘গেস্টরুমে’ না যাওয়ায় নির্যাতনের শিকার শিক্ষার্থী

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
ফাইল ছবি

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের কাছে আগ্নেয়াস্ত্র ঠেকিয়ে নির্যাতনের লিখিত অভিযোগ দেওয়া শিক্ষার্থী সায়েম হাসান ওরফে সামি আদালতে মামলা করেছেন। অভিযোগ দেওয়ার ১৩ দিন পেরিয়ে গেলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাঁর সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করা হয়নি বলে দাবি তাঁর। প্রশাসনের প্রতি আস্থা নেই জানিয়ে আদালতে মামলা করার দাবি সায়েমের। তাই আজ রোববার দুপুরে ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (সিজিএম) আদালতে এ মামলা করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

এ বিষয়ে মো. সায়েম হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘১৬ ও ১৭ মে শহীদ সালাম-বরকত হলের একটি কক্ষে ও গেস্টরুমে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের কয়েকজন অস্ত্র ঠেকিয়ে আমাকে মারধর করে। আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর অভিযোগ দেওয়ার প্রায় দুই সপ্তাহ হয়ে গেলেও প্রশাসনের কেউ আমার সঙ্গে কোনো ধরনের যোগাযোগ বা বিচারের আশ্বাস দেননি। প্রশাসন বিষয়টিকে গুরুত্ব দিচ্ছে বলে মনে হয় না। সে কারণে আমি আদালতের আশ্রয় নিয়েছি। যে প্রশাসন এখনো কোনো খোঁজ নেয়নি, সে প্রশাসন কতটা ব্যবস্থা নেবে, আমার তা বুঝতে বাকি নেই।’

আরও পড়ুন

সায়েম হাসান জানান, আজ দুপুরে ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (সিজিএম) আদালতে মামলা করেছেন তিনি। প্রক্টরের কাছে দেওয়া অভিযোগপত্রে উল্লেখিত সবাইকে মামলার আসামি করা হয়েছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসানের দাবি, বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে লিখিত অভিযোগটি ঘটনাসংশ্লিষ্ট শহীদ সালাম-বরকত হলের প্রাধ্যক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে।

অভিযোগপত্র পাওয়ার পরপরই তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন শহীদ সালাম-বরকত হলের ভারপ্রাপ্ত প্রাধ্যক্ষ মাহিবুবুল মোর্শেদ। তবে কমিটি কত দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবে, সে বিষয়ে জানাতে পারেননি তিনি।

আরও পড়ুন

মাহবুবুল মোর্শেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘সামির অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে রেগুলার প্রভোস্ট (প্রাধ্যক্ষ) একটা তিন সদস্যবিশিষ্ট কমিটি করে দিয়েছেন। তদন্ত কমিটি তদন্ত করে প্রতিবেদন দিলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ ওই কমিটি ঘটনাটি কত দিনের মধ্যে তদন্ত করবে এবং কমিটির প্রধানকে জানতে চাওয়া হলে মাহবুবুল বলেন, ‘হলের ওয়ার্ডেন সুব্রত বণিককে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটি করা হয়েছে। কমিটিতে কত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে হবে এমন কোনো কিছু লেখা নেই।’

এদিকে আজ প্রথম আলোতে ‘গেস্টরুমে না যাওয়ায় নির্যাতনের অভিযোগ ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনের পর হলে আগ্নেয়াস্ত্রের বিষয়টি সামনে আসায় বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে হলগুলোকে আগ্নেয়াস্ত্রমুক্ত এবং শিক্ষার্থীদের নিরাপদ আবাসস্থল নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। আবাসিক হলে আগ্নেয়াস্ত্রের বিষয়টি ভয়ংকর বলে উল্লেখ করছেন অনেকেই।

বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের সহকারী সাধারণ সম্পাদক ঋদ্ধ অনিন্দ্য গাঙ্গুলী বলেন, ‘গণরুম-গেস্টরুম প্রথা ক্ষমতাশীনদের রাজনৈতিক হাতিয়ার ব্যতীত আর কিছুই নয়। আবাসিক হলগুলোতে কৃত্রিম আবাসন সংকট তৈরি করা এবং আগ্নেয়াস্ত্রের ঝনঝনানি আমাদের আবারও মনে করিয়ে দেয়, আদর্শের যুদ্ধে পরাজিতদের শেষ হাতিয়ার সন্ত্রাস।’

বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতারাও হলগুলোতে অস্ত্র থাকলে প্রশাসনিকভাবে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।

বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেল প্রথম আলোকে বলেন, আবাসিক হলে আগ্নেয়াস্ত্র আছে, এটা ভয়ংকর তথ্য। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে আবেদন জানাই অতি দ্রুত হলগুলোতে পুলিশ দিয়ে হোক আর যেভাবে হোক অভিযান চালিয়ে বিষয়টি খতিয়ে দেখা। সামনে নির্বাচনকে সামনে রেখে অনেকেই ক্যাম্পাসে ঝামেলা তৈরি করার জন্য অস্ত্র নিয়ে থাকতে পারে। তিনি আরও বলেন, ‘ছাত্রলীগ অস্ত্রের রাজনীতি করে না। ছাত্রলীগের কারও কাছে যদি অস্ত্র থাকে আর সেটা প্রমাণিত হয়, তবে আমরা সাথে সাথে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব। ছাত্রলীগের অস্ত্রধারীদের জায়গা নেই।’

হল প্রাধ্যক্ষ কমিটির সভাপতি অধ্যাপক নাজমুল হাসান তালুকদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আবাসিক হলে আগ্নেয়াস্ত্র আছে, বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে বিষয়টি অত্যন্ত স্পর্শকাতর, আমরা বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখব। প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’