বিশেষ ট্রেন চলবে আরও এক মাস

পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত চালু করা বিশেষ ট্রেনের চলাচল আরও এক মাস বাড়ানো হয়েছেছবি: সংগৃহীত

পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত চালু করা বিশেষ ট্রেনের চলাচল আরও এক মাস বাড়ানো হয়েছে। লাভজনক এবং যাত্রী চাহিদা বেশি থাকায় আগামী ২৪ জুলাই পর্যন্ত ট্রেনটি চালু রাখা হবে। নির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ী আগামীকাল সোমবার ছিল বিশেষ ট্রেন চলাচলের শেষ দিন।

আজ রোববার রেলওয়ে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে এর আগে আজ দুপুরে সচেতন নাগরিক সমাজ, চট্টগ্রাম–কক্সবাজার ব্যানারে একটি সংগঠন চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে ঘোষণা দেয়, চট্টগ্রাম–কক্সবাজার রুটে ট্রেন চলাচল বন্ধ করা হলে কক্সবাজারগামী সব ট্রেন অচল করে দেওয়া হবে।

এবারের ঈদুল আজহায় রেলওয়ের পূর্বাঞ্চল সাত জোড়া বিশেষ ট্রেন পরিচালনা করে। এর মধ্যে এক জোড়া কক্সবাজার ঈদ স্পেশাল। ১২ জুন থেকে এই ট্রেন চলাচল শুরু হয়। ২৪ জুন পর্যন্ত চলার কথা ছিল। নির্ধারিত সময়ের এক দিন আগে সময় বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয় রেলওয়ে।

এর আগে পবিত্র ঈদুল ফিতরের সময় ৮ এপ্রিল চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত কক্সবাজার ঈদ স্পেশাল ট্রেন চালু করা হয়েছিল। অল্প সময়ের মধ্যে ট্রেনটি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। কিন্তু লাভজনক হওয়া সত্ত্বেও ইঞ্জিন ও জনবল–সংকটের কারণ দেখিয়ে গত ৩০ মে ট্রেনটি বন্ধ করে দেয় রেলওয়ে। এ নিয়ে চট্টগ্রাম–কক্সবাজারের মানুষের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। তবে এরপর ঈদুল আজহায় আবার বিশেষ ট্রেন চালু করে। সেটিও নির্ধারিত মেয়াদ শেষে বন্ধ করে দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বন্ধ না করে স্থায়ী ট্রেন চালুর দাবিতে আন্দোলন নামে এই দুই জেলার বাসিন্দারা।

গত বছরের ১১ নভেম্বর চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত নির্মিত নতুন রেললাইনের উদ্বোধন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর গত বছরের ১ ডিসেম্বর থেকে ঢাকা থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ট্রেন চলাচল শুরু হয়। এরপর চলতি বছর ১০ জানুয়ারি পর্যটক এক্সপ্রেস নামের আরেকটি ট্রেন চালু করে রেল। শুধু ঢাকা–কক্সবাজার রুটের দুটি ট্রেনের প্রতিটিতে ১১৫টি করে আসন বরাদ্দ রাখা হয় চট্টগ্রাম স্টেশনের জন্য। ঢাকা থেকে পরপর দুটি ট্রেন চালু করলেও চট্টগ্রাম থেকে কোনো ট্রেন দেওয়া হয়নি। রেলওয়ের এমন সিদ্ধান্তে চট্টগ্রাম অঞ্চলের মানুষ ক্ষুব্ধ ছিলেন।

রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের সহকারী প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা (এসিওপিএস) কামাল আখতার হোসেনের সই করা অফিস আদেশে বলা হয়েছে, যাত্রী চাহিদার কথা বিবেচনা করে চট্টগ্রাম–কক্সবাজার রুটে বিশেষ ট্রেনের চলাচল ২৪ জুলাই পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়েছে। এই ট্রেনে ১৬টি কোচ থাকবে। আসন সংখ্যা ৭৪৩টি।

ট্রেন চালুর রাখার সিদ্ধান্ত নিশ্চিত করে সহকারী প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা (এসিওপিএস) কামাল আখতার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, চট্টগ্রাম–কক্সবাজার রুটে বিশেষ ট্রেনটি লাভজনক। আর যাত্রী চাহিদা অনেক বেশি। এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে জনবল ও ইঞ্জিন–সংকট থাকা সত্ত্বেও চলাচলের সময় বাড়ানো হয়েছে। এতে স্থানীয় বাসিন্দারা উপকৃত হবেন।

রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটের বিশেষ ট্রেনটি চট্টগ্রাম রেলস্টেশন থেকে প্রতিদিন সকাল সাতটায় ছেড়ে যায়। কক্সবাজারে পৌঁছায় সকাল ১০টা ২০ মিনিটে। আবার কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশে ছাড়ে সন্ধ্যা সাতটায়। চট্টগ্রামে পৌঁছায় ১০টায়। যাত্রাপথে ট্রেনটি ষোলশহর, জানালীহাট, পটিয়া, দোহাজারী, সাতকানিয়া, চকরিয়া, ডুলাহাজারা ও রামু স্টেশনে থামে। বিশেষ ট্রেনে শোভন শ্রেণির আসনের জন্য সর্বনিম্ন ভাড়া ৪৫ টাকা, প্রথম শ্রেণি আসনের জন্য ১৮৫ টাকা। তবে কক্সবাজার পর্যন্ত এই ভাড়া যথাক্রমে ১৮৫ ও ৩৪০ টাকা।

‘ট্রেন বন্ধ আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত’

আজ দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে সচেতন নাগরিক সমাজ, চট্টগ্রাম–কক্সবাজারের ব্যানারে একটি সংগঠন। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, পর্যটক এক্সপ্রেস ও কক্সবাজার এক্সপ্রেস নামের দুটি ট্রেন ঢাকা থেকে কক্সবাজার যায়। তবে দুঃখের বিষয়, একটি ট্রেন বহু অনুরোধে বিশেষ ট্রেন হিসেবে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার লাইনে চলাচল করছিল। এখন সেটা বন্ধ করার পাঁয়তারা চলছে। এর আগেও একবার বন্ধ করার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। ২৪ জুন এ ট্রেনটি বন্ধ করে দেওয়ার কথা। এটি হবে আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। যারা দেশের উন্নয়নের বিরুদ্ধে নিজ স্বার্থ হাসিলে কাজ করছে, তারা বিভিন্ন বেসরকারি পরিবহন সংস্থার সঙ্গে আঁতাত করে এডিবির সাড়ে ১৮ হাজার কোটি টাকার প্রকল্পকে অলাভজনক ও অকার্যকর করার কাজে মেতে উঠেছে। চট্টগ্রাম থেকে ট্রেন বন্ধ করা হলে কক্সবাজারগামী কোনো ট্রেন ওখানে যেতে দেওয়া হবে না।

সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন মুক্তিযুদ্ধ গবেষক বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহফুজুর রহমান, চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সভাপতি সালাউদ্দিন মো. রেজা, সহসভাপতি চৌধুরী ফরিদ, সাধারণ সম্পাদক দেব দুলাল ভৌমিক, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডার এ কে এম সারয়ার কামাল, স্থপতি আশিক ইমরান, নাগরিক ফোরামের মহাসচিব মো. ইদ্রিস, কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক নাজনীন সরওয়ার কাবেরী প্রমুখ।