অনুমোদনহীন মেলায় চাঁদাবাজির অভিযোগ 

দোকান বরাদ্দ নিতে ৫ থেকে ১৫ হাজার টাকা দিতে হয়েছে। বৈদ্যুতিক সংযোগের কথা বলেও টাকা আদায়। 

মাদারীপুরের কালকিনিতে ঐতিহ্যবাহী কুণ্ডুবাড়ির মেলায় দোকানে বিভিন্ন পণ্যের সমাহার। গত বুধবার দুপুরে উপজেলার ভুরঘাটা এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

মাদারীপুরের কালকিনিতে জেলা প্রশাসনের অনুমতি ছাড়াই শুরু হয়েছে ‘কুণ্ডুবাড়ির মেলা’। মেলার দোকানিদের অভিযোগ, দোকান বরাদ্দ নিতে আয়তন অনুযায়ী, ৫ থেকে ১৫ হাজার টাকা দিতে হয়েছে। গত কয়েক দিনে স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা দোকান বরাদ্দ বাবদ অর্ধকোটি টাকা চাঁদা তুলেছেন। এ ছাড়া বৈদ্যুতিক সংযোগসহ আনুষঙ্গিক সেবার কথা বলে প্রতিদিন দোকান থেকে ১০০-৫০০ টাকা তোলা হচ্ছে। 

কালকিনি পৌরসভার ভুরঘাটা এলাকায় স্থানীয় কালীমন্দিরে দীপাবলি ও শ্যামাপূজা উপলক্ষে প্রায় দুই শ বছর আগে এই মেলার প্রবর্তন। পূজার প্রথম দিন থেকে মেলা শুরু হওয়ার কথা। তবে এবার ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে মেলা শুরু হয় মঙ্গলবার থেকে। আগামী সোমবার এই মেলা শেষ হওয়ার কথা। কম দামে গৃহস্থালি পণ্য কেনার জন্য এই মেলা এলাকায় সুপরিচিত। তবে দোকানিরা বলছেন, চাঁদাবাজির কারণে পণ্যের দাম আগের তুলনায় বাড়তি। ফলে ক্রেতাদের আগ্রহ কিছুটা কমছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দোকানিদের কাছ থেকে চাঁদা তোলার নেপথ্যে রয়েছেন আকবর সরদার ও তাঁর ভাতিজা কবির হোসেন সরদার। তাঁরা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকলেও দলীয় কোনো পদে নেই। 

অভিযোগের বিষয় আকবর সরদার বলেন, ‘মেলার কোনো অনুমতি হয় নাই। এ ব্যাপারে ডিসি স্যারের কাছে আমি বলছিলাম। কিন্তু তাঁরা অনুমতি দেন নাই। পরে এমপি মহোদয়, উপজেলা চেয়ারম্যান, মেয়র মহোদয়রা ডিসি স্যারকে মেলা চালাতে অনুরোধ জানান।’ চাঁদা তোলার বিষয় প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘এখানে আমি জেনারেটর বাবদ টাকা নিয়েছি। কোন দোকান বা ভিটে বরাদ্দ বাবদ এক পয়সাও নেই নাই। যদি কেউ বলে থাকেন, তাহলে ভুল বলেছেন।’

গত বুধবার দুপুরে গিয়ে দেখা যায়, ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের ভুরঘাটা থেকে গোপালপুর পর্যন্ত যানবাহনের জটলা। ভুরঘাটা বাসস্ট্যান্ড থেকে গোপালপুর পর্যন্ত মহাসড়কের প্রায় ৫০০ মিটার অংশ জুড়ে বসেছে দোকান। মহাসড়ক ছাড়াও খালি জমিতে সারি সারি দোকান বসেছে। বিকেল চারটার পরে মেলায় দর্শনার্থীদের চাপ দেখা যায়। 

বরিশাল থেকে বাসা জাহিদুল ইসলাম নামের এক দোকানি বলেন, ‘ইজারার কথা বলে আমাদের দোকান থেকে পাঁচ হাজার টাকা আগাম নিয়েছে মেলার আয়োজকেরা। তারপর কারেন্ট বিল, ‘পুলিশ খরচসহ এইডা-ওইডা বলে আরও টাকা নিচ্ছে। মেলা যে কদিন চলবে, ওদের টাকা দিতে হবে। মেলায় ব্যবসা করলে ওদের টাকা না দিয়ে তো আর পারা যাবে না।’

বগুড়া থেকে কাঠের আসবাব নিয়ে মেলা এসেছেন আতিকুর রহমান। তিনি বলেন, ‘প্রতিবছরই বগুড়া থেকে আমরা কয়েকজন এই মেলায় আসি। খরচ তো স্থানীয়দের কম-বেশি দিতেই হয়।’ 

মহাসড়কের পাশে ডালা-কুলা নিয়ে বসেছেন আসাদ হোসেন (২০)। সঙ্গে রয়েছেন তাঁর মা। আসাদ বলেন, ‘দূরদূরান্ত থেকে বাঁশের ডালা-কুলা, পানের ডালাসহ বাঁশের অনেক কিছুই কিনে আনছি। মেলায় এগুলো ভালো বিক্রি হচ্ছে। রাস্তার পাশে বাঁশ ও পলিথিন দিয়া ছোট একটা দোকান বসাইছি। এখানেও টাকা চাইয়া গেছে।’

মন্দিরের নাম ভাঙিয়ে চাঁদাবাজি করায় এখানকার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন। এ সম্পর্কে কুণ্ডুবাড়ি পূজা উদ্‌যাপন ও মেলা কমিটির সদস্য স্বপন কুণ্ডু বলেন, ‘এখানে মন্দিরের জমি, সরকারি জমি ও ব্যক্তিগত জমিতে মেলা বসে। কোনো খাজনা বা দোকান থেকে পয়সাকড়ি আমাদের কমিটির কেউ তোলেন না। যাঁরা মেলার দোকান থেকে টাকা তোলেন, তাঁরা মন্দির কমিটির কেউ নন। তাঁদের বিষয়ে আমরা কিছুই জানি না।’

কালকিনির ইউএনও পিংকি সাহা বলেন, ‘ওই মেলার অনুমতি দেওয়া হয়নি। মেলাটি শুরু থেকেই বন্ধ করতে মৌখিক নির্দেশনাও দিয়েছি। কিন্তু মেলা চলছে। সেখানে চাঁদাবাজিও হচ্ছে বলে জেনেছি। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’