আচরণবিধি লঙ্ঘন চলছেই, বন্ধে নেই পদক্ষেপ

রিটার্নিং কর্মকর্তা বলছেন, সত্যতা পাওয়া গেলে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

নির্বাচনী প্রতীক বরাদ্দের আগেই প্রচারপত্র বিতরণ ও গণসংযোগ করছেন সিলেটে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। গতকাল দুপুরে নগরের করেরপাড়ায়
ছবি: আনিস মাহমুদ

সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আচরণবিধি লঙ্ঘন চলছেই। প্রতীক বরাদ্দের আগেই প্রার্থীরা প্রতীক-সংবলিত প্রচারপত্র বিতরণ করছেন দেদার। এমনকি রঙিন পোস্টার-বিলবোর্ডেও ছেয়ে গেছে নগর। প্রার্থীরা ভোটারদের নিয়ে সভা-সমাবেশ থেকে শুরু করে উঠান বৈঠক পর্যন্ত করছেন। এত সব ঘটনা চললেও তা বন্ধে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ের পক্ষ থেকে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে।

সিটি করপোরেশন (নির্বাচন আচরণ) বিধিমালা অনুযায়ী, প্রতীক বরাদ্দের আগে নির্বাচনী প্রচারণা চালানো যাবে না। তফসিল অনুযায়ী, আগামী ২ জুন প্রতীক বরাদ্দ হওয়ার কথা। ২১ জুন এ সিটিতে নির্বাচনে ভোট গ্রহণ হবে।

আরও পড়ুন

জানতে চাইলে রিটার্নিং কর্মকর্তা ফয়সল কাদের প্রথম আলোকে বলেন, ‘এসব অভিযোগ কেউ আমাদের অবহিত করেনি। তবে বিষয়গুলো খোঁজ নিয়ে সত্যতা পাওয়া গেলে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

আমি জানি, আমার জন্য আপনাদের ভালোবাসার কোনো কমতি নেই। তবে আপনাদের নির্বাচনী কর্মতৎপরতা যেন নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের পর্যায়ে না যায়, সেদিকে সবাইকে খেয়াল রেখে কাজ করতে হবে
মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী
প্রতীক বরাদ্দের আগেই সিলেটে মেয়র পদপ্রার্থী জাতীয় পার্টির নজরুল ইসলাম প্রতীক–সংবলিত প্রচারপত্র বিতরণ করছেন। গতকাল নগরের জিন্দাবাজারে
ছবি: প্রথম আলো

গতকাল সোমবার সরেজমিনে দেখা গেছে, নগরের বিভিন্ন এলাকায় মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের সমর্থনে রঙিন ব্যানার ও বিলবোর্ড সাঁটানো হয়েছে। সরকারদলীয় প্রার্থী মো. আনোয়ারুজ্জামানের সমর্থনে নৌকা প্রতীক-সংবলিত বিলবোর্ড, ফেস্টুন ও পোস্টার বেশি চোখে পড়ছে। এরপরই রয়েছে জাতীয় পার্টির প্রার্থী নজরুল ইসলামের সমর্থনে বিলবোর্ড, ফেস্টুন।

গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নগরের করেরপাড়া এলাকায় গণসংযোগ ও প্রচারপত্র বিলি করেন মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। পাশাপাশি তিনি ওই এলাকায় নির্বাচনী পথসভায়ও যোগ দেন। পরে আরও একাধিক মতবিনিময় সভায় যোগ দিয়ে নৌকায় ভোট চান তিনি।

আরও পড়ুন

রাজনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে, আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী ও তাঁর কর্মী-সমর্থকেরা নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করছেন বেশি। ২ মে থেকে গতকাল পর্যন্ত অন্তত ১০ জন সংসদ সদস্য এবং একাধিক সরকারি কর্মকতা-কর্মচারী আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পক্ষে প্রকাশ্যে প্রচারণায় অংশ নিয়েছেন। এর বাইরে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী অঙ্গসংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীরা প্রায় প্রতিদিনই নগরের বিভিন্ন এলাকায় প্রতীক-সংবলিত প্রচারপত্র বিতরণ করছেন।

আমি ভোট চাইনি। সবার সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করে দোয়া চেয়েছি। এ ছাড়া শুভেচ্ছা বিনিময়কালে যেসব প্রচারপত্র আমরা বিতরণ করে থাকি, সেসব মূলত দলীয় প্রচারপত্র।
মাহমুদুল হাসান

অভিযোগের বিষয়ে জানতে মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর মুঠোফোনে গতকাল বিকেলে কল করলেও তিনি সাড়া দেননি। তবে সম্প্রতি তিনি প্রথম আলোর কাছে দাবি করেছেন, নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘিত হয়, এমন কোনো প্রচার তিনি চালাচ্ছেন না। তিনি কেবল দলের বিভিন্ন কর্মসূচি ও সামাজিক অনুষ্ঠানগুলোতে অংশ নিচ্ছেন।

তবে রোববার সন্ধ্যায় আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠানো হয়। ওই বিজ্ঞপ্তিতে তিনি দলীয় কর্মী-সমর্থকদের উদ্দেশে বলেন, ‘আমি জানি, আমার জন্য আপনাদের ভালোবাসার কোনো কমতি নেই। তবে আপনাদের নির্বাচনী কর্মতৎপরতা যেন নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের পর্যায়ে না যায়, সেদিকে সবাইকে খেয়াল রেখে কাজ করতে হবে।’

এদিকে জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মেয়র প্রার্থী মাহমুদুল হাসান এবং তাঁদের কর্মী-সমর্থকেরাও নগরে ভোটারদের কাছে গিয়ে ভোট চাইছেন। তাঁরাও প্রতীক-সংবলিত প্রচারপত্র বিলি করছেন। অপর তিন মেয়র প্রার্থী জাকের পার্টির মনোনীত মো. জহিরুল আলম এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. আবদুল হানিফ ও মো. ছালাহ উদ্দিনের খুব বেশি তৎপরতা দেখা যায়নি। এর বাইরে নগরের ৪২টি ওয়ার্ডেই সাধারণ ও সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর প্রার্থীরা আচরণবিধি ভঙ্গ করে সভা, সমাবেশ ও উঠান বৈঠক করে ভোট চাইছেন।

‘যেভাবে মেয়র প্রার্থীরা প্রতীক বরাদ্দের আগেই প্রতীক-সংবলিত প্রচারপত্র বিলি করে প্রচারণা শুরু করেছেন, তা হতাশাজনক। এর চেয়েও দুঃখজনক হচ্ছে, অভিযুক্ত প্রার্থী ও তাঁদের কর্মী-সমর্থকদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী

জাতীয় পার্টির প্রার্থী নজরুল ইসলাম গতকাল দুপুর ১২টার দিকে নগরের জিন্দাবাজার, চৌহাট্টা এলাকায় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে গণসংযোগ করেন। এ সময় তিনি লাঙ্গল প্রতীক-সংবলিত প্রচারপত্র বিলি করে ভোট চান। এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে তাঁর মুঠোফোনে করলেও তিনি সাড়া দেননি।

মেয়র প্রার্থী মাহমুদুল হাসান গতকাল একাধিক মতবিনিময় সভায় অংশ নেন। এসব কর্মসূচিতে তিনি হাতপাখায় ভোট চান। যোগাযোগ করলে মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘আমি ভোট চাইনি। সবার সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করে দোয়া চেয়েছি। এ ছাড়া শুভেচ্ছা বিনিময়কালে যেসব প্রচারপত্র আমরা বিতরণ করে থাকি, সেসব মূলত দলীয় প্রচারপত্র। সেখানে হাতপাখা প্রতীকের ছবি থাকলেও ভোট চাওয়ার বিষয়টি উল্লেখ নেই। মূলত সরকারদলীয় প্রার্থীই আচরণবিধি লঙ্ঘন করছেন।’

প্রার্থীদের আচরণবিধি ভেঙে নির্বাচনী প্রচারণা চালানোর বিষয়টি দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেছেন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘যেভাবে মেয়র প্রার্থীরা প্রতীক বরাদ্দের আগেই প্রতীক-সংবলিত প্রচারপত্র বিলি করে প্রচারণা শুরু করেছেন, তা হতাশাজনক। এর চেয়েও দুঃখজনক হচ্ছে, অভিযুক্ত প্রার্থী ও তাঁদের কর্মী-সমর্থকদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। দ্রুত আচরণবিধি লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।’