যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্যাতনের শিকার শিক্ষার্থী ইসমাইল হোসেন। যশোর জেনারেল হাসপাতালে
ছবি: প্রথম আলো

যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) পুষ্টি ও খাদ্য প্রযুক্তি (এনএফটি) বিভাগের এক শিক্ষার্থীকে ‘শারীরিকভাবে নির্যাতন ও হলে শৃঙ্খলা ভঙ্গ’-এর দায়ে দুই শিক্ষার্থীকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর নাম ইসমাইল হোসেন। আর সাময়িকভাবে বহিষ্কৃত দুই শিক্ষার্থী হলেন মোহাম্মদ শোয়েব আলী ও সালমান এম রহমান। তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল (সিএসই) বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী। তাঁদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রবেশেও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।

আজ সোমবার বিকেলে যবিপ্রবির রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মো. আহসান হাবীবের স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।

আরও পড়ুন

শিক্ষার্থীকে চার ঘণ্টা হলে আটকে রেখে নির্যাতন, অচেতন অবস্থায় উদ্ধার

এর আগে দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আনোয়ার হোসেনের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন এনএফটি বিভাগের নির্যাতনের শিকার শিক্ষার্থী ইসমাইল হোসেন। ঘটনার ভয়াবহতা বিবেচনায় উপাচার্য ইতিমধ্যে শহীদ মসিয়ূর রহমানের হলের প্রভোস্টকে অভিযুক্ত দুই শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করার এবং ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। শহীদ মসিয়ূর রহমান হল কর্তৃপক্ষ সহকারী প্রভোস্ট তরুণ সেনকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সেই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বডিকে একটি তদন্ত কমিটি করে সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

গতকাল রোববার রাতে ঘটনার শোনার সঙ্গে সঙ্গে হল প্রশাসন আক্রান্ত শিক্ষার্থীকে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সহায়তায় উদ্ধার করে যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে। মধ্যরাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, ডিন ও প্রভোস্ট আক্রান্ত শিক্ষার্থীর শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নেওয়ার জন্য হাসপাতালে ছুটে যান। বর্তমানে ইসমাইল হোসেনের শারীরিক অবস্থা উন্নতির দিকে।

ইসমাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্য প্রযুক্তি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী। তাঁর বাড়ি ময়মনসিংহ সদর উপজেলার বলারামপুর গ্রামে। শহীদ মসিয়ূর রহমান আবাসিক হলের ৫২৮ নম্বর কক্ষে তাঁকে চার ঘণ্টা ধরে নির্যাতন করা হয়। রোববার সন্ধ্যায় ওই কক্ষ থেকে অচেতন অবস্থায় সহপাঠীরা ইসমাইলকে উদ্ধার করে প্রাথমিক চিকিৎসা দেন। পরে রাত সাড়ে ১০টার দিকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাঁকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, ইসমাইল যশোর শহরের পালবাড়ি ভাস্কর্যের মোড়ে একটি ছাত্রাবাসে থাকেন। বিভিন্ন সময়ে ইসমাইলের কাছে চাঁদা দাবি করে আসছিলেন শোয়েব আলী ও সালমান এম রহমান। ইসমাইল দিতে অস্বীকার করলে রোববার দুপুরে বিভাগে পাঠদান চলাকালে শোয়েব ও সালমান তাঁকে ডেকে হলের ভেতরে নিয়ে যান ওই দুজন। এরপর বেলা দুইটা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত ইসমাইলকে বেঁধে রেখে রড, পাইপ আর বেল্ট দিয়ে অমানুষিক নির্যাতন করা হয়। পরে সন্ধ্যায় সহপাঠীরা অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পর রাতে অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের খাদ্য ও পুষ্টি বিভাগের শিক্ষার্থীরা জানান, ইসমাইল কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত নন। রোববার দুপুরের পর থেকে ইসমাইলকে পাওয়া যাচ্ছিল না। এমনকি তাঁর মুঠোফোনও বন্ধ ছিল। তিনি রোজা ছিলেন, ইফতারের সময় ইসমাইলকে না পাওয়ায় অনেক খোঁজাখুঁজি করা হয়। হলের সালমান আর শোয়েব ক্লাস চলার সময়ে ডেকে নিয়ে গেয়েছিলেন। তারপর আর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না ইসমাইলের। একপর্যায়ে সহপাঠীরা শহীদ মসিয়ূর রহমান হলের ৫২৮ নম্বর কক্ষে গিয়ে তাঁকে অচেতন অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন।

চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইসমাইল প্রথম আলোকে মুঠোফোনে বলেন, ‘আমি নাকি সিনিয়রদের সম্মান করি না। তারা আমাকে ধরে নিয়ে টাকা চেয়েছিল। কখনো দুই লাখ, কখনো পাঁচ লাখ টাকা চেয়েছিল। তারা কেন আমাকে এভাবে ধরে নিল, আমি জানি না।’  

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, হলের প্রভোস্ট বডি ঘটনার প্রাথমিক তদন্ত করেছে। বিশ্ববিদ্যালয় ও আবাসিক হল থেকে জড়িত দুই ছাত্রকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। ক্যাম্পাসে প্রবেশেও নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। তাঁদের স্থায়ীভাবে বহিষ্কার ও আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া হিসেবে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে আরও কেউ জড়িত থাকলে তদন্ত কমিটির মাধ্যমে তা উঠে আসবে।