হাতির ভয়ে আধা পাকা ধান নিয়ে বড় বিপদে আছেন নালিতাবাড়ীর কৃষকেরা
‘আত্তি (হাতি) তিন দিন ধইরা জঙ্গলে আছে। দিনের বেলায় এক টিলা থাইকা আরেক টিলায় খাওনের খোঁজে ঘুইরা বেড়ায়। সইন্ধ্যা নামুনের লগে লগে ধান খাইতে খেতে নামবার চেষ্টা করে। ধান পাকতে আরও দুই সপ্তাহ সময় লাগত। কিন্তু অহন আধা পাহা ধান না কাটলে সব তো হাতির পেডে যাইবো।’
গতকাল রোববার বিকেলে বন্য হাতির ভয়ে আধা পাকা ধান কাটার সময় আক্ষেপ নিয়ে কথাগুলো বলছিলেন শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার সীমান্তবর্তী বুরুঙ্গা গ্রামের কৃষক আবদুল কাদির (৬৫)। ৭৫ শতাংশ জমির আধা পাকা ধান ৫-৬ জন শ্রমিক নিয়ে কেটে বাড়ি নিয়ে গেছেন তিনি।
বন্য হাতির ভয়ে ফসল রক্ষায় আবদুল কাদিরের মতো উপজেলার সীমান্তবর্তী বুরুঙ্গা, কালাপানি ও বাতকুচি গ্রামের অর্ধশতাধিক কৃষক গত দুই দিনে খেতের অধিকাংশ আধা পাকা ফসল কেটে বাড়িতে নিয়ে গেছেন। খেতে কাঁচা ধান থাকায় অনেক কৃষক ফসল নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন। তাঁরা ফসল রক্ষায় হাতি পাহারায় নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন।
বন বিভাগ, কৃষক ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলার সীমান্তবর্তী বাতকুচি, বুরুঙ্গা, কালাপানি গ্রামের ভারতীয় সীমান্তঘেঁষা পাহাড়ের ঢালে প্রায় ২০০ একর জমিতে দেড় শতাধিক কৃষক বোরো ধান আবাদ করেছেন। ওই এলাকায় ধান পাকতে আরও এক-দুই সপ্তাহ সময় লাগবে। কিন্তু গ্রামগুলোর সীমান্তবর্তী পাহাড়ি জঙ্গলে গত শুক্রবার থেকে ৩০-৩৫টি বন্য হাতির একটি দল অবস্থান করছে। শনি ও রোববার রাতে জঙ্গল থেকে হাতির দলটি ধান খাওয়ার জন্য সমতলে নেমে আসে। এ সময় এলাকাবাসী মশাল জ্বালিয়ে হইহুল্লোড় করে হাতির দলকে প্রতিরোধ করেন। পরে হাতির পালটি আবার জঙ্গলে চলে যায়।
রোববার বিকেলে সীমান্তবর্তী তিনটি গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, হাতির ভয়ে স্থানীয় কৃষকেরা খেতের আধা পাকা বোরো ধান কেটে নিয়ে যাচ্ছেন। কেউ মাথায় করে সেই ধানখেতের পাশের রাস্তায়, আবার কেউ সীমান্ত সড়কে নিয়ে ফেলছেন। অনেকে ধান না পাকায় কাটতে না পেরে টংয়ের ওপর বসে ফসল পাহারা দিচ্ছিলেন।
বাতকুচি গ্রামের কৃষক শফিকুল ইসলাম (৪৮) প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা মহাবিপদে আছি। অনেকেই আধা পাকা ধান কাটছে। কিন্তু শ্রমিকের অভাবে আমি অহন ধান কাটবার পাইছি না। অহন রাইত জাইগা আত্তি পাহারা দেওয়া লাগে। যদি ফসল ঘরে তোলবার না পাই তাইলে সব শেষ অইয়া যাইবো।’
কালাপানি গ্রামের কৃষক বেলায়েত হোসেন বলেন, ‘ধান ঠিকমতো পাকছে না। তা–ও আত্তির ডরে (ভয়ে) ধান কাইট্টা হারছি। ধানের মৌসুমে আত্তির অত্যাচারে আমরা অতিষ্ঠ। সরকার যদি এর একটা সুরাহা করত তাইলে আমগর ফসল লইয়া এত পেরেশানিত (ঝামেলায়) পরুন লাগত না।’
এ ব্যাপারে বন বিভাগের মধুটিলা ইকোপার্কের রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. দেওয়ান আলী প্রথম আলোকে বলেন, প্রতি রাতে ধান খাওয়ার জন্য হাতির দল লোকালয়ে হানা দিচ্ছে। তাই ফসল রক্ষায় স্থানীয় অনেক কৃষক তাঁদের খেত থেকে আধা পাকা ধান কেটে নিয়ে যাচ্ছেন। হাতি প্রতিরোধে এলিফ্যান্ট রেসপন্স টিমের সদস্য ও বন বিভাগের লোকজন কাজ করছেন। হাতির আক্রমণে যাঁদের ফসল নষ্ট হবে, তাঁদের বন বিভাগের কাছে ক্ষতিপূরণ পেতে আবেদন করতে বলা হয়েছে।