টাকা খরচ করেও দুর্ভোগ কমেনি

পৌরসভার সড়কের কাজে দুই অর্থবছরে আট কোটি টাকা খরচ হয়েছে। কিন্তু অপরিকল্পিতভাবে কাজ করাসহ নানা কারণে পানি জমে।

মাদারীপুর পৌরসভার ভুইয়াবাড়ি মোড় এলাকার সড়কে সৃষ্ট গর্তে বৃষ্টির পানি জমে আছে
ছবি: প্রথম আলো

দুই অর্থবছরে প্রায় আট কোটি টাকা খরচ করে মাদারীপুর পৌরসভায় সড়ক ও নালা নির্মাণ করা হয়। কিন্তু এর মধ্যে শহরের গুরুত্বপূর্ণ প্রায় সব সড়কই বেহাল। বৃষ্টি হলেই সড়কে জমে থাকে পানি। এতে এসব সড়ক দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে প্রতিদিন পৌরসভার লাখো বাসিন্দা দুর্ভোগ পোহান। 

সড়ক উন্নয়নের কাজে যুক্ত প্রকৌশলী ও স্থানীয় বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কয়েকটি কারণে বৃষ্টির পানি জমে সড়কগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে একটি অন্যতম কারণ হচ্ছে শহরের পানিনিষ্কাশনের বড় বড় পুকুর ও খাল ভরাট হয়ে যাওয়া। অপর একটি কারণ, শহরের বিভিন্ন সড়কে ১০ চাকার ট্রাকের চলাচল। আর আরেকটি কারণ হচ্ছে, যথাযথ পরিকল্পনার অভাব। এসব কারণে সড়কগুলো টেকসই হচ্ছে না। এতে সড়কের কোটি কোটি টাকা যেমন গচ্চা যাচ্ছে, তেমনি মানুষের দুর্ভোগও দূর হচ্ছে না।

মাদারীপুর পৌরসভার সূত্র জানায়, ১৮৭৫ সালে প্রতিষ্ঠিত সাড়ে ১৪ বর্গকিলোমিটারের মাদারীপুর পৌরসভা ১৯৯১ সালে প্রথম শ্রেণির পৌরসভার মর্যাদা পায়। পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডের ৩৪টি মৌজায় প্রায় ২ লাখ মানুষ বসবাস করেন। এই পৌরসভায় ৭০ কিলোমিটার পাকা সড়ক রয়েছে। এর মধ্যে ২০ কিলোমিটার ইট বিছানো সড়ক। এ ছাড়া কাঁচা সড়ক রয়েছে ১৬ কিলোমিটার। মোট সড়কের অধিক ঝুঁকিপূর্ণ সড়ক রয়েছে ৫ কিলোমিটার। পৌর সড়কের মাত্র ২৮ কিলোমিটার পয়োনিষ্কাশনের জন্য ড্রেনেজব্যবস্থা রয়েছে।

পৌরসভার হিসাব ও প্রকৌশলী বিভাগের সূত্র জানায়, ২০২১-২২ অর্থবছরে গুরুত্বপূর্ণ নগর অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পসহ পৌরসভার রাজস্ব খাত থেকে সড়ক ও নালা নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৩ কোটি ২৬ লাখ ৯৬ হাজার ৫৮ টাকা এবং ২০২২-২৩ অর্থবছরেও গুরুত্বপূর্ণ নগর অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পসহ পৌরসভার রাজস্ব খাত থেকে সড়ক ও ড্রেন নির্মাণে ব্যয় হয় ৪ কোটি ৭৮ লাখ ৭ হাজার ৭৭৪ টাকা। বর্তমানে চারটি প্রকল্পে পাঁচ কিলোমিটার পাকা সড়ক ও ৭০১ মিটার নালা নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে। চলতি অর্থবছরেও সড়ক ও ড্রেন সংস্কার এবং উন্নয়নকাজের জন্য প্রায় ৫ কোটি টাকার প্রকল্প তৈরি করা হয়েছে, যা আগামী অক্টোবর ও নভেম্বর মাসে কাজ শুরু হবে।

মাদারীপুর পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী মো. জাকির হোসেন হাওলাদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভৌগোলিক কারণে পৌর শহরের কয়েকটি স্থানে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। তবে জলাবদ্ধতা দীর্ঘমেয়াদি থাকে না। জলাবদ্ধতার কারণে নতুন করে সড়ক নির্মাণ করলেও বেশি দিন টেকসই হয় না। মূল শহরের সড়ক ও ড্রেনেজব্যবস্থা উন্নত করতে আমাদের কয়েকটি প্রকল্পে কাজ চলছে। কাজগুলো শেষ হলে এই সমস্যা অনেকটা লাঘব হবে।’

সরেজমিনে দেখা যায়, পৌরসভা শহীদ বাচ্চু সড়ক, ডা. অখিল বন্ধু সড়ক, শহীদ মানিক সড়ক, মন্টু ভুইয়া সড়ক, হামিদ আকন সড়ক, বাদামতলা সড়ক, পুরান বাজার সড়ক, ইউআই স্কুল সড়কসহ গুরুত্বপূর্ণ ১৫টি সড়কের অবস্থা নাজুক। সড়কগুলোয় ছোট-বড় গর্তে ভরা। পরিকল্পিতভাবে নালা নির্মাণ না করায় বৃষ্টির পানি জমে থাকে সড়কের বিভিন্ন স্থানে। ভাঙাচোরা এসব সড়ক দিয়ে হাজারো পথচারী ও যানবাহন চলাচল করছে।

ব্যস্ততম সড়ক চানমারী মসজিদ থেকে কাজীর মোড়। শহীদ বাচ্চু নামের এই সড়কের দৈর্ঘ্য প্রায় দেড় কিলোমিটার। সড়কটি ছয় মাস আগে সংস্কার করা হয়েছিল। কিন্তু এখনই সড়কের অধিকাংশ স্থানে খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টি হলে সড়কের কয়েকটি স্থানে পানি জমে থাকে। প্রতিদিন চার থেকে পাঁচবার এই সড়কে যাতায়াত করেন পুরানবাজার এলাকার ব্যবসায়ী সাইদুর রহমান (৩৬)। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘ব্যবসায়িক কাজে প্রতিদিন তিন থেকে চারবার সড়কটি আমি ব্যবহার করি। সড়কটি ভাঙাচোরা। বৃষ্টির হলে পানি জমে থাকে। সেই পানি সহজে নামে না। প্রতিদিন দুর্ভোগ নিয়া চলতে হয়। কী যে একটা অবস্থা।’

মাদারীপুর সচেতন নাগরিক কমিটির সভাপতি ইয়াকুব খান প্রথম আলোকে বলেন, পৌরবাসী পৌর কর দিলেও সেই হিসেবে নাগরিক সুবিধা পাচ্ছেন না। সামান্য বৃষ্টিতে সড়কে জলাবদ্ধতা দেখা যায়।

এ বিষয়ে মাদারীপুর পৌরসভার মেয়র খালিদ হোসেন বলেন, ‘শহরের রাস্তাঘাট ও ড্রেনেজব্যবস্থা উন্নয়নের জন্য আমরা একটি পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছি। নতুন অর্থবছরে টেকসই সড়ক ও ড্রেন নির্মাণের কাজ করব। আশা করছি এই সমস্যা খুবই শিগগির দূর হয়ে যাবে।’