জ্বালানি নেই, তবু একের পর এক বিদ্যুৎকেন্দ্র

খুলনা ২২৫ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎকেন্দ্রছবি: নর্থ-ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি লিমিটেডের ওয়েবসাইট থেকে নেওয়া

জ্বালানি নিশ্চিত না করেই খুলনায় একের পর এক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করেছে বিগত আওয়ামী লীগ সরকার। এসব বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রাথমিক জ্বালানি গ্যাসের সরবরাহ না থাকায় বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে হাইস্পিড ডিজেল। এতে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় বেশির ভাগ সময় অলস বসিয়ে রাখতে হয়েছে বিদ্যুৎকেন্দ্র। জনগণের তেমন উপকারে না এলেও এসব বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য বড় অঙ্কের বিদেশি ঋণের বোঝা টানতে হচ্ছে সরকারকে।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, খুলনায় গ্যাসের সরবরাহ করা কঠিন হবে, অনেক আগে থেকেই জানা। অনিশ্চিত উৎসের ওপর ভর করে একের পর এক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ সরকারের দেনা বাড়িয়েছে। তরল জ্বালানি ব্যবহারে উৎপাদনের বাড়তি খরচ শেষ পর্যন্ত গ্রাহকের ওপরে পড়েছে। কমিশন বাণিজ্যের জন্য রাজনীতিবিদ ও আমলারা এসব অপরিকল্পিত ও অপ্রয়োজনীয় বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে অনুমোদন দিয়েছেন।

সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড পার্টিসিপেটরি রিসার্চের (সিইপিআর) চেয়ারপারসন গৌরাঙ্গ নন্দী প্রথম আলোকে বলেন, জনতুষ্টির জন্য আগের সরকার এসব উদ্যোগ নিয়েছিল। খুলনাবাসীকে বোকা বানানো হয়েছে। জ্বালানি নিশ্চিত না করেই মানুষকে দেখানোর চেষ্টা করা হয়েছে, খুলনায় অনেক বিদ্যুৎকেন্দ্র করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের আস্থাভাজন উদ্যোক্তা গোষ্ঠীকে সুবিধা পাইয়ে দিতে এগুলো করা হয়।

বিদ্যুৎ বিভাগের হিসাবে, দেশের সবচেয়ে বেশি ৪৩ শতাংশ বিদ্যুৎকেন্দ্র গ্যাসভিত্তিক। এসব বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রায় ৭৭ শতাংশ জ্বালানির উৎস দেশজ প্রাকৃতিক গ্যাস। এখান থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রতি ইউনিটের উৎপাদন ব্যয় হয় ৫ টাকার মতো। অন্যদিকে জ্বালানি তেল দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনে সবচেয়ে বেশি ব্যয় হয়। প্রতি ইউনিটে খরচ দাঁড়ায় প্রায় ২০ টাকা।

বিদ্যুৎ বিভাগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, খুলনা অঞ্চলে গ্যাসের কোনো উৎস নেই। খুলনায় গ্যাস নিতে ২০০৬ সালে টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা থেকে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা হয়ে গ্যাস সঞ্চালন প্রকল্প অনুমোদন করে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। ২০০৭ সালের তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার উৎসে কত গ্যাস মজুত আছে সেটি নিরূপণ করে। তখন দেখা যায়, সরবরাহের মতো পর্যাপ্ত গ্যাস মজুত নেই। এরপরও ২০০৮ সালে নির্বাচনী ইশতেহারে দক্ষিণাঞ্চলে পাইপলাইনের মাধ্যমে গ্যাস সরবরাহের প্রতিশ্রুতি দেয় আওয়ামী লীগ। ক্ষমতায় এসে ২০১২ সালের মধ্যে খুলনায় গ্যাস সরবরাহের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। তখন উৎসে যতটুকু আছে, সেখান থেকে ভাগ করে দেওয়ার কথা বলা হয়। আওয়ামী লীগ সরকারের সময় খুলনায় সব মিলিয়ে পাঁচটি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে। এর মধ্যে একটি এখনো নির্মাণাধীন। পাঁচটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের মধ্যে সরকারি তিনটির সক্ষমতা ১ হাজার ৪৪৫ মেগাওয়াট। এ ছাড়া বেসরকারি দুটি বিদ্যুৎকেন্দ্র ২২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষম। তবে শুরু থেকেই এসব বিদ্যুৎকেন্দ্র বছরের বেশির ভাগ সময় অলস পড়ে আছে।

সূত্র জানায়, দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলে পিক আওয়ারে বিদ্যুতের চাহিদা পূরণে ২০১২ সালে প্রথম খালিশপুরের গোয়ালপাড়ায় ১৫০ মেগাওয়াট সক্ষমতার গ্যাসভিত্তিক একটি ‘সিম্পল সাইকেল’ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। তখন ঈশ্বরদী থেকে খুলনার আড়ংঘাটা পর্যন্ত গ্যাস সঞ্চালন লাইন নির্মাণাধীন ছিল। সেই গ্যাস বিদ্যুৎকেন্দ্রে সরবরাহ করা হবে—এমন পরিকল্পনা থেকে এডিবি থেকে ১৮৫ মিলিয়ন ডলার ঋণ নিয়ে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণ করে সরকার। ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি উৎপাদনে যায়। পরে সরকার ও এডিবির যৌথ অর্থায়নে আরও ৭৫ মেগাওয়াট বাড়িয়ে কেন্দ্রটিকে ‘কম্বাইন্ড সাইকেল’ বিদ্যুৎকেন্দ্রে রূপান্তরিত করা হয়। ২০১৬ সালে বাণিজ্যিক উৎপাদনে যাওয়া বিদ্যুৎকেন্দ্রটির মালিক নর্থ-ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি লিমিটেড (এনডব্লিউপিজিসিএল)।

বিদ্যুৎকেন্দ্রটির প্রধান প্রকৌশলী কে এম এম রেসালাত রাজীব প্রথম আলোকে বলেন, কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা থেকে এখানে গ্যাস সরবরাহ করা হলেও প্রয়োজন অনুযায়ী চাপ পাওয়া যায় না। এ জন্য হাইস্পিড ডিজেল দিয়েই কেন্দ্রটিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হতো। তিনি জানান, গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন বন্ধ আছে। এনএলডিসি (ন্যাশনাল লোড ডেসপ্যাচ সেন্টার) থেকে আর চাহিদা দেওয়া হচ্ছে না।

অনুসন্ধানে জানা যায়, আগের বিদ্যুৎকেন্দ্রেই যেখানে গ্যাস সরবরাহ করা যায়নি, সেখানে খুলনায় আবার আরেকটি বড় গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরির সিদ্ধান্ত নেয় আওয়ামী লীগ সরকার। ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে ‘খুলনা ৩৩০ মেগাওয়াট ডুয়েল ফুয়েল কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্ল্যান্ট’ তৈরির ক্রয়প্রস্তাব অনুমোদন করে সরকার। বাস্তবায়নকাল ধরা হয় ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৯ সালের জুনের মধ্যে। প্রাথমিক জ্বালানি হিসেবে প্রাকৃতিক গ্যাসের কথা বলা হয়। খালিশপুরে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) ৬০ ও ১১০ মেগাওয়াটের ইউনিট দুটি ২০১২ ও ২০১৫ সালে স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সেখানেই নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের সিদ্ধান্ত হয়। ২০১৬ সালের নভেম্বরে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি সম্পাদিত হয়। ২০১৮ সালের ১০ ডিসেম্বর চায়না এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে বিপিডিবির ঋণচুক্তি হয়। মোট ব্যয়ের মধ্যে বৈদেশিক সহায়তা ছিল ৩০৪ মিলিয়ন ডলার, সরকারের ৯৬ মিলিয়ন ডলার। ঋণ পেতে দেরিসহ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণকাজে নানা কারণে ধীর গতি তৈরি হয়। এতে প্রকল্পের মেয়াদ ও ব্যয় বাড়ে। ২০২২ সালে এই কেন্দ্রের বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ শুরু হয়। গ্যাস সরবরাহ হলেও চাপ না থাকায় ডিজেল দিয়েই চলত কেন্দ্রটি। গত বছরের আগস্ট থেকেই কেন্দ্রটির উৎপাদন বন্ধ আছে।

খুলনায় গ্যাসভিত্তিক তৃতীয় ও সবচেয়ে বড় বিদ্যুৎকেন্দ্রটির নির্মাণকাজ এখনো চলমান। ২০১৮ সালে পাইপলাইনের মাধ্যমে ভারত থেকে গ্যাস আমদানির বিষয়ে ভারতের এইচ এনার্জির সঙ্গে পেট্রোবাংলার সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। ওই সমঝোতার ওপর ভিত্তি করে ২০১৮ সালে খালিশপুরে ‘রূপসা ৮০০ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎকেন্দ্র’ নির্মাণের জন্য এডিবির সঙ্গে ঋণচুক্তি হয়। ১ হাজার ১৪০ মিলিয়ন ডলারের প্রকল্পে এডিবি ঋণ দেয় ৫০০ মিলিয়ন, ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (আইএসডিবি) ৩০০ মিলিয়ন, বাকি টাকা সরকারের। এনডব্লিউপিজিসিএলের অধীনে প্রকল্পটি ২০২২ সালের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা। পরে গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বাড়ে। এখন পর্যন্ত ভৌত কাজ শেষ হয়েছে ৮২ ভাগ। চলতি বছর বাকি কাজ শেষ হবে। কিন্তু গ্যাসের অভাবে বাণিজ্যিক উৎপাদন পিছিয়েছে ২০২৭ সাল পর্যন্ত।

প্রকল্পে পাইপলাইনে ভারত থেকে গ্যাস এনে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি পরিচালনার কথা বলা হলেও বাস্তবায়নে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। ফলে এ প্রকল্পের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। খোদ বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান এ প্রশ্ন তুলেছেন। প্রায় সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকার এ বিদ্যুৎকেন্দ্রটি কোন ধরনের জ্বালানি দিয়ে চালানো হবে তা নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় সরকার।

গত বছরের ৩১ আগস্ট খালিশপুরে নির্মাণাধীন ওই বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিদর্শনে এসে কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘এই পাওয়ার প্ল্যান্ট সহসা উৎপাদন করতে পারবে বলে মনে হচ্ছে না। এটি কি এখানে হওয়া উচিত ছিল? আমরা তো অনেক আগে থেকেই জানতাম, দেশে গ্যাসের রিজার্ভ কম। আস্তে আস্তে এটা কমে যাবে। ৮-৯ হাজার কোটি টাকা খরচ হলো। অথচ কোনো বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে না। এটা খুবই দুরূহ সমস্যা। এর কোনো সহজ সমাধান নেই। কারণ গ্যাস আছে সিলেটে, আর কিছু গ্যাস মহেশখালী দিয়ে আমদানি করা হয়। এদিকে তো গ্যাস নেই।...যদি পাইপলাইন স্থাপন করে গ্যাস আনাও যায়, তাহলেও তা পর্যাপ্ত নয়। তবুও আমরা চেষ্টা করছি এটাকে আংশিক চালু করা যায় কি না, পরীক্ষা করব।’

রূপসা ৮০০ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎকেন্দ্র
ছবি: প্রথম আলো

উৎপাদন কেমন, খরচ কত

বিপিডিবির বার্ষিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, খুলনা ২২৫ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎকেন্দ্রটি উৎপাদনে গেছে ২০১৩ সালে। এরপর গত ১১ অর্থবছরে গড়ে ২৫ দশমিক ৮২ শতাংশ চলেছে। কেন্দ্রটি চালুর পর থেকে সক্ষমতার চার ভাগের এক ভাগ বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পেরেছে। কোনো বছর ইউনিটপ্রতি খরচ পড়েছে ১৮ টাকা, আবার কখনো খরচ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৩৩ টাকা। অন্যদিকে বিপিডিবির খুলনা ৩৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রটি উৎপাদনে গেছে ২০২২ সালে। এরপর দুই অর্থবছরে গড়ে সাড়ে ১৭ শতাংশ সময় চলেছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ইউনিটপ্রতি খরচ পড়েছে প্রায় ৩৮ টাকা। আর ২০২৩-২৪ অর্থবছরে খরচ হয়েছে ২০ টাকার বেশি।

প্রয়োজনের অতিরিক্ত বিদ্যুৎকেন্দ্র

ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ওজোপাডিকো) ও পল্লিবিদ্যুৎ সমিতি সূত্রে জানা গেছে, খুলনা শহর ও জেলায় সব মিলিয়ে বিদ্যুতের চাহিদা সর্বনিম্ন ১৫৫ থেকে সর্বোচ্চ ২৮০ মেগাওয়াটের মতো। খুলনায় বর্তমানে চারটি বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনক্ষম অবস্থায় আছে। এর মধ্যে এনডব্লিউপিজিসিএলের একটি ২২৫ মেগাওয়াট, বিপিডিবির একটি ৩৩০ মেগাওয়াট, বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র কেপিসিএল-২-এর একটি ১১৫ মেগাওয়াট এবং ওরিয়নের রূপসা বিদ্যুৎকেন্দ্রের সক্ষমতা ১০৫ মেগাওয়াট। এর বাইরে এনডব্লিউপিজিসিএলের ৮০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণকাজ চলমান। সব মিলিয়ে খুলনায় বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন ক্ষমতা ১ হাজার ৫৭৫ মেগাওয়াট। এর বাইরে খুলনার পাশেই বাগেরহাটের রামপালে ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াটের আরেকটি বিদ্যুৎকেন্দ্র আছে।

জ্বালানি ও পরিবেশ নিয়ে কাজ করে খুলনার বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ‘ধ্রুব’। সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক রেখা মারিয়া প্রথম আলোকে বলেন, জাতীয় গ্রিডে যোগ হওয়ার পাশাপাশি খুলনা অঞ্চলের চাহিদা পূরণের কথা বলে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো তৈরি হয়েছে। শিল্পহীন খুলনায় বিদ্যুতের বড় চাহিদা তৈরি হবে তেমন পরিস্থিতিও নেই। আবার গ্যাস বা কয়লার কোনোটির উৎস এখানকার কাছাকাছি নয়। তাই এ অঞ্চলে এত বেশি জীবাশ্ম জ্বালানিনির্ভর বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরির কোনো দরকারই ছিল না।

বিকল্প হতে পারত সৌরবিদ্যুৎ

ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেডের (ইডকল) হিসাব অনুযায়ী, সৌরবিদ্যুতের মাধ্যমে এক মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে ২ দশমিক ২৫ একর জায়গা দরকার। এক মেগাওয়াটের সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরিতে খরচ পড়ে আট কোটি টাকার মতো।

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) ও উপকূলীয় জীবনযাত্রা ও পরিবেশ কর্মজোটের (ক্লিন) ‘বাংলাদেশের সৌরবিদ্যুতের সম্ভাবনা: ভূমিস্বল্পতার অজুহাত ও বাস্তবতা’ শীর্ষক এক গবেষণার ফলাফলে দেখা যায়, সরকারি হিসাবে খুলনা বিভাগে পতিত খাসজমি আছে ১ লাখ ৩৩ হাজার একর। ভবনের ছাদ ৮ হাজার ৫৯০ লাখ বর্গমিটার। এ ছাড়া সার্বক্ষণিক জলাভূমি আছে ৫৪ হাজার ৭৪১ একর। এসব খাসজমির মাত্র ৩৯ শতাংশ এবং ছাদ ও জলাভূমির মাত্র ১৫ শতাংশ ব্যবহার করে ২০৫০ সালের মধ্যে শুধু খুলনা বিভাগেই ১৯ হাজার ৭৭০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব।

২০২৩ সালে প্রকাশিত ওই গবেষণায় বলা হয়, বিদ্যুৎ বিভাগের হিসাবে ২০৫০ সালে খুলনায় চাহিদা থাকবে ৯ হাজার ২২৫ মেগাওয়াট। সঠিকভাবে সৌরবিদ্যুৎ স্থাপন করা গেলে চাহিদার তুলনায় সাড়ে ১০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উদ্বৃত্ত করা সম্ভব।

বেসরকারি সংস্থা ‘ক্লিন’–এর প্রধান নির্বাহী জ্বালানি বিশেষজ্ঞ হাসান মেহেদী প্রথম আলোকে বলেন, কমিশন বাণিজ্যের জন্য রাজনীতিবিদ ও আমলারা অপরিকল্পিত ও অপ্রয়োজনীয় বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে অনুমোদন দিয়েছেন। রাষ্ট্রের ক্ষতি করার জন্য তাঁদের বিচারের আওতায় আনা উচিত।