ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে দুই ভোটারকে পেটালেন সংসদ সদস্যের অনুসারীরা

ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি নির্বাচনে এক অভিভাবক সদস্যকে মারধর করছেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। রোববার মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলায় ঝিটকা আনন্দমোহন উচ্চবিদ্যালয়ে
ছবি: আব্দুল মোমিন

মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার ঝিটকা আনন্দমোহন উচ্চবিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি পদের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দুই অভিভাবক সদস্যকে মারধর করা হয়েছে।

স্থানীয় সংসদ সদস্য মমতাজ বেগমের অনুসারী ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে তাঁদের মারধর করেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

আজ রোববার বেলা সাড়ে তিনটার দিকে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে এ ঘটনা ঘটে। এতে বিদ্যালয়ের আশপাশের এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির কারণে নির্বাচন স্থগিত করেন প্রিসাইডিং কর্মকর্তা।

স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছিলেন মানিকগঞ্জ-২ আসনের (হরিরামপুর ও সিঙ্গাইর) সংসদ সদস্য ও সিঙ্গাইর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মমতাজ বেগম এবং হরিরামপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও দুর্যোগবিষয়ক সম্পাদক দেওয়ান সাইদুর রহমান। বিদ্যালয়ের বর্তমান অ্যাডহক কমিটির সভাপতির দায়িত্বে আছেন সাইদুর রহমান।

প্রিসাইডিং কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নির্বাচনের জন্য গত সোমবার চারজন অভিভাবক সদস্য নির্বাচন করা হয়। এ ছাড়া বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সদস্যসচিব, একজন দাতা সদস্য ও তিনজন শিক্ষক প্রতিনিধি মনোনীত হন। সব মিলিয়ে নয়জন ভোটারের প্রত্যক্ষ ভোটে আজ সভাপতি নির্বাচনের কথা ছিল। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কয়েক দিন ধরে সংসদ সদস্য মমতাজ বেগমের সমর্থক ও উপজেলা চেয়ারম্যান দেওয়ান সাইদুর রহমানের সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা চলছিল।

সরেজমিনে দেখা গেছে, বেলা একটার দিকে দুই পক্ষের নেতা-কর্মীরা বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে জড়ো হতে থাকেন। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে বেলা দুইটার দিকে দুই পক্ষের নেতা-কর্মীদের বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ থেকে বের করে দিতে গেলে পুলিশের সঙ্গে সংসদ সদস্য মমতাজ বেগমের সমর্থকদের বাগ্‌বিতণ্ডা হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বেলা তিনটার দিকে সাতজন ভোটারের উপস্থিতিতে বিদ্যালয়ের নিচতলায় সভা শুরু করেন প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মুহাম্মদ কামরুল ইসলাম। এ সময় মহিউদ্দিন মঞ্জু ও মিজানুর রহমান নামের দুজন অভিভাবক সদস্য বিদ্যালয়ের তৃতীয় তলায় ছিলেন। জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইশতিয়াক আহমেদ তাঁদের তৃতীয় তলা থেকে নিচতলার সভাকক্ষে নিয়ে আসছিলেন। তখন জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাজেদুল ইসলামের নেতৃত্বে সংসদ সদস্যের অনুসারীরা দুই অভিভাবক সদস্যকে ছিনিয়ে নিয়ে ব্যাপক মারধর করেন। পরে পুলিশ তাঁদের উদ্ধার করে বিদ্যালয়ের একটি কক্ষে নিয়ে যান।

বেলা সাড়ে তিনটার দিকে হরিরামপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) তাপসী রাবেয়া বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ থেকে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীসহ বহিরাগতদের বের করে দেন। এরপর প্রিসাইডিং কর্মকর্তা পুনরায় সভা শুরু করলেও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির কারণ দেখিয়ে নির্বাচন স্থগিত ঘোষণা করেন। পরে আবারও দুই পক্ষের নেতা-কর্মীরা বিদ্যালয়ে ঢুকে পড়েন। উত্তেজনা এড়াতে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন সিঙ্গাইর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রিয়াজুল হক ও র‍্যাব-৪-এর মানিকগঞ্জ ক্যাম্পের কয়েকজন সদস্য। তাঁরা দুই পক্ষের সমর্থকদের বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ থেকে বের করে দেন।

এ বিষয়ে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাজেদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ওই দুই অভিভাবক সদস্য বিএনপি-জামায়াত করেন। তাঁদের দেখে নেতা-কর্মীরা উত্তেজিত হয়ে পড়েন। তাঁদের মারধর করা ঠিক হয়নি বলে তিনি মন্তব্য করেন।

তবে সংসদ সদস্য মমতাজ বেগম বলেন, স্থানীয় নেতা-কর্মী ও নির্বাচিত সদস্যরা তাঁকে প্রার্থী হওয়ার প্রস্তাব দেন। তিনি নিজে সভাপতি পদে নির্বাচনের জন্য প্রার্থিতা ঘোষণা করেননি। বিদ্যালয়ের অ্যাডহক কমিটির দুর্নীতি ঠেকাতে তাঁরা হয়তো তাঁর নাম প্রস্তাব করতে পারেন। মারধরের বিষয়টি তাঁর জানা নেই।

উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান দেওয়ান সাইদুর রহমান অভিযোগ করে বলেন, কয়েক দিন ধরেই সংসদ সদস্য মমতাজ বেগমের পক্ষের লোকজন ও পুলিশ বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির ভোটারদের বাড়িতে গিয়ে হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন। নির্বাচনের দিন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশের উপস্থিতিতে সংসদ সদস্যের লোকজন দুজন অভিভাবক সদস্যকে মারধর করেন। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে তিনি বিজয়ী হবেন বলে দাবি তাঁর।