রক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্কারের অভাবে বরগুনায় ১৪৭টি সেতু বেহাল, দুর্ভোগ
রক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্কারের অভাবে বরগুনার জেলার বিভিন্ন এলাকায় নির্মিত ১৪৭টি লোহার সেতু ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে গেছে। এর মধ্যে কয়েকটি সেতু ভেঙে নদী ও খালে পড়ে আছে। ফলে এসব এলাকা দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন কয়েক লাখ মানুষ।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) বরগুনা জেলা কার্যালয়ের সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৭-৯৮ অর্থবছরে এলজিইডির আওতায় ‘হালকা যান চলাচল প্রকল্প’–এর অধীন কয়েক শ লোহার সেতু নির্মাণ করা হয়। এর মধ্যে বরগুনা সদরে ২৮টি, বেতাগীতে ১৮টি, বামনায় ৪২টি, তালতলীতে ৭টি, আমতলীতে ২২টি ও পাথরঘাটায় ৩০টি লোহার সেতু ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড় সিডর, আইলা, মহাসেন, বুলবুল, জাওয়াদ, ইয়াসসহ বিভিন্ন সময় প্রাকৃতিক দুর্যোগে সেতুগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অনেকগুলো সেতুর হাতল, অ্যাঙ্গেলসহ অন্য মালামাল চুরি হয়ে গেছে। এর মধ্যে ধসে পড়া কিছু সেতুর স্থানে স্থানীয় লোকজন বাঁশ, সুপারিগাছ দিয়ে সাঁকো নির্মাণ করে যাতায়াত করেছেন। এতে যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন স্থানীয় ব্যক্তিরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আমতলী সদর ও চাওড়া ইউনিয়নের মধ্য দিয়ে প্রবহমান চাওড়া খালে নির্মিত সেতুটি ২০২১ সালের জুন মাসে ভেঙে পড়ে। লোচা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সংলগ্ন সুবন্ধী খালের ওপর নির্মিত সেতুর মাঝবরাবর স্ল্যাব ভেঙে গেছে। বরগুনা সদর উপজেলা গৌরিচন্না ইউনিয়নের বিবেকচত্বর এলাকার লোহার সেতুটি দেবে ভারি যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে।
বরগুনা সদর উপজেলার বিবেকচত্বর বাসিন্দা নজরুল বলেন, এই ব্রিজ দিয়ে প্রতিদিন শতাধিক অটোরিকশা ও মোটরসাইকেল চলাচল করে। এ ছাড়া এই সেতুর মাঝবরাবার দেবে ভারী যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। এই সেতু পুনর্নির্মাণ করা দরকার।
সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা গেছে, আমতলীর হলদিয়া বাজারের কাছে সুবন্ধী খালের ওপর নির্মিত লোহার সেতুর হাতল ও অ্যাঙ্গেলে মরিচা ধরেছে। ওপরের স্ল্যাবে ফাটল ধরেছে। হলদিয়া বাজারের ব্যবসায়ী সাইদুল প্যাদা বলেন, এই ব্রিজ দিয়ে প্রতিদিন হাজারো মানুষ পারাপার হন। বর্তমানে ব্রিজটি পারাপারের অনুপযোগী। যেকোনো সময় এটি ধসে পড়তে পারে।
লোচা সরকরি প্রাথমিক বিদ্যালয়সংলগ্ন সুবন্ধী খালের ওপর নির্মিত সেতুর পাশের চাওড়া লোচা গ্রামের বাসিন্দা দুলাল মিয়া বলেন, ‘এই সেতুটি কয়েক বছর ধরে ভাঙা অবস্থায় পড়ে আছে, মেরামতের কোনো উদ্যোগ নেই। এই সেতু দিয়ে শিক্ষার্থী ও পথচারীরা ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হন। ফলে ওই এলাকার হাজারো মানুষ যাতায়াতে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। ভাঙা সেতু এলাকা দিয়ে মোটরসাইকেল, টেম্পো, রিকশা, ভ্যান, পিকআপ ভ্যানের যাতায়াত বন্ধ রয়েছে।
আমতলীর মহিষডাঙ্গা এলাকার সেতু দিয়ে সদর ও চাওড়া ইউনিয়নের বাসিন্দারা যাতায়াত করেন। কিন্তু দুই বছর ধরে সেতুটি ভেঙে খালে পড়ে আছে। স্থানীয় লোকজন ড্রামের ওপর কাঠ দিয়ে সাঁকো বানিয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছেন। এই বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা আসা-যাওয়া করছেন।
মহিষডাঙ্গা গ্রামের রুহুল আমিন ও সুমন মল্লিক বলেন, সেতু ভেঙে ৮টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীসহ ১০ গ্রামের অন্তত ২০ হাজার মানুষ ভোগান্তি পোহাচ্ছেন। স্থানীয় ব্যক্তিরা ওই স্থানে সাঁকো বানিয়ে খাল পারাপার হচ্ছেন। সেই সেতু দিয়ে চলাচল এখন খুব ঝুঁকিপূর্ণ।
এ বিষয়ে হলদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আসাদুজ্জামান মল্লিক বলেন, ‘আমার এলাকায় পাঁচটি সেতু ভেঙে নদীতে পড়ে আছে। এসব সেতু দিয়ে মানুষ চলাচল করতে পারছেন না। এ ছাড়া দক্ষিণ তক্তাবুনিয়া এলাকাসহ আমার ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় বেশ কিছু সেতু চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে আছে।’
এলজিইডি বরগুনা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী সুপ্রিয় মুখার্জি প্রথম আলোকে বলেন, এসব সেতু পুনর্নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সেতুগুলো উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবভুক্ত করা হয়েছে।