কক্সবাজারে বৈশাখীর ‘রসগোল্লার’ কদর ঘরে ঘরে

কক্সবাজার শহরের বৈশাখী মিষ্টান্ন ভান্ডারের রসগোল্লা
ছবি: প্রথম আলো

কক্সবাজারে গরুর দুধের সঙ্গে নানা উপকরণ মিশিয়ে তৈরি বৈশাখীর ‘রসগোল্লার’ কদর বেশ। উৎসব কিংবা আয়োজনে এই রসগোল্লার বিক্রি বেড়ে যায়। কক্সবাজার শহরে মিষ্টি তৈরি ও বিক্রির অর্ধশতাধিক দোকান আছে। তবে চাহিদার শীর্ষে থাকে এই রসগোল্লা।

কক্সবাজার শহরের প্রধান সড়কের দক্ষিণ পাশে পৌরসভা ভবন। উত্তর পাশে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের শতবর্ষী কালীবাড়ি মন্দির। ১৯৭৫ সালের জানুয়ারিতে মন্দিরের জমিতে নির্মিত হয় রসগোল্লা বিক্রির দোকান ‘বৈশাখী মিষ্টান্ন ভান্ডার’। এর প্রতিষ্ঠাতা বীরন্দ্র রায় চৌধুরী।

পাকিস্তান আমলে এই শহরে তিন-চারটি চায়ের দোকান ছিল। এর মধ্যে একটি সাধন চন্দ্র দের চায়ের দোকানে খাবারের পাশাপাশি রসগোল্লাও বিক্রি হতো। আর এই রসগোল্লা তৈরির কারিগর ছিলেন বীরন্দ্র রায় চৌধুরী। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে দোকানটি বন্ধ হয়ে যায়। পরে লোকজনের পরামর্শে বীরেন্দ্র মিষ্টির দোকান খোলার উদ্যোগ নেন। মন্দির কর্তৃপক্ষের দেওয়া একখণ্ড জমিতে তিনি দোকানটি দেন। সেই থেকে টানা ৪৭ বছর ধরে দোকানটি চলছে।

আরও পড়ুন

বীরেন্দ্র রায় চৌধুরীর বাড়ি ছিল চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার পরইকোরা গ্রামে। ব্রিটিশ আমলে তিনি কুমিল্লায় গিয়ে তাঁর মামা জগৎ দত্তের কাছ থেকে রসগোল্লা তৈরির কৌশল রপ্ত করেন। পাকিস্তান আমলে তিনি কুমিল্লা থেকে কক্সবাজার শহরে এসে রসগোল্লা তৈরির কাজ শুরু করেন।

সম্প্রতি বৈশাখী মিষ্টান্ন ভান্ডারে গিয়ে দেখা গেছে, কয়েক তরুণ-তরুণী দোকানে বসে রসগোল্লা খাচ্ছেন। কয়েকজন বাড়িতে নেওয়ার জন্য রসগোল্লার অর্ডার করছেন।

আরও পড়ুন

বাবার অনুপস্থিতিতে ৩০ বছর ধরে রসগোল্লা, দই ও রসমালাই তৈরি করছেন বীরেন্দ্রর ছেলে শ্যামল রায় চৌধুরী (৬৮)। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, একটা সময় দৈনিক কয়েক মণ করে রসগোল্লা বিক্রি হতো। এখন দৈনিক গড়ে ৩০ কেজি রসগোল্লা বিক্রি হচ্ছে। দই ও রসমালাই বিক্রি হয় ২০ থেকে ২৫ কেজি। প্রতি কেজিতে রসগোল্লা ধরে ২০টি। দাম রাখা হয় ৪০০ টাকা। ৩৭ বছর আগে একটি রসগোল্লার দাম ছিল মাত্র এক টাকা জানিয়ে শ্যামল বলেন, দুধ-চিনিসহ সবকিছুর দাম বেড়েছে। মিষ্টির দামও সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলেছে।

কক্সবাজার জেলা সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি সত্যপ্রিয় চৌধুরী বলেন, কক্সবাজারে এখনো বৈশাখীর রসগোল্লার বিকল্প নেই। বিভিন্ন দোকানে দৃষ্টিনন্দন মিষ্টি বেচাবিক্রি হলেও এই রসগোল্লার স্বাদ অন্য রকম। শহরে এই রসগোল্লা কেউ তৈরি করতে পারেন না।

আরও পড়ুন

বৈশাখীতে নিয়মিত রসগোল্লা খেতে যান কক্সবাজার আদালতের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আয়াছুর রহমান। তিনি বলেন, ‘৩০ বছর ধরে রসে ভরা এই রসগোল্লা খেয়ে আসছি। একবার খেলে বারবার খেতে ইচ্ছা করে এই রসগোল্লা। মাঝেমধ্যে একসঙ্গে কয়েকটা রসগোল্লাও খাওয়া হয়, তবু ইচ্ছাপূরণ হয় না।’