ছাত্রীর লাশ নিয়ে মহাসড়কে বিক্ষোভ

অনি রায়কে আত্মহত্যায় প্ররোচণাকারীর বিচারের দাবিতে মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে গ্রামবাসীর বিক্ষোভ। মঙ্গলবার দুপুরে যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলা মোড়ে
ছবি: প্রথম আলো

যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী অনি রায়ের (১৩) আত্মহত্যায় প্ররোচনাকারীদের বিচারের দাবিতে তার লাশ নিয়ে যশোর-বেনাপোল মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন গ্রামবাসী। আজ মঙ্গলবার দুপুরে ঝিকরগাছা উপজেলা মোড়ে মহাসড়কের ওপর এ বিক্ষোভ হয়।

অনি রায়ের লাশ নিয়ে বেলা আড়াইটা থেকে তিনটা পর্যন্ত আধা ঘণ্টা যশোর-বেনাপোল মহাসড়ক অবরোধ করা হয়। এ সময় ব্যস্ত এই মহাসড়কের দুই পাশে শতাধিক যানবাহন আটকা পড়ে। এতে দুর্ভোগ দেখা দেয়। পরে ঝিকরগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ঘটনাস্থলে গিয়ে বিচারের আশ্বাস দিলে অবরোধ তুলে নেন বিক্ষোভকারীরা।

নিহত অনি রায় উপজেলার হাসপাতাল রোড মিস্ত্রিপাড়া এলাকার কুয়েতপ্রবাসী গৌতম রায়ের মেয়ে। সে ঝিকরগাছা বদরুদ্দীন মুসলিম (বিএম) হাইস্কুলের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। গত সোমবার নিজ বাড়িতে গলায় ফাঁস দিয়ে ওই ছাত্রী আত্মহত্যা করে।

নিহত ছাত্রীর ভাই অর্ঘ্য রায় সাংবাদিকদের বলেন, ‘স্কুলে কোচিং শেষে সোমবার সকালে আমার বোন অনিকে একটি কক্ষে নিয়ে তিন ছেলে মারধর করে। পরে অনি কক্ষ থেকে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে বের হয়। বাড়িতে গিয়ে ঘরের দরজা আটকে মায়ের শাড়ি গলায় পেঁচিয়ে সে আত্মহত্যা করে। আমার বোন আত্মহত্যা করেনি, তাকে আত্মহত্যার প্ররোচনা দিয়ে হত্যা করা হয়েছে। বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষ থেকে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে বের হওয়ার সিসিটিভি ক্যামেরায় ফুটেজ রয়েছে।’

স্বজনদের অনেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন, বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে। তার লাশের এখনো সৎকার হয়নি। অথচ বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে কোনো সমবেদনা নেই। আজও যথারীতি বিদ্যালয়ে কোচিং চালিয়ে যাচ্ছে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বিষয়টা নিয়ে অনেকে সমালোচনা করেন।

অনি রায়ের আত্মহত্যার কারণ জানতে চাইলে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুস সামাদ জানান, বিদ্যালয় থেকে ওই ছাত্রীর বাড়ির দূরত্ব ৩০০ গজের মতো। গতকাল সকালে বিদ্যালয়ের কোচিংয়ে এসে অসুস্থতার কথা বলে অনি রায় বাড়িতে চলে যায়। বিদ্যালয়ের সিসিটিভি ক্যামেরায় এটার ফুটেজ রয়েছে।

প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘কেউ অনিকে কোনো কক্ষে নিয়ে মারধর বা নির্যাতন করেছে, এমন কোনো প্রমাণ আমরা পাইনি। যে চার-পাঁচজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হচ্ছে, তাদের সমস্ত তথ্য পুলিশের কাছে সরবরাহ করা হয়েছে। তবে ওই শিক্ষার্থীদের বিষয়ে অনি আগে কখনো কোনো অভিযোগ করেনি। অনি রায়ের আত্মহত্যায় যদি কারও প্ররোচনা থেকে থাকে, তাহলে তদন্তপূর্বক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।’

যাদের বিরুদ্ধে ওই ছাত্রীকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তাদের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঝিকরগাছা থানার ওসি সুমন ভক্ত বলেন, অনি রায়কে উত্ত্যক্ত করে আত্মহত্যায় প্ররোচনার বিষয়ে তাঁরা লোকমুখে শুনেছেন। ওই পরিবারের স্বজনদের ডেকে অভিযোগ দিতে বলা হয়েছে। কিন্তু তারা এখনো এ বিষয়ে কোনো অভিযোগ দেয়নি। তবে গতকাল থানায় অপমৃত্যুর একটি মামলা করা হয়েছে। ময়নাতদন্ত শেষে আজ পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে। লাশের সৎকার করতে শ্মশানে নেওয়ার সময় কিছু লোকের প্ররোচনায় স্বজনেরা বিচারের দাবিতে কিছুক্ষণ রাস্তায় বসে পড়েন। তবে পরে পরিস্থিতি শান্ত করা হয়েছে। খুব দ্রুত এ ঘটনার রহস্য উদ্‌ঘাটন করা হবে বলে ওসি জানান।