বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনে উপনির্বাচনে মহাজোটের শরিক জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলকে (জাসদ) সমর্থন দেওয়ায় প্রার্থী দেয়নি আওয়ামী লীগ। জাসদের প্রার্থী এ কে এম রেজাউল করিম তানসেন এবার মশাল প্রতীক নিয়ে লড়ছেন। অন্যদিকে লাঙ্গল নিয়ে লড়ছেন জাপার প্রার্থী শাহীন মোস্তফা কামাল।
ভোটাররা বলছেন, বিএনপির সাবেক নেতা কামরুল হাসান সিদ্দিকী প্রার্থিতা ফিরে পাওয়ায় ভোটের সমীকরণ পাল্টে যেতে পারে। কারণ, এই নির্বাচনী এলাকায় বিএনপি-জামায়াতের ভোটার অনেক বেশি। অতীতের নির্বাচনগুলোতে জাসদ ও জাপার পাওয়া ভোটের সংখ্যা খুবই কম। আওয়ামী লীগ-বিএনপির দলীয় প্রার্থীবিহীন এই নির্বাচন নিয়ে এখন পর্যন্ত ভোটারদের আগ্রহ নেই। তবে শেষ পর্যন্ত ভোটার উপস্থিতি বাড়লে সুবিধা বেশি পাবেন কুড়াল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুল হাসান। তিনি নন্দীগ্রাম পৌরসভার সাবেক মেয়র এবং পৌর বিএনপির সাবেক সহসভাপতি। যদিও দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে পৌরসভায় প্রার্থী হওয়ায় তাঁকে আগেই দল থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
এই তিনজন ছাড়াও বগুড়া-৪ আসনে মাঠে আছেন জাকের পার্টির আবদুর রশিদ সরদার (গোলাপ ফুল) এবং তাজ উদ্দিন মণ্ডল (ডাব)। সোমবার প্রতীক বরাদ্দের পর থেকেই জোড় প্রচারণা শুরু করেছেন প্রার্থীরা।
কাহালু উপজেলার মানুষ উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে নানাভাবে বঞ্চিত। এবার এখানকার ভোটারদের মুখে এক সুর, সংসদ সদস্যের পদ কোনোভাবেই নন্দীগ্রামে যেতে দেবেন না।
কাহালু ও নন্দীগ্রাম উপজেলা নিয়ে গঠিত বগুড়া-৪ আসনটি বিএনপি-জামায়াতের ‘ভোটব্যাংক’ হিসেবে পরিচিত। দুই উপজেলার অন্তত ২০ জন ভোটারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে মোশারফ হোসেন ধানের শীষ প্রতীকে ১ লাখ ২৬ হাজার ৭২২ ভোট পেয়ে জয়ী হন। অন্যদিকে মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে জাসদের এ কে এম রেজাউল করিম নৌকা প্রতীক নিয়ে ৮৪ হাজার ৬৭৯ ভোট পান। ২০১৪ সালের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে দুই উপজেলাতেই জামায়াত প্রার্থীদের কাছে বড় ব্যবধানে হারে আওয়ামী লীগ-প্রার্থীরা। অতীতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচনী ফলাফলেও এগিয়ে বিএনপি ও জামায়াত। এ কারণে ভোটের রাজনীতিতে এ আসনটি বিএনপি-জামায়াতকে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী ধরা হয়।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি। সংসদীয় আসনটির ২ লাখ ৮৩ হাজার ২৪০ ভোটারের মধ্যে ৩৫ হাজার ৬৯২ জন সেবার ভোট দেন। মহাজোট প্রার্থী রেজাউল করিম ২২ হাজার ২০৩ ভোট পেয়ে সংসদ সদস্য হন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয় পার্টির নুরুল ইসলাম পেয়েছিলেন ১৩ হাজার ৪৮৯ ভোট।
ভোটাররা বলছেন, বিএনপির ছেড়ে দেওয়া এই আসনে উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলেন কাহালু ও নন্দীগ্রাম উপজেলা আওয়ামী লীগের অন্তত ছয়জন নেতা। তবে দলীয় সিদ্ধান্তে জাসদকে আসনটি ছেড়ে দেওয়ায় মশাল প্রতীকে ভোট চাওয়ায় আগ্রহ নেই আওয়ামী লীগ নেতাদের।
জাসদ প্রার্থী রেজাউল করিম ১৯৯১ সালের নির্বাচনে মশাল প্রতীকে ১ হাজার ৬৩৯ ভোট, ১৯৯৬ সালে ৮৮৮ ভোট, ২০০১ সালের নির্বাচনে ২ হাজার ৭৭৮ ভোট পেয়ে জামানত হারান। তবে ২০০৮ সালের নির্বাচনে মহাজোট থেকে নৌকা প্রতীকে ৭৫ হাজার ৯৯১ ভোট এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে ৮৪ হাজার ৬৭৯ এবং ভোট পান। মশাল প্রতীক নেওয়ায় এবারও তিনি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারেন বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগ নেতারা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে নন্দীগ্রাম ও কাহালু উপজেলা আওয়ামী লীগের চারজন নেতা বলেন, আওয়ামী লীগের প্রতীক নৌকা। দলীয় প্রতীকের বদলে অন্য প্রতীকে ভোট চাওয়া সম্ভব নয়।
কাহালু উপজেলা আওয়ামী লীগের দুজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুল হাসান সিদ্দিকী মাঠে ফেরায় হিসাব–নিকাশ পাল্টেছে। এখন কামরুল হাসানের সঙ্গেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। অতীতে সংসদ সদস্য পদ পেয়েছেন নন্দীগ্রাম উপজেলার প্রার্থী। এতে কাহালু উপজেলার মানুষ উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে নানাভাবে বঞ্চিত। এবার এখানকার ভোটারদের মুখে এক সুর, সংসদ সদস্যের পদ কোনোভাবেই নন্দীগ্রামে যেতে দেবেন না। এ সুযোগ নিতে পারেন লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী শাহীন মোস্তফা।
নন্দীগ্রাম উপজেলা আওয়ামী লীগের দুজন নেতা বলেন, এ কে এম রেজাউল করিম ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে মশাল প্রতীকে অল্প ভোটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। তখন হাটবাজার ইজারা, কাবিখা-টিআর কর্মসূচিতে অনিয়ম কেলেঙ্কারিতে জড়ানোর অভিযোগ উঠেছিল। এবারও প্রার্থী হওয়ায় তাঁকে ভোটারদের নানা প্রশ্নের মুখে পড়তে হবে।
নন্দীগ্রাম উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন বলেন, আওয়ামী লীগের প্রতীক নৌকা। অন্য প্রতীকে ভোট চাওয়া বিব্রতকর। মহাজোট প্রার্থী রেজাউল করিম কখনো মশাল, কখনো নৌকা প্রতীকে ভোট করায় ভোটাররাও বিভ্রান্ত। তবুও মহাজোটের পক্ষে নির্বাচনী সভা ডাকলে সেখানে যেতে হবে।
জাসদ বগুড়া জেলা শাখার সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য এ কে এম রেজাউল করিম বলেন, ‘মহাজোট থেকে এ আসনে আমাকে প্রার্থী করা হয়েছে। মশাল প্রতীক হলেও আওয়ামী লীগ থেকে সমর্থন দেওয়া হয়েছে। এই আসনে অন্যদের তেমন ভোট নেই। মহাজোট ঐক্যবদ্ধ। শরিক দল একজোট হয়ে এখানে মশালের পক্ষে কাজ করছেন। নির্বাচিত হলে অসমাপ্ত উন্নয়নকাজ সম্পন্ন করতে পারব।’
আগামী ১ ফেব্রুয়ারি এই আসন ইভিএমে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।