সমাধানের পথ দেখায় বিতর্ক

জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে কুমিল্লায় স্কুল বিতর্ক উৎসব শুরু হয়
ছবি: প্রথম আলো

বিতর্ক মানুষকে যুক্তিবাদী করে তোলে। যুক্তি দিয়ে কথা বললে মানুষ এগিয়ে যায়, সৃজনশীল হয়ে ওঠে। একজন বিতার্কিকই যুক্তি দিয়ে সত্য বলে দেশের উন্নয়নে অংশ নিতে পারেন। মেধাকে শাণিত করতে হলে যুক্তির মেলায় জড়ো হতে হবে। এ জন্য বিতর্কের বিকল্প নেই। কারণ, বিতর্ক সমাধানের পথ দেখায়।

গতকাল বুধবার কুমিল্লায় আয়োজিত পুষ্টি-প্রথম আলো জাতীয় স্কুল বিতর্ক উৎসবে বিতার্কিক, শিক্ষক ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা এসব কথা বলেন। ‘যোগ দাও যুক্তির মেলায়’ প্রতিপাদ্যে কুমিল্লার নবাব ফয়জুন্নেছা সরকারি উচ্চবিদ্যালয় মিলনায়তনে সকাল নয়টায় বিতর্ক উৎসবের উদ্বোধন করা হয়। এতে কুমিল্লার ১৬টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নাম নিবন্ধন করে।

পুষ্টি-প্রথম আলোর আয়োজনে গতকাল কুমিল্লায় অনুষ্ঠিত স্কুল বিতর্ক উৎসবে পুরস্কার হাতে চ্যাম্পিয়ন দলের সদস্যরা
ছবি: প্রথম আলো

নবাব ফয়জুন্নেছা সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থীর পরিবেশনায় জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। পরে প্রধান অতিথি হিসেবে উৎসবের উদ্বোধন করেন কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. জামাল নাছের। তিনি বলেন, বিতর্ক করলে জানার পরিধি বাড়ে। বিতর্ক মানুষকে যৌক্তিক মানুষ হতে শেখায়। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার জন্য যুক্তির বিকল্প নেই।

উদ্বোধনী পর্বে নবাব ফয়জুন্নেছা সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রাশেদা আক্তার, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব বদরুল হুদা, বিতর্ক উৎসবের পৃষ্ঠপোষক টিকে গ্রুপের পুষ্টি কনজ্যুমারের কুমিল্লা অঞ্চলের বিক্রয় ব্যবস্থাপক শফিকুল ইসলাম বক্তব্য দেন। প্রথম আলো বন্ধুসভা কুমিল্লার সদস্য রুবাইয়া সুলতানার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন প্রথম আলোর কুমিল্লার নিজস্ব প্রতিবেদক গাজীউল হক।

অনুষ্ঠানে মাদকের কুফল নিয়ে বিতার্কিকদের উদ্দেশে বক্তব্য দেন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তপন ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, মাদক কে ‘না’ বলার শিক্ষা নিতে হবে। বিতার্কিকেরাই মাদকের বিরুদ্ধে যুক্তি দিয়ে জনমত গঠন করতে পারেন। এরপর সনাতনী বিতর্কের ওপর কর্মশালা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ডিবেটিং সোসাইটির সাবেক বিতার্কিক মো. রাশেদুল আলম এ পর্বে বিতর্কের খুঁটিনাটি বিষয়ে ধারণা দেন।

শেষে নিম্নমাধ্যমিক ও মাধ্যমিক ক্যাটাগরিতে বিতর্ক কুইজ হয়। এতে নিম্নমাধ্যমিকে পুলিশ লাইনস হাইস্কুলের মাহতাব হোসেন, কুমিল্লা জিলা স্কুলের হোসাইন মাহমুদ চৌধুরী ও নবাব ফয়জুন্নেছা সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের জুনাইনা ইকবাল জয়ী হয়। মাধ্যমিক ক্যাটাগরিতে কুমিল্লা মডার্ন হাইস্কুলের মো. ফাহাদ আমিন প্রথম, কুমিল্লা জিলা স্কুলের শাদিদ হায়দার চৌধুরী দ্বিতীয় ও কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ড সরকারি মডেল কলেজের আশিকুর রহমান চৌধুরী তৃতীয় হয়। পরে বারোয়ারি বিতর্কে অংশ নেয় ৩৫ জন। এতে কুমিল্লা মডার্ন হাইস্কুলের বশিরা রশিদ সেরা বক্তা হিসেবে ক্রেস্ট, মেডেল ও সনদ পায়।

পরে চারটি শ্রেণিকক্ষে সনাতনী বিতর্ক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। এতে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করে চূড়ান্ত পর্বে অংশ নেয় কুমিল্লা জিলা স্কুল ও নবাব ফয়জুন্নেছা সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। ‘পরিবেশ রক্ষায় ব্যক্তির ভূমিকাই প্রধান’, এর পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করে চ্যাম্পিয়ন হয় নবাব ফয়জুন্নেছা সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বিজয়ী চার শিক্ষার্থী মারজিয়া রহমান শাউলী, নুসরাত জাহান, আফরিন আহমেদ স্নিগ্ধা ও ফারিহা মেহনাজ। এতে রানার্সআপ হয় কুমিল্লা জিলা স্কুলের আবদুল্লাহ রাফি চৌধুরী, সমৃদ্ধ হোড়, সৌম্য প্রসাদ ভৌমিক ও মো. নাজিবুর রহমান। শ্রেষ্ঠ বক্তা হয় কুমিল্লা জিলা স্কুলের দলনেতা সৌম্য প্রসাদ ভৌমিক।

বিকেলে সমাপনী পর্বে প্রধান অতিথি ছিলেন কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ও বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কুমিল্লা জেলা শাখার সভাপতি মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ। এ ছাড়া বক্তব্য দেন প্রথম আলোর সহকারী বার্তা সম্পাদক মো. রাশেদুল আলম ও প্রথম আলো বন্ধুসভা কুমিল্লার সাধারণ সম্পাদক সালমা হক।

মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘বিতর্ক সারা দুনিয়াতে যুক্তির নিরিখে হয়। পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে যখন আমরা যুক্তি দিয়ে কথা বলি, তখন আমাদের বক্তব্যকে অগ্রাহ্য করে ক্ষমতাবানেরা নিজেদের স্বার্থসিদ্ধি করে।’

পরে চ্যাম্পিয়ন ও রানার্সআপ দলকে ট্রফি, মেডেল, গেঞ্জি ও সনদ দেন আমন্ত্রিত অতিথিরা। এ ছাড়া কুইজ ও বারোয়ারি বিতর্কে সেরাদেরও সনদ দেওয়া হয়। পুরো উৎসবে সহযোগিতা করেন লালমাই সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ শফিকুর রহমান, বাপার কুমিল্লা জেলার সাধারণ সম্পাদক আলী আকবর, কুমিল্লা কমার্স কলেজের অধ্যক্ষ হুমায়ুন কবীর, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ডিবেটিং সোসাইটি ও ভিক্টোরিয়া কলেজ বিতর্ক পরিষদ ও প্রথম আলো বন্ধুসভা কুমিল্লার সদস্যরা।

১৪ জুলাই থেকে পুষ্টির পৃষ্ঠপোষকতা প্রথম আলোর উদ্যোগে খুলনা ও রংপুরে এ স্কুল বিতর্ক উৎসব শুরু হয়। দেশের ৩৯টি অঞ্চলে এ উৎসব হচ্ছে। আঞ্চলিক পর্যায়ের বিজয়ী ১১ জন ঢাকায় জাতীয় পর্বে অংশ নেবে। প্রথম আলো বন্ধুসভার সহযোগিতায় এই প্রতিযোগিতার প্রচার সহযোগী নাগরিক টিভি।