নানা আয়োজনে বরেণ্য চিত্রশিল্পী এস এম সুলতানকে স্মরণ
নড়াইলে নানা আয়োজনে বিশ্ববরেণ্য চিত্রশিল্পী এস এম সুলতানের ২৯তম মৃত্যুবার্ষিকী পালিত হয়েছে। আজ মঙ্গলবার মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে নড়াইলে শিল্পীর সমাধিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়।
এ ছাড়া শিল্পীর প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের আর্ট ক্যাম্প, এস এম সুলতানকে নিয়ে লেখা শিশুদের চিঠি প্রদর্শনী, পাপেট প্রদর্শনী, আলোচনা সভা, প্রামাণ্যচিত্র ‘আদমসুরত’ প্রদর্শন ও পালাগানের আসর বসানো হয়। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, নড়াইল জেলা প্রশাসন ও এস এম সুলতান ফাউন্ডেশন এসব কর্মসূচির আয়োজন করে।
আজ সকালে নড়াইল পৌরসভার কুড়িগ্রামে অবস্থিত এস এম সুলতান স্মৃতি সংগ্রহশালা চত্বরে শিল্পীর সমাধিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করা হয়। এ সময় ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশফাকুল হক চৌধুরী, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) শাশ্বতী শীল, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) জুবায়ের হোসেন চৌধুরী, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আনোয়ার হোসেন খান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তারেক আল মেহেদী, সদরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন আক্তার, নেজারত ডেপুটি কালেক্টর (এনডিসি) আসিফ উদ্দিন মিয়া, এস এম সুলতান সংগ্রহশালার কিউরেটর তন্দ্রা মুখার্জি প্রমুখ।
এ সময় এস এম সুলতান ফাউন্ডেশন, জেলা শিল্পকলা একাডেমি, এস এম সুলতান বেঙ্গল আর্ট কলেজ, এস এম সুলতান শিশু চারু ও কারুকলা ফাউন্ডেশন, জেলা সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটসহ সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এবং বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে শিল্পীর সমাধিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করা হয়। এরপর এস এম সুলতান স্মৃতি সংগ্রহশালায় এস এম সুলতানের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের আর্ট ক্যাম্প, শিশুস্বর্গ মিলনায়তনে তাঁকে নিয়ে লেখা শিশুদের চিঠি প্রদর্শনী, পাপেট প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। বিকেলে জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে আলোচনা সভা ও প্রামাণ্যচিত্র ‘আদমসুরত’ এবং পালাগানের আসর বসানো হয়।
বিশ্ববরেণ্য চিত্রশিল্পী এস এম সুলতানের জন্ম ১৯২৪ সালের ১০ আগস্ট, নড়াইলের মাছিমদিয়া গ্রামে। পুরো নাম শেখ মোহাম্মদ সুলতান। ডাকনাম লালমিয়া। তাঁর বাবা মেছের আলী এবং মা মাজু বিবি। রাজমিস্ত্রি বাবার সংসারে দারিদ্র্যের মধ্যেও ১৯২৮ সালে নড়াইল ভিক্টোরিয়া কলেজিয়েট স্কুলে লেখাপড়া শুরু করেন শেখ মোহাম্মদ সুলতান। পড়াশোনার অবসরে বাবাকে কাজে সহযোগিতার পাশাপাশি ছবি আঁকতেন তিনি। ১৯৪১ সালে কলকাতা আর্ট স্কুলে ভর্তি হন। পরে আর্ট স্কুল ত্যাগ করে ঘুরে বেড়ান এখানে-সেখানে।
এস এম সুলতানের শিল্পকর্ম ছিল বাংলার কৃষক, জেলে, তাঁতি, কামার, কুমার, মাঠ, নদী, হাওর, বাঁওড়, জঙ্গল, সবুজ প্রান্তর ইত্যাদি নিয়ে। চিত্রাঙ্কনের পাশাপাশি তিনি বাঁশি বাজাতেন। ১৯৪৬ সালে ভারতের সিমলায় প্রথম একক চিত্র প্রদর্শনী হয় তাঁর। ১৯৫০ সালে লন্ডনের ভিক্টোরিয়া এমব্যাংকমেন্টে আয়োজিত দলগত প্রদর্শনীতে পাবলো পিকাসো, সালভাদর দালি প্রমুখ শিল্পীর সঙ্গে সুলতানের ছবিও প্রদর্শিত হয়।
কাজের স্বীকৃতি হিসেবে এস এম সুলতান যুক্তরাজ্যের কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘ম্যান অব দ্য ইয়ার’, যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের বায়োগ্রাফিক্যাল সেন্টার থেকে ‘ম্যান অব অ্যাচিভমেন্ট’ এবং এশিয়া উইক পত্রিকা থেকে ‘ম্যান অব এশিয়া’ পুরস্কার পেয়েছেন। এ ছাড়া ১৯৮২ সালে একুশে এবং ১৯৯৩ সালে স্বাধীনতা পদকে ভূষিত হন। ১৯৯৪ সালের ১০ অক্টোবর যশোরের সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে মারা যান এই শিল্পী।