ওসমানী হাসপাতালে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে সাবেক পরিচ্ছন্নতাকর্মীর মামলা

সিলেটের এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
ছবি: প্রথম আলো

সিলেটের এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জ্যেষ্ঠ স্টাফ নার্স, দায়িত্বরত পুলিশ কনস্টেবল, সাবেক ছাত্রলীগ নেতাসহ আটজনের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে মামলা করেছেন হাসপাতালের একজন সাবেক পরিচ্ছন্নতাকর্মী।

গতকাল মঙ্গলবার সিলেটের সিনিয়র স্পেশাল জজ ও মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. হাবিবুর রহমান সিদ্দিকীর আদালতে ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন ও দণ্ডবিধি আইনে এ মামলা করা হয়। মামলার আবেদনকারী মো. ইসলাম উদ্দিন যমুনা, সানমুন ক্লিনিং অ্যান্ড সিকিউরিটি সার্ভিস এবং আউটসোর্সিং কোম্পানির মাধ্যমে ওই হাসপাতালে কর্মরত ছিলেন। ২০১৭ সালের নভেম্বর মাস থেকে গত বছরের সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত তিনি হাসপাতালটিতে দায়িত্ব পালন করেন।

মামলা আসামিরা হলেন এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নার্সিং অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ও জ্যেষ্ঠ স্টাফ ইসরাইল আলী সাদেক, জ্যেষ্ঠ স্টাফ নার্স আমিনুল ইসলাম ও সুমন চন্দ্র দেব, হাসপাতালে কর্মরত পুলিশ কনস্টেবল জনী চৌধুরী, এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. নাজমুল হাসান, হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টার রওশন হাবিব, সিকিউরিটি গার্ড মো. আবদুল জব্বার ও সরদার মো. আবদুল হাকিম সুমন।

এ ছাড়া অজ্ঞাতনামা আরও ৫ থেকে ৬ জনকে মামলায় আসামি করা হয়েছে। আসামিদের মধ্যে ইসরাইল আলী সাদেক ও আমিনুল ইসলাম অপর একটি মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে বর্তমানে কারাগারে আছেন। প্রতারণাসহ বিভিন্ন অভিযোগে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ গত ৯ জানুয়ারি ওই মামলা করে।

আসামিরা একই চক্রের সদস্য হিসেবে হাসপাতালের ভেতরে সব ধরনের অপরাধে জড়িত থেকে অবৈধভাবে প্রচুর টাকার মালিক হয়েছেন।

ইসলাম উদ্দিন মামলার আবেদনে উল্লেখ করেন, আসামিরা একটা সংঘবদ্ধ দুর্নীতি চক্রের সক্রিয় সদস্য। তাঁরা দুর্নীতি করে অবৈধভাবে শত শত কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। ইসরাইল আলী, রওশন হাবিব ও আবদুল জব্বারের কাছে হাসপাতালের শত শত কর্মচারী জিম্মি। আসামিরা শত শত কর্মচারীকে জিম্মি ও প্রতারণা করে ঘুষবাণিজ্যের মাধ্যমে টাকা আত্মসাৎ করেন। চাকরি হারানো ও বদলির ভয়ে তাঁদের বিরুদ্ধে ভয়ে কেউ মুখ খোলেন না। আসামিরা সরকারি ওষুধ চুরি ও দালাল সিন্ডিকেট গড়ে তোলে অনিয়ম-দুর্নীতি করছেন।

হাসপাতালের বিভিন্ন শ্রেণির কর্মচারীদের কাছ থেকে দৈনিক, সাপ্তাহিক ও মাসিক তিন হাজার টাকা থেকে পাঁচ হাজার টাকা অভিযুক্তরা বখরা আদায় করেন বলে আরজিতে উল্লেখ করা হয়। এতে আরও বলা হয়, হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের ওয়ার্ড, কেবিন বেড, বারান্দা বেড ও উন্নত চিকিৎসা করিয়ে দেবেন বলে রোগী ও অভিভাবকদের কাছ থেকে টাকা আদায় করেন। অভিযুক্তরা রোগীদের অস্ত্রোপচারের সিরিয়াল পাইয়ে দেওয়া ও দ্রুত অস্ত্রোপচার করিয়ে দেবেন বলে অঙ্গীকার করে রোগীর স্বজনদের কাছ থেকে টাকা নেন।

ওসমানী হাসপাতালে দুর্নীতিবাজ চক্রের সঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে শুরু করে হাসপাতালের অজ্ঞাতনামা আসামিরাও জড়িত আছেন বলে আরজিতে অভিযোগ করা হয়। আরজিতে আরও বলা হয়, ইসরাইল আলী ক্ষমতার দাপটে কাউকে তোয়াক্কা করেন না। তিনি হাসপাতালের অঘোষিত মালিক ও নিজেকে ‘মুকুটহীন সম্রাট’ মনে করেন। নিয়োগবাণিজ্য, নারী নার্সদের কর্মস্থলে ও কর্মস্থলের বাইরে যৌন হয়রানি, ভুয়া বিল প্রস্তুত করে উপপরিচালকের নামে টাকা আত্মসাৎ, করোনার সময়ে বিভিন্ন সামগ্রী কেনার নামে টাকা আত্মসাৎসহ নানা ধরনের অনিয়ম-দুর্নীতি করে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন।

সিলেট শহরে জ্যেষ্ঠ নার্স ইসরাইল আলীর নামে ও দখলে ৬ থেকে ৭টি বহুতল ভবন, স্ত্রী-সন্তানদের নামে-বেনামে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ আছে বলে আরজিতে দাবি করা হয়। এতে আরও দাবি করা হয়, রোগী পরিবহন ও মাদক-আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবসার জন্য ইসরাইল আলীর নামে-বেনামে ৩৫ থেকে ৪০টি নিজস্ব অ্যাম্বুলেন্স আছে। এসব অ্যাম্বুলেন্সের বাজারমূল্য প্রায় ২০ কোটি টাকা। এ ছাড়া পুলিশ কনস্টেবল জনী চৌধুরী দীর্ঘ ১০ বছর ধরে হাসপাতালে কর্মরত থেকে হাসপাতালের ভেতরে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছেন।

কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. নাজমুল হাসানকে সংঘবদ্ধ দুর্নীতিবাজদের চক্রের একজন সদস্য হিসেবে উল্লেখ করে আরজিতে বলা হয়, নাজমুল টেন্ডারবাণিজ্য, অনিয়ম, মাদক ব্যবসা, আবাসিক হলে রেখে ভারতীয় শাড়ির ব্যবসার পাশাপাশি আবাসিক হলে, কলেজে ও হাসপাতালের ভেতরে-বাইরে মাদক ও আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবসা করে আসছেন। অভিযুক্ত অন্যরাও একই চক্রের সদস্য হিসেবে হাসপাতালের ভেতরে সব ধরনের অপরাধে জড়িত থেকে অবৈধভাবে প্রচুর টাকার মালিক হয়েছেন।

যোগাযোগ করলে বাদীর আইনজীবী কানন আলম প্রথম আলোকে জানান, আদালত আবেদনটি গ্রহণ করে মামলা হিসেবে নম্বরভুক্ত করেন। আগামী তারিখে আদালত এ মামলার আদেশ প্রদান করবেন।