কমিটি বাতিল করার দাবি

  • ধর্ষণ মামলার আসামি এবং আওয়ামী লীগ নেতাদের স্বজনদের স্থান দেওয়া হয়েছে।

  • কমিটিগুলো বাতিল করার দাবি জানিয়েছেন বিএনপির একাংশের নেতা–কর্মীরা।

বরগুনা জেলার বিভিন্ন উপজেলা ও পৌর কমিটি গঠনে অনিয়ম হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। টাকার বিনিময়ে এসব কমিটিতে বিতর্কিত ব্যক্তি, ধর্ষণ মামলার আসামি এবং আওয়ামী লীগ নেতাদের স্বজনদের স্থান দেওয়া হয়েছে। এসব কারণে কমিটিগুলো বাতিল করার দাবি জানিয়েছেন বিএনপির একাংশের নেতা–কর্মীরা। এ বিষয়ে তাঁরা দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছে চলতি মাসে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

এসব অভিযোগের বিষয়ে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মাহবুবুল আলম মোল্লা বলেন, সঠিক প্রক্রিয়ায়ই কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি গঠনে কোনো আর্থিক লেনদেন হয়নি। নতুন এসেই পদ না পেয়ে এই অভিযোগ তোলা হচ্ছে।

আগস্ট মাসে পাঁচটি উপজেলা ও তিনটি পৌর কমিটি গঠন করা হয়। টাকার বিনিময়ে কমিটিগুলোতে বিতর্কিত ব্যক্তিদের স্থান দেওয়া হয়েছে।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আগস্ট মাসে জেলা বিএনপির অধীন ১০টি শাখার মধ্যে ৮টির কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। জেলা কমিটি কেন্দ্রীয় কমিটির সঙ্গে সমন্বয় করে এসব কমিটি গঠন করেছে।

দলের একাংশের নেতা–কর্মীদের অভিযোগ, বরগুনায় বিএনপিকে ধ্বংস করার জন্য বিএনপির কেন্দ্রীয় শ্রমবিষয়ক সহসম্পাদক ফিরোজ–উজ–জামান মোল্লার হস্তক্ষেপে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মাহবুবুল আলম মোল্লা, সদস্যসচিব তারিকুজ্জামান, যুগ্ম আহ্বায়ক এ জেড এম সালেহ ফারুক ত্যাগী ও দলের জন্য নিবেদিত নেতাদের বাদ দিয়ে টাকার বিনিময় আওয়ামী লীগ নেতাদের অনুসারীদের দিয়ে দল গঠন করেছেন।

টাকার বিনিময়ে কমিটি গঠনের অভিযোগের বিষয়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির শ্রমবিষয়ক সহসম্পাদক ফিরোজ–উজ-জামান মোল্লা বলেন, ‘উপজেলা ও পৌর বিএনপির কমিটি ঘোষণা করেছে জেলা বিএনপি। এখানে আমার কোনো হাত নেই। কমিটি গঠনে অনিয়মের অভিযোগ যদি ওঠে, তা জেলা বিএনপির নেতাদের বিরুদ্ধে উঠবে।’

২ আগস্ট আমতলী উপজেলা ও পৌর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি ঘোঘণা করে জেলা বিএনপি। জালাল উদ্দিনকে আহ্বায়ক ও কামরুজ্জামান হিরুকে সদস্যসচিব করে উপজেলা বিএনপি এবং কবির ফকিরকে আহ্বায়ক ও তুহিন মৃধাকে সদস্যসচিব করে ১০ সদস্যবিশিষ্ট পৌর কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে।

কয়েকজন নেতা বলেন, দুই কমিটিতে সদস্যসচিব, আহ্বায়কসহ অন্তত পাঁচজন দলীয় কর্মকাণ্ডে নিষ্ক্রিয় ছিলেন। উপজেলা আহ্বায়ক কমিটির সদস্যসচিব কামরুজ্জামান রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন না তিনি। হিরু বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি দেলোয়ার হোসেনের শ্যালক। এসব কারণে আমতলীর বিএনপির একাংশের নেতা–কর্মীরা ঘোষিত কমিটি প্রত্যাখ্যানে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন। পৌর কমিটির আহ্বায়ক কবির ফকিরের স্ত্রী উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সদস্য।

অভিযোগের বিষয় কামরুজ্জামান হিরু প্রথম আলোকে বলেন,‘যদি আমি দলীয় কার্যক্রমে সক্রিয় না থাকতাম, তাহলে কীভাবে বিএনপির নেতা–কর্মীদের নিয়ে ১০ দিন কারাগারে ছিলাম। কমিটি গঠনে কেউ টাকা দিয়েছে বা নিয়েছে, এ বিষয় আমার ধারণা নাই। যারা এই কমিটি মানে না, তারা পদত্যাগ করলে এই পদগুলো শূন্য হয়ে যাবে।’

৩০ সদস্যবিশিষ্ট তালতলী উপজেলা আহ্বায়ক কমিটিতে শহিদুল হককে আহ্বায়ক করায় সাধারণ নেতা–কর্মীদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। শহিদুল হক গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মনিরুজ্জামান মিন্টুর পক্ষে প্রকাশ্যে কাজ করেন। এ কমিটির সদস্যসচিব মোস্তাফিজুর রহমান উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।

এ বিষয়ে আহ্বায়ক শহিদুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগ মিথ্যা। আমি দলীয় কার্যক্রম না করলে সরকার আমার নামে গায়েবি মামলা দিত না। টাকা দিয়ে কমিটি করার অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট।’

বেতাগীতে হুমায়ুন কবীর মল্লিককে আহ্বায়ক ও গোলাম সরোয়ার বিয়াদ খানকে সদস্যসচিব করে ১১ সদস্যবিশিষ্ট বেতাগী উপজেলা এবং জাকির হোসাইনকে আহ্বায়ক ও মিজানুর রহমান খানকে সদস্যসচিব করে ১৪ সদস্যবিশিষ্ট পৌর কমিটি অনুমোদন দেওয়া হয়। এর পর থেকে বেতাগীর নেতা–কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। কমিটি বাতিলের দাবিতে বেতাগীতে বিক্ষোভ সমাবেশ ও সংবাদ সম্মেলনও অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বেতাগী উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক হুমায়ুন কবীর মল্লিক ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ থেকে বিএনপিতে আসেন। তিনি ঢাকায় আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে ব্যবসা করেন। তাঁর নামে ঢাকায় ধর্ষণের অভিযোগে মামলা হয়েছে। ওই মামলায় পুলিশ তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগপত্রও দিয়েছে।

এ বিষয়ে আহ্বায়ক মো. হুমায়ুন কবীর মল্লিক বলেন, যাঁরা হামলা–মামলার শিকার হয়েছেন, তাঁরা আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে পারেন না। টাকার বিনিময় কমিটি গঠনের অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। ধর্ষণ মামলার বিষয়ে তিনি বলেন, ষড়যন্ত্রমূলকভাবে তাঁর বিরুদ্ধে ওই মামলা হয়েছে।