ট্রলার ফেলে পালালেন জেলেরা, উদ্ধার হলো ৮৫০ কেজি কাঁকড়া
সুন্দরবনের নদী ও খাল থেকে নিষিদ্ধ সময়ে কাঁকড়া শিকার করে ফিরছিলেন একদল জেলে। গতকাল সোমবার বিকেলে জেলেরা কয়রার ঘড়িলাল বাজারসংলগ্ন কপোতাক্ষ নদের তীরে পৌঁছালে সেখানে আসে কোস্টগার্ডের টহল দল। তখন জেলেরা দ্রুত ট্রলার তীরে ভিড়িয়ে পালিয়ে যান। ট্রলার থেকে উদ্ধার করা হয় প্রায় ৮৫০ কেজি কাঁকড়া। জব্দ কাঁকড়াগুলো আজ মঙ্গলবার সকালে বনরক্ষীদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তাঁরা দুপুরে উপজেলার বন আদালতে কাঁকড়াগুলো হস্তান্তর করেন।
আজ দুপুরের দিকে কয়রা বন আদালতে গিয়ে দেখা যায়, আদালত ভবনের একটি পুরোনো কক্ষে বেশ কিছু বস্তা ও প্লাস্টিকের ঝুড়িতে রাখা আছে কাঁকড়াগুলো। আদালতে বনবিষয়ক মামলার পরিচালক নাসির উদ্দীন বলেন, ‘আমরা আদালতের নির্দেশের অপেক্ষায় আছি। অনুমতি মিললে কাঁকড়াগুলো সুন্দরবনের নদীতে পুনরায় অবমুক্ত করা হবে।’
কোস্টগার্ড পশ্চিম জোনের মিডিয়া কর্মকর্তা মুনতাসির ইবনে মুহসিন বলেন, ট্রলার থেকে উদ্ধার করা ৮৫০ কেজি কাঁকড়ার বাজারমূল্য প্রায় ৩ লাখ ৮২ হাজার ৫০০ টাকা। কাঁকড়াগুলো বন বিভাগের কোবাদক ফরেস্ট স্টেশনের বনরক্ষীদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
সুন্দরবনসংলগ্ন কয়রার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে জানা গেছে, এখন কাঁকড়ার ব্যবসা মাছের চেয়ে বেশি লাভজনক। বন উপকূলে গড়ে উঠেছে শক্তিশালী সিন্ডিকেট। নিয়ম ভেঙে নিয়মিত চলছে কাঁকড়া শিকার। প্রতিদিন স্থানীয় আড়তে শত শত মণ কাঁকড়া বিক্রি হচ্ছে। নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও জেলেরা বনে ঢুকে কাঁকড়া ধরছেন।
বন বিভাগের নিয়ম অনুযায়ী, ১ জুন থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত সুন্দরবনে মাছ ধরা, কাঁকড়া আহরণ ও পর্যটন নিষিদ্ধ। এর আগে গত ২৬ জুলাই কয়রার চরামুখা গ্রাম থেকে কোস্টগার্ড ৭৩০ কেজি কাঁকড়া উদ্ধার করে। এ ছাড়া জুন থেকে আগস্টে একাধিকবার কাঁকড়া ও কাঁকড়া শিকারের সরঞ্জাম জব্দ করা হলেও শিকারিরা প্রায় সব অভিযানে পালিয়ে গেছেন।
উপকূল ও সুন্দরবন সংরক্ষণ আন্দোলনের সদস্যসচিব সাইফুল ইসলাম বলেন, আগে ছোট কাঁকড়ার তেমন বাজার ছিল না। এখন আকার না দেখেই নির্বিচার ধরা হচ্ছে সব কাঁকড়া। কিছু অসাধু বনরক্ষীর সঙ্গে গোপন যোগসাজশে বাঁশের তৈরি ফাঁদ পেতে চলছে শিকার। পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হলে কাঁকড়ার অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাবে।
পশ্চিম সুন্দরবনের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা এ জেড এম হাছানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের টহল দল ও তল্লাশির বিশেষ দলের কারণে অপরাধ অনেকাংশে কমেছে। ইতিমধ্যে একাধিক নৌকা ও বিপুল কাঁকড়া জব্দ করে নদীতে অবমুক্ত করা হয়েছে। তবে বাজারে নজরদারির অভাবে কিছু কাঁকড়া ডিপোতে যেতে পারে। বাজারে নজরদারি বাড়াতে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। পাশাপাশি দায়িত্বে অবহেলা প্রমাণিত হলে বনকর্মীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’