জনসমক্ষে কলেজ গেট থেকে শিক্ষার্থীকে মোটরসাইকেলে তুলে নিয়ে মারধর

গাজীপুরের শ্রীপুরের মুক্তিযোদ্ধা রহমত আলী কলেজের সামনে থেকে মোটরসাইকেলে দুজনের মাঝখানে উল্টোভাবে বসিয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে সাব্বির রহমানকে
ভিডিও থেকে ছবিটি সংগৃহীত

গাজীপুরের শ্রীপুরে কলেজ ফটক থেকে এক শিক্ষার্থীকে মোটরসাইকেলে তুলে নিয়ে মারধর করা হয়েছে। আজ বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় শ্রীপুর থানায় অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী। শিক্ষার্থীর নাম সাব্বির রহমান (১৮)। সাব্বির বেড়াইদেরচালা গ্রামের সালামের ছেলে ও ওই কলেজের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী।

সাব্বির রহমান জানান, প্রথম বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষা শেষে কলেজ থেকে বের হয়ে আসার সময় তুলে নিয়ে মারধর করা হয়। মারধরে তিনি বাঁ চোখের পাশে ও কপালে আঘাত পেয়েছেন‌। এ ঘটনায় বেলা দুইটায় শ্রীপুর থানায় তিনি অভিযোগ করেছেন। অভিযোগে চারজনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। তাঁরা হলেন মো. তুহিন (১৮), মো. অনিক (১৯), মো. হৃদয় (১৮) ও মো. রনি (১৯)। এ ছাড়া অজ্ঞাতনামা পাঁচ থেকে ছয়জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে অভিযোগে। তাঁরা সবাই উপজেলার পৌর এলাকার দারোগারচালা গ্রামের বাসিন্দা।

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে সাব্বির রহমান বলেন, কয়েকজন সহপাঠীর সঙ্গে তিনি গত রোববার বেড়াইদেরচালা গ্রামের এসকিউ পোশাক কারখানার পেছনের একটি মাঠে ফুটবল খেলছিলেন। খেলা নিয়ে দারোগারচালা গ্রামের অনিকসহ আরও কয়েকজনের সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডা হয়। এ ঘটনার জেরে আজ দুপুরে তুলে নিয়ে ব্যাপক মারধর করা হয় বলে দাবি সাব্বিরের।

সাব্বির আরও বলেন, দুপুর সাড়ে ১২টায় পরীক্ষা শেষে কলেজ থেকে বের হয়ে প্রধান ফটকে দাঁড়িয়ে ছিলেন তিনি। এ সময় চারটি মোটরসাইকেলে সাত থেকে আটজন তাঁর সামনে এসে থামেন। তাঁরা মোটরসাইকেল থেকে নেমেই তাঁকে মারধর শুরু করেন। একপর্যায়ে জোর করে তাঁকে একটি মোটরসাইকেলে উল্টোভাবে বসিয়ে তুলে নিয়ে যান। শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পাশের একটি সড়কে নিয়ে আবারও মারধর করা হয়। কপাল থেকে রক্ত ঝরতে শুরু করলে অভিযুক্ত ব্যক্তিরা তাঁকে একটি হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা করান। পরে ভয়-ভীতি দেখিয়ে শ্রীপুর চৌরাস্তায় নামিয়ে চলে যান।

জোর করে মোটরসাইকেলে তুলে নেওয়ার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওতে দেখা যায়, কলেজ ফটকের সামনে যাত্রী ছাউনির কাছ থেকে সাব্বিরকে তুলে নিয়ে মোটরসাইকেলের সিটের মাঝখানে উল্টোভাবে বসানো হয়। মোটরসাইকেল চালাচ্ছিলেন একজন। অপর দিকে পেছন থেকে তাঁকে আরেকজন ধরে রাখেন। দ্রুতগতিতে মোটরসাইকেলটি চালানো হচ্ছিল। ওই মোটরসাইকেলের পেছনে আরও কয়েকটি মোটরসাইকেলকে একই গতিতে চলে যেতে দেখা যায়।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী নাঈম হাসান প্রথম আলোকে বলেন, সাব্বির দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় উচ্চ শব্দে মোটরসাইকেলগুলো ঘটনাস্থলে আসতে দেখেন তিনি। আচমকা মোটরসাইকেল থামিয়ে তাঁরা মারধর শুরু করেন। এক থেকে দুই মিনিটের মধ্যে তাঁকে সেখান থেকে তুলে নিয়ে যান। এ সময় কলেজ ফটকের সামনে শ্রীপুর-গোসিংগা আঞ্চলিক সড়কে লোকজন ছিলেন। প্রকাশ্যেই তাঁকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

এ ঘটনায় অভিযুক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে অনিকের মুঠোফোনে কল দিলে সংযোগ বন্ধ পাওয়া যায়। অন্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এ এফ এম নাসিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘মারধরের ঘটনায় একটি অভিযোগ পেয়েছি। আমরা অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আইনি ব্যবস্থা নেব।’