দাকোপে ১৭টি গরুর মৃত্যু, পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়েছে ঘাসের নমুনা

প্রতীকী ছবি
ছবি: আনিস মাহমুদ

খুলনার দাকোপে ঘূর্ণিঝড় রিমাল আঘাত হানার দুই দিন পর গত মঙ্গলবার ১৭টি গরু মারা যায়। এক দিনে উপজেলায় এত গরুর মৃত্যুর পর গ্রামে গ্রামে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। যদিও নতুন করে আর গরু মারা যায়নি। তবে কী কারণে গরুগুলো মারা গেল, তা এখন পর্যন্ত উদ্‌ঘাটন করতে পারেনি প্রাণিসম্পদ বিভাগ। কচি ঘাসের মাধ্যমে খাদ্যে বিষক্রিয়ার কারণে এ ঘটনা ঘটতে পারে বলে ধারণা করছে প্রাণিসম্পদ বিভাগ। ঢাকায় রাসায়নিক পরীক্ষাগারে ঘাসের নমুনা এরই মধ্যে পাঠানো হয়েছে।

জনসচেতনতার জন্য এলাকায় মাইকিংও করছে উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর। তারা বিলে পানি না শুকানো পর্যন্ত গবাদিপ্রাণী বাড়িতে রেখে খাওয়ানোর পরামর্শ দিয়েছে।

এদিকে উপজেলাজুড়ে গবাদিপ্রাণী পালনকারীরা আরেকটি রোগ নিয়ে দুশ্চিন্তায় কাটাচ্ছেন। অনেক গরু এখন লাম্পি স্কিন (এলএসডি) রোগে আক্রান্ত। তবে লাম্পি স্কিন রোগের টিকা উপজেলায় নেই। ছাগলের পক্সের জন্য দেওয়া ‘গোট পক্স’ রোগের টিকা দিয়ে কাজ চালানো হচ্ছে। তবে তার সরবরাহও আছে চাহিদার মাত্র ৪ শতাংশের মতো।

আরও পড়ুন

উপজেলার বাজুয়া ইউনিয়নের লাইভস্টক সার্ভিস প্রোভাইডার (এলএসপি) কল্যাণ থান্দার আজ বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘গত মঙ্গলবার উপজেলার কৈলাসগঞ্জ ইউনিয়নের ধোপাদী গ্রামের মাঝবিল পাড়ায় এক ঘণ্টার ব্যবধানে ১৩টি গরু মারা যায়। একই দিন একই রকম উপসর্গ নিয়ে উপজেলার হরিণটানা ও পশ্চিম বাজুয়া গ্রামে আরও ৪টি গরু মারা যায়। আমার কাছে ওই দিন ধোপাদী গ্রামের মাঝবিল পাড়ায় সুনীল মণ্ডল প্রথম ফোন করে গরুর অসুস্থতার কথা জানান। পেট ফুলে যাচ্ছে, মুখ দিয়ে লালা ঝরছে—এ রকম উপসর্গের কথা বলতে বলতে তিনি জানান, একটা গরু মারা গেছে। কথা বলার মধ্যেই আরও দুটি গরু মারা যাওয়ার কথা জানান তিনি। ধোপাদী গ্রামে সুনীল মণ্ডলের ৫টি, পরিমল মিস্ত্রীর ৪টিসহ মোট ১৩টি গরু মারা গেছে। এ ছাড়া হরিণটানা ও পশ্চিম বাজুয়া গ্রামের আরও চারটি গরু একই রকম উপসর্গ নিয়ে ওই দিন মারা যায়। সকাল থেকে বিলে ঘাস ও পানি খেয়ে গরুগুলো গোয়ালে ফেরার কিছুক্ষণের মধ্যে সেগুলো মারা যায়।

মৃত গরুর দেহাংশের নমুনাও সংগ্রহ করা হয়েছে। আগামী রোববার সেগুলোও পরীক্ষাগারে পাঠানো হবে। পরীক্ষার ফলাফল কবে নাগাদ পাওয়া যাবে, সেটা বলা সম্ভব না।

কল্যাণ থান্দার বলেন, কিছুদিন ধরে বেশির ভাগ বাড়িতে বাছুরের রক্ত আমাশয়, গরুর জ্বর এসব খুব হচ্ছে। অন্য বছর গরুর এই জ্বর বর্ষা মৌসুমের শুরুর দিকে হয়ে থাকে। এ বছর একটু আগে শুরু হয়েছে। তবে এটা খারাপ কিছু না। এ ছাড়া এখন অনেক গরু লাম্পি স্কিন ভাইরাসে আক্রান্ত রয়েছে।

প্রাণিসম্পদ বিভাগ ধারণা করছে, বৃষ্টির দিনে কচি ঘাসে নাইট্রোজেনের মাত্রা অত্যধিক বেশি থাকে। এসব কাঁচা ঘাসের নাইট্রেট বিষক্রিয়ায় ওই গরুগুলো মারা যেতে পারে। তবে গরুর মালিকদের ধারণা, দাকোপ এলাকায় কিছুদিন আগে তরমুজ উঠেছে। তরমুজ চাষে ব্যবহৃত দানাদার কীটনাশক গলে বিষাক্ত হওয়া পানি খেয়ে অথবা কীটনাশকের অব্যবহৃত প্লাস্টিক বোতল বা প্যাকেটে মুখে দিয়ে হয়তো এসব গরু মারা গেছে।

খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পশুপুষ্টি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সবুজ কান্তি নাথ বলেন, মনে হচ্ছে নাইট্রেট বিষক্রিয়ায় গরুগুলো মারা গেছে। কীটনাশকের প্রভাবের কারণে গরুগুলো মারা গেলে উপসর্গ দেখা দেওয়ার পর এত দ্রুত সময়ের মধ্যে মারা যেত না।
কৈলাসগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য অশোক কুমার গাইন বলেন, ছেড়ে খাওয়ালে খামারি লাভবান হন। খরচা কমে। তবে গরুর মালিকেরাও বিলে গরু কম ছাড়ছেন। আপাতত বাড়িতে বেঁধে গরুকে খাওয়াচ্ছেন। একটা গরু মারা গেলে তো অনেক ক্ষতি। তাই কেউ তেমন ঝুঁকি নিতে চাইছেন না।

দাকোপ উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা বঙ্কিম কুমার হালদার প্রথম আলোকে বলেন, ১৭টি গরু মৃত্যুর ঘটনায় রাজধানীর মহাখালীতে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) রাসায়নিক পরীক্ষাগারে ঘাসের নমুনা এরই মধ্যে পাঠানো হয়েছে। মৃত গরুর দেহাংশের নমুনাও সংগ্রহ করা হয়েছে। আগামী রোববার সেগুলোও পরীক্ষাগারে পাঠানো হবে। পরীক্ষার ফলাফল কবে নাগাদ পাওয়া যাবে, সেটা বলা সম্ভব না।

প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘এলাকায় সচেতনতার জন্য মাইকিং করা হচ্ছে। আমরা বৃহস্পতিবার কয়েকটি উঠান বৈঠক করে খামারিদের সচেতনতার বিষয়গুলো জানিয়েছি।’ লাম্পি স্কিন রোগের ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘লাম্পি স্কিন রোগের প্রকোপ আছে। আমরা গোট পক্স টিকা দিয়ে এর চিকিৎসা দিই। তবে সেটাও ঢাকা থেকে অনেক কম আসে। সারা বছরের জন্য পাওয়া গেছে ৮ হাজার। ছাগলের এই টিকা গরুকে দিলে এটা ৪ হাজার গরুকে দেওয়া যায়। দাকোপে ৯৮ হাজার ২৬০টি গরু আছে। গণভাবে দেব সেই সুযোগ নেই।’