সাম্প্রদায়িকতার কথা বলে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে বিকৃত করার চেষ্টা করা হয়েছে। এভাবে মানুষকে বিভ্রান্তের চেষ্টা করা হয়েছে। এখন সময় এসেছে ওই অপশক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর। সঠিক ইতিহাস মানুষের সামনে তুলে ধরার।
আজ খুলনা জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে আয়োজিত বাংলাদেশ ইতিহাস সম্মিলনীর অষ্টম বার্ষিক সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন সংসদ সদস্য ও সাবেক সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। ওই অনুষ্ঠানে তিনি প্রধান অতিথি ছিলেন।
আসাদুজ্জামান নূর বলেন, ইতিহাস এমন একটি বিষয়, যেটি ঘটনা ঘটার পরপরই লেখা হয় না, লেখা হয় ঘটনা ঘটার বহু বছর পর নানান গবেষণার মধ্য দিয়ে। একজন নৃতাত্ত্বিক যেভাবে মাটি খুঁড়ে ইতিহাসকে আবিষ্কার করেন, একজন ইতিহাসবিদও তাঁর গবেষণার মধ্য দিয়ে অতীতকে খুঁড়ে বর্তমানকে আবিষ্কার করেন এবং ভবিষ্যতের নির্দেশনা দেন।
আসাদুজ্জামান নূর ইতিহাসবিদদের উদ্দেশে বলেন, ‘আজকের এই ইতিহাস সম্মিলনীতে দাঁড়িয়ে আমি এ কথাই বলতে চাই, আপনারা যাঁরা আছেন, সবার উচিত সঠিক ইতিহাস লেখা। গ্রহণযোগ্য ইতিহাস তুলে ধরা, যাতে যারা বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করছে, সেই অপশক্তি, যারা একাত্তরে করেছে, যারা সাতচল্লিশে করেছে, সেই শক্তিগুলো মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারে।’
সাবেক ওই মন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের পরিচয় হওয়া উচিত আমরা বাঙালি। এই বাঙালির মধ্যে রয়েছে হিন্দু, মুসলমান, খ্রিষ্টান থেকে শুরু করে সব ধর্মের মানুষ। ধর্মের ভিত্তিতে বা ভাষার ভিত্তিতে কোনো দেশের পরিচিতি হতে পারে না। তা-ই যদি হতো, তাহলে সৌদি আরব থেকে শুরু করে অধিকাংশ মুসলিম দেশের ভাষা হতো আরবি, ধর্ম ইসলাম; কিন্তু ওই সব দেশের মানুষ নিজেদের সৌদি, মিসরীয়, পাকিস্তানি পরিচয় দিতে পছন্দ করেন। তাঁরা মাথা উঁচু করে নিজের দেশের পরিচয় দেন। এটা আসলে সঠিক পরিচয়। এই আত্মমর্যাদা নিয়েই আমাদের মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে। আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি। এখানে সাম্প্রদায়িকতার কোনো স্থান নেই।’
বাংলাদেশ ইতিহাস সম্মিলনীর সভাপতি অধ্যাপক মো. মাহবুবর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন ওই সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী শহীদ কাদের। সম্মানিত অতিথি ছিলেন সংগঠনের উপদেষ্টা সভাপতি অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন।
বাংলাদেশ ইতিহাস সম্মিলনীর সভাপতি অধ্যাপক মো. মাহবুবর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন ওই সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী শহীদ কাদের। সম্মানিত অতিথি ছিলেন সংগঠনের উপদেষ্টা সভাপতি অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে শিল্পকলা একাডেমির চারটি কক্ষে একই সময়ে চারটি কর্ম অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। ওই অধিবেশনগুলোতে মুক্তিযুদ্ধ, গণহত্যাসহ বিভিন্ন বিষয়ে গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বক্তারা।
‘মুক্তিযুদ্ধ, শহীদ ও মুক্তিযুদ্ধের প্রাতিষ্ঠানিক চর্চা’ কর্ম অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ ফায়েক উজ্জামান। সেখানে ‘শহীদ বুদ্ধিজীবী হত্যায় নৃশংসতা ও আজকের বাংলাদেশ’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক আহমেদ মাওলা, ‘মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিনির্মাণে বঙ্গবন্ধু মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশ গবেষণা ইনস্টিটিউটের ভূমিকা’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বঙ্গবন্ধু মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশ গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক মনিরুজ্জামান শাহীন, ‘১৯৭১ সালের গণহত্যার বিচারে দালাল আইন (বিশেষ ট্রাইব্যুনাল) আদেশ, ১৯৭২ এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ আইন-১৯৭৩-এর ভূমিকা: একটি পর্যালোচনা’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সানজিদা মুস্তাফিজ।
‘মুক্তিযুদ্ধে পারবোয়ালিয়া গণহত্যা: ইতিহাস ও তাৎপর্য’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন নওগাঁর মুক্তিযুদ্ধ-গবেষক মোস্তফা আল মেহমুদ। ‘একাত্তরের শহীদ সবুর: যুদ্ধ শেষে যে ছেলেটি বাড়ি ফেরেনি’ প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইতিহাসের খসড়া সমন্বয় সহকারী রশীদ এনাম।
এ ছাড়া ‘গণহত্যা, নির্যাতন ও মুক্তিযুদ্ধ’ শীর্ষক কর্ম অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক এ কে এম জসিম উদ্দিন, ‘মুক্তিযুদ্ধে সংস্কৃতি ও ইতিহাস চর্চা’ শীর্ষক কর্ম অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন শিক্ষাবিদ ও গবেষক অধ্যাপক মোল্লা আমীর হোসেন এবং ‘প্রতিরোধ ও গণমাধ্যম’ শীর্ষক কর্ম অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ বশির আহাম্মদ।