শিক্ষক লাঞ্ছিতের ঘটনায় মুখে কালো কাপড় বেঁধে শিক্ষার্থীদের মৌন মিছিল

শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনায় পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা মুখে কালো কাপড় বেঁধে ক্যাম্পাসে মৌন মিছিল করেছেন। মঙ্গলবার দুপুরেছবি: সংগৃহীত

পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পবিপ্রবি) শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ অব্যাহত রয়েছে। আজ মঙ্গলবার সাধারণ শিক্ষার্থীরা মুখে কালো কাপড় বেঁধে ক্যাম্পাসে মৌন মিছিল করেছেন।

এদিকে শিক্ষক লাঞ্ছিতের ঘটনায় অভিযুক্ত কর্মকর্তার শাস্তির দাবিতে গত রোববার থেকে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন অব্যাহত রেখেছেন শিক্ষকেরা। পাশাপাশি শিক্ষক সমিতির উদ্যোগে আজ মঙ্গলবারও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন তাঁরা।

গত শনিবার রাত নয়টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পোস্ট-হারভেস্ট টেকনোলজি অ্যান্ড মার্কেটিং বিভাগের চেয়ারম্যান সহকারী অধ্যাপক মো. নজরুল ইসলামকে লাঞ্ছিতের ঘটনা ঘটে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তাদের ডাইনিং কক্ষ ‘কৃষিকুঞ্জে’ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও সেকশন অফিসার মো. সামসুল হক ওরফে রাসেল তাঁকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল ও লাঞ্ছিত করেন। এ ঘটনায় বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন শিক্ষক ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা। রোববার অভিযুক্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়ে লাগাতার ক্লাস বর্জন ও মানববন্ধন করে শিক্ষক সমিতি। শিক্ষার্থীরা অভিযুক্ত কর্মকর্তার বিচারসহ অপসারণের দাবিতে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেন এবং প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেন। এ ঘটনায় শিক্ষার্থী-শিক্ষকদের আন্দোলনের মুখে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অভিযুক্ত সামসুল হককে ওএসডি করেছে। এ ছাড়া ঘটনা তদন্তে প্রথমে পাঁচ সদস্যের এবং পরে দুজন বাড়িয়ে সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে তিন কার্যদিবসের মধ্যে তাঁদের তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।

আরও পড়ুন

আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় শিক্ষক সমিতি উদ্যোগে আজ সকাল ১০টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবনের প্রধান ফটকে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন সাধারণ শিক্ষকেরা। এ সময় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক জেহাদ পারভেজের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মো. আসাদুজ্জানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ সমাবেশে বিভিন্ন অনুষদের ডিন, বিভাগীয় চেয়ারম্যানসহ সাধারণ শিক্ষকেরা বক্তব্য দেন। বক্তারা অভিযুক্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নেওয়া পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।

শিক্ষক লাঞ্ছিতের ঘটনার যথাযথ বিচার না পেলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তথা উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন শিক্ষক-ছাত্ররা।

এদিকে বেলা ১১টার দিকে ‘বিভিন্ন অনুষদের সাধারণ শিক্ষার্থী’র ব্যানারে মুখে কালো কাপড় বেঁধে ক্যাম্পাসে মৌন মিছিল হয়েছে। ‘শিক্ষক লাঞ্ছিত, আমরা লজ্জিত’ স্লোগান–সংবলিত ব্যানার নিয়ে শিক্ষার্থীরা মুখে কালো কাপড় বেঁধে টিএসসি চত্বর থেকে মৌন মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাসের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে ক্যাম্পাসে জয় বাংলা পাদদেশে সমাবেশ করেন।

আরও পড়ুন

সমাবেশে শিক্ষার্থীরা বলেন, কারও প্ররোচনায় নয়, শিক্ষকের সম্মান রক্ষায় দায়িত্ববোধ থেকে শিক্ষকদের আন্দোলনে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন তাঁরা। যেকোনো মূল্যেই অভিযুক্ত কর্মকর্তাকে চাকরিচ্যুতিসহ তাঁকে ক্যাম্পাস থেকে বহিষ্কারের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে বলেও ঘোষণা দেওয়া হয়।

শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনায় পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির অবস্থান কর্মসূচি। মঙ্গলবার দুপুরে
ছবি: সংগৃহীত

এদিকে উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শিক্ষক সমিতি ও অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধিদের বৈঠকে বসলেও সেখানে কোনো সমাধান হয়নি। শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক জেহাদ পারভেজ অভিযোগ করেন, অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের উসকানিমূলক বক্তব্যের কারণে তাঁরা সভা থেকে বেরিয়ে আসেন। পরে তাঁরা শিক্ষক-ছাত্র যৌথ সমাবেশে শিক্ষক লাঞ্ছিতের ঘটনার যথাযথ বিচার না পেলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তথা উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন।

আরও পড়ুন

অপর দিকে অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সাইদুল ইসলাম ওরফে জুয়েল অভিযোগ করেন, আসলে বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে। আর এ ঘটনা নিয়ে ছাত্রদের ইন্ধন দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ অস্থিতিশীল করা হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। তদন্তে কর্মকর্তা সামসুল হক দোষী সাব্যস্ত হলে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক, আর যদি দোষী না হন, যাঁরা বর্তমানে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার সন্তোষ কুমার বসু প্রথম আলোকে বলেন, ‘শিক্ষক লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনায় কর্মকর্তা সামসুল হককে অর্পিত দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে বিশেষ দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হয়েছে। ঘটনা রোববার গঠিত তদন্ত কমিটি সোমবার পুনর্গঠন করা হয়েছে। পাঁচ সদস্যের জায়গায় আরও দুজনকে অন্তর্ভুক্ত করে সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আশা করছি, নির্ধারিত সময়ে তাঁরা তাদের তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করবেন।’

আরও পড়ুন