আদালতের স্থিতাবস্থা থাকা ভবনে রাজশাহী বিএনপির কার্যালয়
সম্পত্তির মালিকানা নিয়ে মামলার জেরে আদালতের স্থিতাবস্থা জারি করা ভবনে এবার রাজশাহী জেলা ও মহানগর বিএনপির নতুন কার্যালয় করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার বিকেলে নগরের মালোপাড়ায় সাবেক ব্রিটিশ কাউন্সিল ভবনে আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যালয়ের উদ্বোধন করা হয়। তার আগের দিন ভবনে দলীয় সাইনবোর্ড টাঙানো হয়।
বৃহস্পতিবার দুপুরে মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব মামুন অর রশিদের সঙ্গে এ ব্যাপারে কথা হয়। তিনি স্বীকার করেন, ভবনটি তাঁরা ভাড়া নিয়েছেন। আদালতের স্থিতাবস্থার বিষয়টি জানালে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি আমাদের জানা নেই। এ রকম কোনো তথ্য থাকলে আমাদের দিলে খুব ভালো হয়।’
মামুন অব রশিদ বলেন, ‘আমরা আদালতকে সম্মান করি। কোর্টের কোনো ম্যাটার থাকলে অবশ্যই আমরা ওইটা নেব না। আমরা কোনো ঝামেলায় যাব না। এর আগে একটা ভবন কার্যালয়ের জন্য নেওয়া হয়েছিল। পরে জানা গেল, ওইটা জেলা পরিষদের জায়গার ওপর করা। সঙ্গে সঙ্গে আমরা সেটা ছেড়ে দিয়েছি।’
স্থানীয় বিএনপির দুই নেতা ‘বিরোধপূর্ণ’ ওই সম্পত্তি কিনেছেন। এটি সরকারি সম্পত্তি দাবি করে দুই নেতার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক সিটি মেয়র মিজানুর রহমান (মিনু)। ওই মামলার জেরে আদালত ওই সম্পত্তিতে স্থিতাবস্থা জারি করেন। আদালতে মামলাটি চলমান।
আইনজীবী জমসেদ আলী বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে আদালতের স্থিতাবস্থার আদেশের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। আদেশের কাগজ দেখতে চাইলে তিনি সময় নেন। আজ রোববার দুপুরে আদালত থেকে ওই ভবনের ওপর স্থিতাবস্থা জারির কাগজ তুলে পাঠান। কপিটি বিকেলে বিএনপি নেতা মামুন অর রশিদের কাছে পাঠিয়ে বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, তিনি বিষয়টি বুঝতে পেরেছেন। কমিটির সঙ্গে আলাপ করে সিদ্ধান্ত জানাবেন।
বৃহস্পতিবার বিকেলে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন, পায়রা উড়িয়ে ও ফিতা কেটে কার্যালয়ের উদ্বোধন করেন মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ আলী। তখন সদস্যসচিব মামুন অর রশিদসহ দলীয় নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। সেদিন মুঠোফোনে এরশাদ আলী প্রথম আলোকে বলেছিলেন, আদালতের কোনো আদেশ নেই।
আগে রাজশাহীতে বিএনপির কার্যালয় ছিল নগরের মালোপাড়া এলাকার ভুবনমোহন পার্ক–সংলগ্ন একটি ভবনে। চারতলা ভবনটির দোতলায় দুটি কক্ষ দলীয় কার্যালয় হিসেবে ২০২১ সালের ১ আগস্ট থেকে মাসিক ১২ হাজার টাকা চুক্তিতে ভাড়া নেওয়া হয়েছিল। ২০২২ সালের ৩১ আগস্টে চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। ভবনমালিক আবদুল ওহাব পরের মাসে তাঁদের কক্ষ ছাড়ার জন্য নোটিশ দেন। এরপর উকিল নোটিশ দিলেও বাড়ি না ছাড়লে তিনি মহানগর পুলিশ কমিশনারের কাছে প্রতিকার চান। এরপর গত সেপ্টেম্বরে ভবনটি ছেড়ে দিয়ে নগরের সোনাদিঘি মোড়ের পশ্চিম পাশে সাবেক সংসদ সদস্য এনামুল হকের মালিকানাধীন এনা প্রোপার্টিজের নির্মাণাধীন সিটি সেন্টারের পেছনের ভবনে বিএনপির কার্যালয় করা হয়। তখন ভবনটি জেলা পরিষদের জায়গায় বলে বিতর্ক উঠলে সেটিও ছেড়ে দেওয়া হয়। তার পর থেকে জেলা ও মহানগর বিএনপির কোনো কার্যালয় ছিল না।
বৃহস্পতিবার যে ভবনে কার্যালয়ের উদ্বোধন করা হয়েছে, সেখানে দীর্ঘদিন ব্রিটিশ কাউন্সিলের কার্যক্রম চলেছে। ব্রিটিশ কাউন্সিলের কার্যক্রম বন্ধ হওয়ার পর হাফিজুল ইসলাম নামের এক ব্যবসায়ী ভাড়া নিয়েছিলেন। চার্চ অব বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ ভাড়ার টাকা নিত। জমিটি শহরের প্রাণকেন্দ্র ১২ নম্বর ওয়ার্ডের বোয়ালিয়া মৌজায়, মোট জমির পরিমাণ ছয় কাঠা। এর মধ্যে সাড়ে চার কাঠা জমি চার্চ অব বাংলাদেশের কাছ থেকে কিনে মালিকানার সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দেন মহানগর বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক নজরুল হুদা ও রাজপাড়া থানা বিএনপির আহ্বায়ক মিজানুর রহমান। ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের দুই দিন পরে ওই সাইনবোর্ড টাঙানো হয়।
এই জমির মালিকানায় ভয়াবহ জালিয়াতি হয়েছে দাবি করে আদালতে মামলা করেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান। সেই মামলায় আদালত সম্পত্তিটির ওপরে স্থিতাবস্থা জারি করেন। ১৬ ফেব্রুয়ারি মামলার পরবর্তী ধার্য তারিখ।
জানতে চাইলে জমির দুজন ক্রেতার একজন মিজানুর রহমান বলেন, ‘ষড়যন্ত্র করে মিজানুর রহমান ওই মামলা করেন। আমরা আদালতে আমাদের সমস্ত কাগজপত্র দাখিল করেছি। মামলার পর আদালত ওই জমিতে স্থিতাবস্থা জারি করেছিলেন। কাগজপত্র দেওয়ার পর স্থিতাবস্থা তুলে নিয়েছেন। তবে মামলা এখনো শেষ হয়নি। ছয় মাস পর এই মামলার ধার্য তারিখ পড়েছে।’
মিজানুর রহমান জানান, কয়েক দিন আগে জমির আরেক অংশীদার বিএনপি নেতা নজরুল হুদা তাঁকে জানান যে ভবনটি জেলা ও মহানগর বিএনপির কার্যালয় হিসেবে ভাড়া দিতে চান। তাই তিনি রাজি হয়েছেন। ১ লাখ ৬০ হাজার টাকায় ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ৬ মাসের জন্য ভবনটি ভাড়া দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, তাঁরা দুজনে সাড়ে চার কাঠা জমির মালিক। ভবনের পেছন দিকে এখনো দেড় কাঠা আছে চার্চ অব বাংলাদেশের। বিএনপিকে দলীয় কার্যালয় হিসেবে ভাড়া দেওয়ায় তাঁদেরও কোনো আপত্তি নেই বলে জানিয়েছে।