হবিগঞ্জের হাওরে ইচ্ছেমতো নৌকাভাড়া আদায়, কমছে পর্যটক

পর্যটক কম থাকায় বর্ষা মৌসুমেও ব্যবসা নিয়ে হতাশ নৌকার মালিকেরা। গতকাল রোববার সকালে হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলার কালারডোবা নৌকাঘাটে পর্যটকের অপেক্ষায় নৌকার সারিছবি: প্রথম আলো

বাংলাদেশের হাওরাঞ্চলে পর্যটনের মূল মৌসুম বর্ষাকাল। বিস্তৃত জলরাশির সৌন্দর্য উপভোগ করতে সিলেট অঞ্চলের হাওরগুলোর বুকে ঘুরে বেড়ান হাজার হাজার পর্যটক। তবে গত মৌসুমের তুলনায় এবার হবিগঞ্জের হাওরে পর্যটক কমেছে। এর পেছনে দুটি কারণের কথা বলছেন পর্যটকেরা। একটি হলো এবার হাওরে পানি কম, অন্যটি হলো অতিরিক্ত নৌকাভাড়া।

হবিগঞ্জ সদর উপজেলার ধুলিয়াখাল গ্রামের বাসিন্দা ইমন আহমেদ প্রায় প্রতিবছরই নৌকা ভাড়া করে বন্ধুদের সঙ্গে হাওরে বেড়াতে যান। গতকাল রোববার তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘বর্ষা এলেই আমরা বন্ধুরা মিলে হাওরে যাই। সোমবার বিথঙ্গলের আখড়ায় যাওয়ার জন্য একটি বড় নৌকা ২২ হাজার টাকায় ভাড়া করেছি। অথচ একই আয়তনের একটি নৌকা গত বছর ১৫ হাজার টাকায় ভাড়া নিয়েছিলাম।’

ভাড়া বৃদ্ধির কারণ হিসেবে নৌকার মালিকেরা জ্বালানি তেলের ম্যল্যবৃদ্ধি ও হাওরে পানি কম থাকায় ঘুরপথে গন্তব্যে যাওয়ার কথা বলছেন। বানিয়াচং উপজেলার কালারডোবা এলাকার নৌকার মালিক আইয়ুব আলী বলেন, তাঁর ইঞ্জিনচালিত নৌকায় ৫০ থেকে ৭০ জন যাত্রী উঠতে পারেন। শুক্র ও শনিবার বিথঙ্গলের আখড়ায় যাওয়ার জন্য তিনি ভাড়া নেন ১৫ হাজার টাকা। আবার মালিকের দরগায় গেলেও একই ভাড়া নেন। কারণ, তেলের দাম গত বছরের চেয়ে এ বছর বেড়েছে। তা ছাড়া হাওরে পানি কম থাকায় বেশি ঘোরাঘুরি করে চলাচল করতে হয়। এ কারণে এবার ভাড়া কিছুটা বেশি।

পর্যটক ও স্থানীয় মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বানিয়াচং উপজেলার বিথঙ্গলের আখড়া, মালিক শাহের দরগা (মাজার), বানিয়াচং ও আজমিরীগঞ্জ উপজেলার হাওরের সৌন্দর্য দেখতেই পর্যটকেরা বেশি আসেন। বানিয়াচংয়ের কালারডোবা এলাকা থেকে শতাধিক নৌকা পর্যটকদের হাওরে নিয়ে যায়। ৫০০ বছরে পুরোনো বিথঙ্গলের আখড়া দেখতে পর্যটকদের বেশি আগ্রহ। কালারডোবা থেকে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় বিথঙ্গলের আখড়ায় যেতে সময় লাগে তিন থেকে সাড়ে তিন ঘণ্টা। এ পথে মাঝারি আয়তনের নৌকার মালিকেরা ভাড়া চান ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা। গত বছর ভাড়ার পরিমাণ ছিল ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা। আবার কালারডোবা থেকে ছোট নৌকায় ঘণ্টায় ৬০০ থেকে ৮০০ টাকায় হাওর ঘুরে দেখার সুযোগ আছে।

গতকাল সকালে হবিগঞ্জ-বানিয়াচং সড়কের পাশে গড়ে ওঠা কালারডোবা নৌকাঘাটে গিয়ে দেখা যায়, সারি সারি নৌকা ভিড়ানো। নৌকার মালিকেরা অলস সময় পার করছিলেন। পর্যটক কম থাকায় তাঁরা হতাশার কথা জানান।

পর্যটকেরা জানান, নৌকার মালিকদের মতোই ইচ্ছেমতো অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের সুযোগ হাতছাড়া করছেন না হবিগঞ্জ কালারডোবা নৌকাঘাটে যাতায়াতকারী অটোরিকশাচালকেরা। হবিগঞ্জ শহর থেকে কালারডোবা নৌকাঘাটের দূরত্ব সাত কিলোমিটার। স্বাভাবিক সময়ে এখানে ভাড়া ২০০ থেকে ৩০০ টাকা। কিন্তু শুক্র ও শনিবার এলেই এ ভাড়া হয়ে যায় ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা।

হবিগঞ্জ শহর থেকে হাওর ঘুরতে আসা মিজানুর রহমান বলেন, পরিবারের ৮ থেকে ১০ জন সদস্য নিয়ে তিনি হাওর ও বিথঙ্গল যেতে চান। কিন্তু নৌকাভাড়া দিতে হয়েছে ১৫ হাজার টাকা। আবার অটোরিকশা ও ইজিবাইকের ভাড়া দিতে গিয়েও পড়তে হয়েছে ভোগান্তিতে। ইজিবাইকে ৭ কিলোমিটার রাস্তা পাড়ি দিতে ভাড়া গুনতে হয় ৫০০ টাকা। কোনো উপায় না থাকায় বাধ্য হয়ে বাড়তি ভাড়া দিতে হয়েছে।

রুমি আক্তার এসেছেন হবিগঞ্জ শহর থেকে। তিনি বলেন, ‘হাওর ঘুরতে এসেছেন দুই বন্ধুর সঙ্গে। এক ঘণ্টার জন্য নৌকাভাড়া নিয়েছেন ৮০০ টাকায়। অথচ গত বছর একই হাওরে ৫০০ টাকা ঘণ্টাপ্রতি ভাড়া নিয়েছিলেন। তিনি বলেন, এভাবে বেশি ভাড়া নিলে তো মানুষ আর বেড়াতে আসবে না এসব এলাকায়।’

হবিগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মিন্টু চৌধুরী বলেন, হাওরের সৌন্দর্য উপভোগ করতে দূর থেকে আসা পর্যটকেরা ভোগান্তিতে পড়বেন, এটা তাঁরা চান না। পর্যটকদের জিম্মি করে নৌকার মালিকসহ অটোরিকশাচালকেরা যেন কোনোভাবেই অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করতে না পারেন, সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) নির্দেশ দেওয়া হবে। পর্যটকদের সুবিধার্থে প্রয়োজনে নৌকাভাড়া নির্ধারণ করে দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।