‘চোখের নিমেষেই মানুষগুলো পুড়ে গেল’

গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার তেলিচালা এলাকায় সিলিন্ডার বিস্ফোরণে আগুন লাগার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন জেলা প্রশাসকসহ কর্মকর্তারা। বৃহস্পতিবার সকালেছবি: প্রথম আলো

‘ইফতার নিয়ে ব্যস্ত ছিল সবাই। কিছু বুঝে ওঠার আগেই হঠাৎ “আগুন” “আগুন” আর “বাঁচাও” “বাঁচাও” বলে চিৎকার–চেঁচামেচি। যে যার মতো পানি হাতে দৌড়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করে। চোখের নিমেষেই মানুষগুলো পুড়ে গেল।’ গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার তেলিচালা এলাকার পোশাকশ্রমিক স্বপন সরকার গতকাল বুধবার সেখানে আগুন লাগার ঘটনার বর্ণনা দেন এভাবে।

গতকাল তেলিচালা এলাকায় সিলিন্ডারের ছিদ্র থেকে বের হওয়া গ্যাসে আগুন লেগে অন্তত ৩৬ জন দগ্ধ হয়েছেন। এর মধ্যে ৩৪ জনকে রাজধানীর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়েছে।

এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তেলিচালা এলাকাটি শিল্প–অধ্যুষিত হওয়ায় হাজার হাজার শ্রমিক আশপাশে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকেন। এই সুযোগে স্থানীয় লোকজনের কাছ থেকে জমি ইজারা নিয়ে কোনোরকমে টিনশেডের ঘর তৈরি করে ভাড়া দেন অনেকে। সফিকুল ইসলাম ও সুমন মিয়া নামের দুজন এখানে ঘর বানিয়ে ৬০০টি ভাড়া দেন। একেকটি কক্ষের ভাড়া ৩ হাজার টাকা করে। কক্ষগুলো ছোট, আলাদাভাবে কোনো রান্নাঘর নেই। ফলে অনেকে রাস্তায়, আবার অনেকে নিজের থাকার ঘরেই রান্নার কাজ সারেন। অল্প জায়গায় প্রায় আড়াই হাজার মানুষ বসবাস করায় সেখানে তৈরি হয়েছে ঘিঞ্জি পরিবেশ।

আরও পড়ুন

ওই এলাকায় প্রায় ১২ বছর ধরে বসবাস করেন স্থানীয় এসকে কারখানার শ্রমিক মনোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, মহাসড়কের পাশ ঘেঁষে এসব টিনের ঘরের একেকটি কক্ষ ১০ ফুট বাই ১০ ফুট। গতকাল একটি কক্ষের গ্যাস সিলিন্ডার বিকল হয়ে গ্যাস বের হতে থাকে। তখন ভয়ে গ্যাস সিলিন্ডারটি বাইরে ফেলে দেয় ওই পরিবারের লোকজন। বাইরে রাস্তার পাশে এক নারী লাকড়ির চুলায় রান্নার কাজ করছিলেন, সেখান থেকে আগুন ধরে যায়। উৎসুক লোকজন ও পথচারীরা দগ্ধ হন।

ওই এলাকার আরেক কারখানা শ্রমিক মতিউর রহমান বলেন, গ্যাস সিলিন্ডারে যখন গ্যাস বের হচ্ছিল, তখন তাঁর জামাতা কবির হোসেন ও শিশু নাতি রাইমা আক্তার সেখানে দাঁড়িয়ে দেখছিল। হঠাৎ চুলা থেকে আগুন ধরে গেলে তাঁর জামাতার পুরো শরীর ও নাতির পা পুড়ে যায়। তারা দুজনই ঢাকায় হাসপাতালে ভর্তি।

এ সময় পাশের ঘরের সাত বছরের শিশু আতিয়া আক্তারের ডান পায়ের কিছু অংশ পুড়ে গেছে বলে জানান মা আমেনা বেগম। তাঁকে হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে বাড়িতেই রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘সিলিন্ডার থেকে গ্যাস বের হচ্ছিল, তখন আমার মেয়ে সেখানে দেখতে যায়। হঠাৎ আগুন লেগে গেলে আমার মেয়ের পায়ের কিছু অংশ পুড়ে যায়।’

কোনাবাড়ি এলাকার একটি গোডাউনের শ্রমিক মো. ইয়ামিন হোসেন মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার ভাই শহিদুল, ভাবি নারগিস আক্তার ও ভাতিজা গোলাম রাব্বানী আগুনে ঝলসে গেছে। তাদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। চিকিৎসক বলছেন, তাদের শরীরের বেশির ভাগই নাকি পুড়ে গেছে।’