নির্বাচনী গণসংযোগ করতে নড়াইল-২ (সদরের একাংশ ও লোহাগড়া) আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য ক্রিকেটার মাশরাফি বিন মুর্তজা গ্রাম থেকে গ্রামে ছুটছেন। প্রতিদিন ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত নির্বাচনী আসনের ভোটারদের সঙ্গে কথা বলছেন এবং নৌকায় ভোট দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন।
মাশরাফির নির্বাচনী সফরসঙ্গীরা বলেন, গত ২৪ ডিসেম্বর ঢাকা থেকে নড়াইলে এসে নির্বাচনী গণসংযোগ শুরু করেন তিনি। পাঁচ দিন পর থেকে তাঁর কণ্ঠস্বরে সমস্যা দেখা দেয়। গত ১০ দিনে তিনি একেকটি ইউনিয়নের অধিকাংশ গ্রাম, বাজার ও মোড়ে মোড়ে গিয়ে ভোটারদের সঙ্গে দেখা করেছেন। পথসভায় বক্তব্য দিচ্ছেন। সবাইকে ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন। নিজের জন্য ভোট চাচ্ছেন।
মাশরাফির একান্ত সচিব জামিল আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, নির্বাচনী গণসংযোগ করতে প্রতিদিন ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত মোটরসাইকেলে গ্রাম থেকে গ্রামে ছুটছেন মাশরাফি। দিনে ১৫ থেকে ২০টি পথসভায় বক্তব্য দিচ্ছেন। বক্তব্য দেওয়ার কারণে এবং ঠান্ডায় তাঁর কণ্ঠস্বরের অবস্থা খারাপ। এ ছাড়া আগে থেকেই ডান হাঁটুতে পাওয়া আঘাতের ব্যথা বেড়েছে। সেখানে অস্ত্রোপচার করতে হবে। নির্বাচনী ব্যস্ততার কারণে অস্ত্রোপচার করতে পারছেন না তিনি।
নির্বাচনী গণসংযোগে গিয়ে বিভিন্ন পথসভায় প্রায় একই ধরনের বক্তব্য দিচ্ছেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। মূলত ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন তিনি। সেই সঙ্গে বলছেন, ‘আপনাদের সন্তান ও নাতি-পুতিদের ভালো জায়গায় নিয়ে যেতে চাই। তাদের জন্য কাজ করছি। আগামী ৭ তারিখ পর্যন্ত আপনারা আমার দায়িত্ব নেন। ৮ তারিখ থেকে আপনার সন্তানদের ও আপনাদের দায়িত্ব আমার। আগামী প্রজন্মের ভবিষ্যতের জন্য ভোটকেন্দ্রে যাবেন। আপনাদের মূল্যবান ভোটটি দেবেন। আমি আপনাদের জন্য কাজ করেছি, তাই আমি নিশ্চিত, ভোট আমাকেই আপনারা দেবেন।’
ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে মাশরাফি বিন মুর্তজা বলেন, ‘আপনারা যদি ভোটকেন্দ্রে না যান, ভুল করবেন। আমার মতো মাশরাফিরা আপনাদের পাশে আসবে না। আমি নড়াইলের সন্তান। আমার একা ভালো থাকা নয়, সবাইকে ভালো রাখা আমার দায়িত্ব। যে কাজ করে তাঁর ভুল হয়। যে কাজ করে না, সে সমালোচনা করে।’
নিজের শারীরিক কষ্টের কথা উল্লেখ করে মাশরাফি আরও বলেন, ‘এলাকার সেবা করতে গিয়ে নিজের শরীরের ওপর কষ্ট দিচ্ছি। আরাম-আয়েশ ত্যাগ করেছি। শীতের পিঠার বদলে ধুলো খেয়ে বেড়াচ্ছি। অথচ পরিবার–পরিজন নিয়ে দেশে-বিদেশে ঘুরে বেড়াতে পারতাম। আয়েশি জীবন ভোগ করতে পারতাম। আমি এসেছি, যাঁরা মানুষকে শোষণ করেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে। আমি চ্যালেঞ্জ নিয়েছি আগামী প্রজন্ম বাঁচাতে।’
মাশরাফি তাঁর বক্তব্যে ভোটারদের কাছে প্রশ্ন করেন, ‘আমি কারও কাছ থেকে ১০টি টাকা নিয়েছি? বাসায় পুলিশ পাঠিয়েছি? কাউকে ধাওয়া দিয়েছি, মেরেছি? তারপরও চায়ের দোকানে বসে কেউ কেউ প্রোপাগান্ডা ছড়ান। আমার যদি অভাব থাকত, এখানে আসতাম না। ক্রিকেট খেলতাম। আমি জানি সব মানুষ সবাইকে পছন্দ করবে না। মানুষ তখন হেরে যায়, যখন বিবেকের কাছে হেরে যায়। আমি আমার বিবেকের কাছে ঠিক আছি। আমি আগামী প্রজন্মের জন্য একটি সুন্দর সমাজ গড়তে চ্যালেঞ্জ নিয়েছি। অনেক বাধাও টপকাচ্ছি।’
নির্বাচনে মাশরাফির প্রতিদ্বন্দ্বী আছেন ছয়জন। এর মধ্যে দুজন স্বতন্ত্র। এ ছাড়া বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয় পার্টি, ইসলামী ঐক্যজোটের (আইওজে) ও গণফ্রন্টের প্রার্থী আছেন।