রাজশাহীতে ‘আলোর পাঠশালায়’ স্কাউট প্রশিক্ষণ ক্যাম্পের আনন্দমুখর সমাপ্তি
রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে তিন দিনের স্কাউট প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে আনন্দ উদ্যাপন শেষে বাড়ি ফিরেছে ‘আলোর পাঠশালার’ শিক্ষার্থীরা। গত বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে বাবুডাইং এলাকায় স্কুলটির প্রাঙ্গণে এ আয়োজন করা হয়। আজ শনিবার দুপুরে পতাকা নামানোর মধ্য দিয়ে ক্যাম্পের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।
আয়োজকেরা জানান, বাড়ি ফেরার আগে শিক্ষার্থীদের শারীরিক কসরত করানো হয়। এরপর সমাপনী সমাবেশে শিক্ষার্থীদের দেওয়া হয়েছে বিভিন্ন দিকনির্দেশনাও। এতে শিক্ষার্থীদের স্কাউট আইন, দেশপ্রেম, সততার সঙ্গে জীবন পরিচালনা, বড়দের শ্রদ্ধা-সম্মান প্রদর্শন ও ছোটদের ভালোবাসা, আত্মমর্যাদার সঙ্গে কাজ ইত্যাদি বিষয় উঠে আসে।
এর আগে গতকাল শুক্রবার রাতে ক্যাম্প ফায়ারের আগুনের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সাংস্কৃতিক আয়োজন উষ্ণতা ছড়ায় সবার মনে। এ আয়োজনে তীব্র শীতকে উপেক্ষা করে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে উদ্যাপন মেতে ওঠে স্থানীয় গ্রামবাসী।
বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক আলী উজ্জামান নূর জানান, প্রথম আলো ট্রাস্ট পরিচালিত বাবুডাইং ‘আলোর পাঠশালার’ শিক্ষার্থীদের স্কাউট শিক্ষায় উদ্বুদ্ধকরণ ও সামাজিক ভীতি দূর করতে তিন দিনব্যাপী এ ক্যাম্পের আয়োজন করা হয়। গত বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে আজ দুপুর পর্যন্ত (২৩ থেকে ২৫ জানুয়ারি) অনুষ্ঠিত এ ক্যাম্পে ১০০ শিক্ষার্থী অংশ নেয়। ক্যাম্পে শিক্ষার্থীদের নিয়ে হিল ট্রেকিং, স্মৃতি পরীক্ষা, স্পাইডার জাম্প, পোল মাঙ্কি ব্রিজ অতিক্রম, রোপ মাঙ্কি ব্রিজ অতিক্রম, এরিয়েল রানওয়ে, সুইং স্টেপ, ভ্যালি ক্রসিং, নেট ক্রলিং, কমান্ডো ব্রিজ, তিরনিক্ষেপ, হাঁড়ি ভাঙা চ্যালেঞ্জের আয়োজন করা হয়। এ ছাড়া ক্যাম্প ফায়ার ও তাঁবু জলসার আয়োজনও ছিল।
গত বৃহস্পতিবার দুপুরে কাব ও স্কাউট পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে এ ক্যাম্পের উদ্বোধন করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. সুজারুদ্দিন। উদ্বোধনীর পর সমাবেশ হয়। পরে শিক্ষার্থীদের নিয়ে বিভিন্ন উপদলে তিরনিক্ষেপ, হাঁড়ি ভাঙা খেলা হয়। সন্ধ্যায় ‘তাঁবু কলা’ বিষয়ে পাঠদান করা হয়। এ সময় শিক্ষার্থীরা উপদলভিত্তিক কাপড় দিয়ে আটটি তাঁবু টানিয়ে নিজেদের আবাসন তৈরি করে। এ ছাড়া সব উপদলে চলে রান্নার কাজ। তাঁবু জলসার মহড়া শেষে ঘুমাতে যায় শিক্ষার্থী।
পরদিন শুক্রবার সকালে শারীরিক কসরতের পর নিজ নিজ তাঁবুতে গিয়ে রান্নার আয়োজন করে উপদলগুলো। খাবার শেষে তাঁরা স্পাইডার জাম্প, পোল মাঙ্কি ব্রিজ, রোপ মাঙ্কি ব্রিজ, এরিয়েল রানওয়ে, সুইং স্টেপ, ভ্যালি ক্রসিং, নেট ক্রলিং, কমান্ডো ব্রিজসহ বিভিন্ন চ্যালেঞ্জে অংশ নেয়। দুপুরে খাবার বিরতির আসে ‘হিল ট্রেকিংয়ের’ পালা। সবাই নিয়ম মেনে এতে অংশ নেয়। ট্রেকিংয়ে শিক্ষার্থীরা শর্ষের খেত, ছোট ঝোপঝাড়, বন, টিলা, খাঁড়ি, ফসলি জমির আল পাড়ি দেয়। এ সময় তাদের প্রায় ছয় কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হয়।
ট্রেকিং শেষে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে উপদলভিত্তিক স্মৃতি পরীক্ষার আয়োজন করা হয়। এতে ট্রেকিং পথে শিক্ষার্থীরা যা দেখেছে, তা যাচাই করা হয়। এরপর তাদের বিপৎকালীন অগ্নিকাণ্ড মোকাবিলা, দুর্গতদের উদ্ধার ও আগুন নেভানোর কৌশল শেখানো হয়। এসব কার্যক্রম দেখতে ভিড় করেন এলাকার বাসিন্দা ও অভিভাবকেরা।
এসব চ্যালেঞ্জ চলাকালে ক্যাম্প পরিদর্শনে আসেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার নবাবগঞ্জ সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক শফিউল আজম, মহাডাঙ্গা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আনোয়ার হোসেন, বাবুডাইং আলোর পাঠশালার অবসরপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক কানাই চন্দ্র দাস, আন্তর্জাতিক সংস্থা ফুড ফর দ্য হাংরির চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার ঝিলিম কমিউনিটির চাইল্ড প্রমোটর রেনু হেমব্রম প্রমুখ।
সন্ধ্যার পর জমকালো আয়োজনের মধ্য দিয়ে তাঁবু জলসা ও ক্যাম্প ফায়ার হয়। তাঁবু জলসার উদ্বোধন করেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলী উজ্জামান নূর। এসএমসি কমিটির সহসভাপতি কার্তিক টুডুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন গ্রামের মোড়ল সুরেন কোল টুডু, চানু হাসদা, গেনোদা মুরমু, প্রশিক্ষণার্থী শিক্ষার্থী মরিয়ম খাতুন প্রমুখ। এরপর সাংস্কৃতিক পরিবেশনা নিয়ে হাজির হয় শিক্ষার্থীরা। পরদিন সকালে পুনরায় শারীরিক কসরত প্রদর্শন ও সমাবেশে অংশ নেয় তারা।
পুরো ক্যাম্প পরিচালনা ও সফল করতে বিদ্যালয়ের সব শিক্ষককে সহায়তা করেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ মুক্ত রোভার স্কাউট গ্রুপের রোভার স্কাউট লিডার হেলাল উদ্দিন শেখ নাসিম, রোভার মেহেদী হাসান, নাঈম ইসলাম, শাহাদাৎ হোসেন, সাব্বির আহমেদ ও মাহফুজ রহমান।