কেমন আছেন, জিজ্ঞাসা করতেই হাউমাউ করে কেঁদে উঠলেন বৃদ্ধ ওয়াহেদ

দিনাজপুরের বিরামপুর পৌরশহরের হাবিবপুর বাজারে একটি দোকানঘরে ঠাঁই হয়েছে বৃদ্ধ আবদুল ওয়াহেদের
ছবি: প্রথম আলো

পুরোনো নড়বড়ে কাঠের চৌকিতে শুয়ে আছেন ৭০ বছর বয়সী আবদুল ওয়াহেদ। জীর্ণশীর্ণ শরীরের নিচে পলিথিনের বস্তার তৈরি পাতলা বিছানা। মাথার নিচে নোংরা একটি বালিশ। মাথার পাশে পানির পুরোনো বোতল, দুটি প্লাস্টিকের মগ, খাবারের শূন্য প্লেট ও লাঠি। জীবন সায়াহ্নে এসে এসব এখন তাঁর সহায়-সম্বল। চাচা কেমন আছেন, জিজ্ঞাসা করতেই হাউমাউ করে কেঁদে উঠলেন আবদুল ওয়াহেদ।

এক মাস ধরে দিনাজপুরের বিরামপুর পৌরসভার হাবিবপুর বাজারে নতুন তৈরি একটি খোলা দোকানঘরে এভাবেই আছেন আবদুল ওয়াহেদ। বাড়ি বিরামপুর উপজেলার মুকুন্দপুর ইউনিয়নের ভেলারপাড় গ্রামে। স্ত্রী মারা যাওয়ার পর আপনজন কেউ তাঁর পাশে নেই। একমাত্র ছোট ভাই পীর মোহাম্মদ দুই যুগ আগে নিজ এলাকা ছেড়ে পাশের ইউনিয়নের বিনাইল গ্রামে বিয়ে করে সেখানেই স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। তিনিও বড় ভাইয়ের তেমন খোঁজখবর রাখেন না বলে জানালেন স্থানীয় লোকজন।

হাবিবপুর গ্রামের বাসিন্দা বেলাল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, মাসখানেক আগে আবদুল ওয়াহেদ বাজারের বিভিন্ন দোকানের বারান্দায় অসুস্থ অবস্থায় শুয়ে থাকতেন। সেখানকার স্থানীয় যুবক জীবন, শাহাদাত হোসেন, আতিকুর রহমান ও মিজানুর রহমান মিলে তাঁকে এই জায়গায় থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। তিনি মাঝেমধ্যে বাড়ি থেকে খাবার এনে তাঁকে দেন। ওই যুবকরাও বাড়ি বা দোকান থেকে খাবার এনে তাঁকে খেতে দেন। আবদুল ওয়াহেদ এখন একলা মানুষ। তাঁর অনেক বয়স হয়েছে। তাঁর পরিবারের কেউ নেই। তাঁর জীবনে এখন একটি নিরাপদ থাকার ব্যবস্থা দরকার; যেখানে তাঁর থাকা, খাওয়া, চিকিৎসা ও দেখভালের ব্যবস্থা থাকবে।

১০ আগস্ট হাবিবপুর বাজারে গিয়ে জানা গেল, আবদুল ওয়াহেদ দেড় বছর আগে প্যারালাইসড হয়ে যান। চিকিৎসার পর এখন লাঠিতে ভর দিয়ে দাঁড়াতে পারলেও স্পষ্ট করে কথা বলতে পারেন না।

১ নম্বর মুকুন্দপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আবদুল হালিম প্রথম আলোকে বলেন, আবদুল ওয়াহেদের বিষয়ে উপজেলা সমাজসেবা দপ্তরে যোগাযোগ করেছেন। তাঁর নামে বয়স্ক ভাতার কার্ড আছে। তবে তাঁর এ ভাতার টাকা কার মুঠোফোন নম্বরে যায়, তিনি তা জানেন না। সমাজসেবা দপ্তরে কথা বলে মুঠোফোন নম্বরটি সংগ্রহ করে তা জানার চেষ্টা করবেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নুজহাত তাসনীম প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিষয়টি আপনার মাধ্যমে জানলাম। বৃদ্ধ আবদুল ওয়াহেদের জন্য এখন নিরাপদ থাকার ব্যবস্থা ও শারীরিক যত্ন দরকার। তাঁকে কোনো ভালোমানের বৃদ্ধাশ্রমে রাখা যায় কি না, সে ব্যাপারে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর তাঁর নামে থাকা বয়স্ক ভাতার কার্ডের টাকার বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে তাঁকে সেই টাকা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।’