ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি হাবিবুল্লাহ ভূইয়া
ছবি: সংগৃহীত

ব্যায়ামাগারে দুই নারীর গোপনে ভিডিও ধারণসহ তাঁদের আটকে রেখে মারধরের ঘটনায় জড়িত অভিযোগে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি হাবিবুল্লাহ ভূঁইয়াকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে জেলা ছাত্রলীগ। রোববার রাতে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রবিউল হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শাহাদাৎ হোসেন স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়।

আরও পড়ুন

আপত্তিকর ভিডিও ধারণের প্রতিবাদ করায় ছাত্রলীগ নেতার নেতৃত্বে তিনজনকে পেটানোর অভিযোগ

হাবিবুল্লাহ জেলা শহরের মৌলভীপাড়ার ‘বিএস ফিটনেস ক্লাব’ নামের একটি ব্যায়ামাগারের পরিচালক। তাঁকে সাময়িক বহিষ্কারের পাশাপাশি সংগঠন থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করার জন্য কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের কাছে কেন সুপারিশ করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে। এর জবাব লিখিত আকারে আগামী সাত কার্যদিবসের মধ্যে জেলা ছাত্রলীগের দপ্তর সেলে সশরীর উপস্থিত হয়ে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত বুধবার সন্ধ্যায় জেলা শহরের মৌলভীপাড়ার ওই ব্যায়ামাগারে (জিম) আপত্তিকর ভিডিও ধারণের প্রতিবাদ করায় ছাত্রলীগ নেতা হাবিবুল্লার নেতৃত্বে এক গৃহবধূ, তাঁর বোনসহ তিনজনকে আটকে রেখে মারধর করেন। পরে ৯৯৯-এ ফোন পেয়ে তাঁদের উদ্ধার করে পুলিশ। পরে ঘটনাস্থল থেকে ব্যায়ামাগারের পরিচালক হাবিবুল্লাহ ভূঁইয়া, ওই ব্যায়ামাগারের ফিটনেস প্রশিক্ষক মিতু আক্তার ও তাঁর সহযোগী মো. সাইমকে আটক করে পুলিশ।

ঘটনার দিন রাতেই ওই গৃহবধূর ভাশুর আইনজীবী আটক তিনজনসহ চারজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও আট-নয়জনকে আসামি করে সদর থানায় একটি মামলা করেন। ওই মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। এদিকে ঘটনার পর থেকে ছাত্রলীগ নেতারটিসহ দুটি ব্যায়ামাগার বন্ধ করা হয়েছে।

আহত ব্যক্তিদের পরিবার সূত্রে জানা যায়, গৃহবধূ ও তাঁর বোন ওই ব্যায়ামাগারে নিয়মিত ব্যায়াম করেন। সেখানে মেয়েদের ব্যায়াম করার আলাদা ব্যবস্থা রয়েছে। সেখানে পুরুষদের যাওয়ার অনুমতি নেই। তাঁরা নিশ্চিত হন মিতু গোপনে তাঁদের ভিডিও ধারণ করছেন। গত বুধবার বিকেলে ওই গৃহবধূ ও তাঁর বোন ভিডিও ধারণের বিষয়ে মিতুকে জিজ্ঞেস করেন। এ নিয়ে মিতুর সঙ্গে তাঁদের বাগ্‌বিতণ্ডা হয়।

মিতু একপর্যায়ে বিষয়টি হাবিবুল্লাহ ভূঁইয়াকে জানান। খবর পেয়ে হাবিবুল্লাহ ব্যায়ামাগারে পৌঁছে মিতুকে সঙ্গে নিয়ে ওই দুই বোনের কাছে যান। এ সময় মিতু চুলের মুঠি ধরে ওই গৃহবধূ ও তাঁর বোনকে মারধর শুরু করেন। খবর পেয়ে তাঁদের বাঁচাতে এক স্বজন ব্যায়ামাগারের ভেতরে যান। হাবিবুল্লাহ ও তাঁর সহযোগীরা লোহার রড দিয়ে ওই স্বজনকেও বেধড়ক মারধর করে আটকে রাখেন। বিষয়টি জানতে পেরে তাঁদের পরিবারের লোকজন ঘটনাস্থলে পৌঁছান। কিন্তু ফটক তালাবদ্ধ থাকায় তাঁরা কেউই ব্যায়ামাগারের ভেতরে ঢুকতে পারেননি।

কয়েকজন ভিডিও করে ঘটনাটি ফেসবুকে শেয়ার দেন। গৃহবধূর ভাশুর এবং মো. ফয়সাল নামের এক ব্যক্তি ৯৯৯–এ ফোন করে পুলিশের সহায়তা চান। পাশাপাশি গৃহবধূর ভাশুরসহ অন্যান্য লোকজন ঘটনাস্থল থেকে ফোন করে বিষয়টি সদর থানা–পুলিশকে জানান। সন্ধ্যায় সদর থানা–পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে মারধরের শিকার ওই দুই বোন ও আহত স্বজনকে উদ্ধার করে। সেই সঙ্গে হাবিবুল্লাহ, মিতু ও সাইমকে আটক করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। গুরুতর আহত হওয়ায় ওই গৃহবধূ, তাঁর বোন ও আহত স্বজন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নেন।

এসব ঘটনার জের ধরে ছাত্রলীগ থেকে হাবিবুল্লাহ ভূঁইয়াকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। এ বিষয়ে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রবিউল হোসেন জানান, সংগঠনের নীতি ও আদর্শ পরিপন্থী কার্যকলাপে লিপ্ত থাকার অভিযোগে হাবিবুল্লাহকে সাময়িক বহিষ্কারসহ স্বশরীরের সাত দিনের মধ্যে কারণ দর্শানোর জবাব দিতে বলা হয়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে রবিউল বলেন, ‘কারাগারে থাকায় ছাত্রলীগের ওই নেতা সাত দিনের মধ্যে সশরীর উপস্থিত হয়ে কারণ দর্শানোর জবাব দেওয়ার জন্য কোনো প্রতিনিধির মাধ্যমে জেলা ছাত্রলীগের কাছে সময় চাইবেন। এমনটি করলে বিষয়টি আমরা বিবেচনা করব।’