ছিলেন ছাত্রলীগকর্মী, এখন শিবিরের হল সভাপতি

আবরার ফারাবীতাঁর ফেসবুক আইডি থেকে

ছাত্রলীগের রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন। আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাদের নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রায়ই দিতেন প্রশংসামূলক পোস্ট। করতেন জামায়াত-শিবিরের সমালোচনা। তিনিই এখন রয়েছেন শিবিরের নেতৃত্বে।

এই শিবির নেতার নাম আবরার ফারাবী। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সোহরাওয়ার্দী হলের সভাপতি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে বিভিন্ন সময়ে দেওয়া তাঁর কিছু পোস্টের স্ক্রিনশট সম্প্রতি ছড়িয়ে পড়েছে। অনেকেই বিষয়টি নিয়ে তাঁর সমালোচনা করেছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আবরার ফারাবী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক আরবি বিভাগের স্নাতকোত্তর শ্রেণির শিক্ষার্থী। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের উপপক্ষ ভার্সিটি এক্সপ্রেসের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ওই উপপক্ষের নেতা-কর্মীরা চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী হিসেবে পরিচয় দিতেন। আবরার ফারাবী নিজেও আ জ ম নাছির উদ্দীনের সঙ্গে ছবি তুলে ফেসবুকে নিজ আইডিতে পোস্ট করেছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আবরার ফারাবী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক আরবি বিভাগের স্নাতকোত্তর শ্রেণির শিক্ষার্থী। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের উপপক্ষ ভার্সিটি এক্সপ্রেসের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ওই উপপক্ষের নেতা-কর্মীরা চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী হিসেবে পরিচয় দিতেন। আবরার ফারাবী নিজেও আ জ ম নাছির উদ্দীনের সঙ্গে ছবি তুলে ফেসবুকে নিজ আইডিতে পোস্ট করেছেন।

জানতে চাইলে আবরার ফারাবী বলেন, ‘আমি ক্যাম্পাসে যখন আসি, তখন থেকে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সক্রিয় হয়েছিলাম। হলে থাকতে গেলে তখন ছাত্রলীগ করা লাগত, তাই ছাত্রলীগ করেছি।’ ওই সময় ছাত্রলীগ নেতাদের চাপের মুখে এসব পোস্ট দিয়েছেন দাবি করে আবরার ফারাবী বলেন, তিনি ২০২২ সালের জুনে ছাত্রলীগের রাজনীতি থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন। এর পরের বছর ছাত্রশিবিরের রাজনীতিতে যুক্ত হন তিনি।

আমি ক্যাম্পাসে যখন আসি, তখন থেকে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সক্রিয় হয়েছিলাম। হলে থাকতে গেলে তখন ছাত্রলীগ করা লাগত, তাই ছাত্রলীগ করেছি।
আবরার ফারাবী, সভাপতি, সোহরাওয়ার্দী হল শাখা ছাত্রশিবির

যা ছিল ফেসবুক পোস্টে

ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া স্ক্রিনশটগুলোতে দেখা যায়, দুটি পোস্টে আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা ও দলের চট্টগ্রাম নগর শাখার সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন আবরার ফারাবী। আরেকটি পোস্টে তিনি শেখ হাসিনাকে ‘গণতন্ত্রের মানসকন্যা, মাদার অব হিউম্যানিটি’ বলে সম্বোধন করেছেন। বিভিন্ন উপাধিতে সম্বোধন করেছেন আ জ ম নাছির উদ্দীনকেও।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রক্টর রবিউল হাসান ভূঁইয়াকে নিয়ে ২০২২ সালের ১৪ নভেম্বর একটি পোস্ট দেন তিনি। এতে লেখেন—‘চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের দুঃসময়ের ত্যাগী নেতা ড. রবিউল হাসান ভূঁইয়া স্যার। শিবিরের মিথ্যা মামলা কাঁধে নিয়ে জেল খেটেছেন দীর্ঘদিন। শিবিরের মিনি ক্যান্টনমেন্টে প্রগতির পতাকা উড়ানোর জন্য ওনারা জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করেছেন। ছাত্রলীগ করার অপরাধে জীবনের অনেক বসন্ত হারিয়েছেন। আজ যখন দেখি ওনার মতো ত্যাগী মানুষের বিরুদ্ধে কেউ কথা বলে, তখন কষ্ট লাগে। এ জন্য কি ওনারা শিবিরের সাথে যুদ্ধ করেছিল? মনে রাখবেন, রবিউল হাসান ভূঁইয়া স্যাররা আমাদের সম্পদ।’

চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনের সঙ্গে আবরার ফারাবী
ছবি: তাঁর ফেসবুক আইডি থেকে

২০২১ সালের ২৯ ডিসেম্বর ফেসবুকে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে জামায়াত-শিবিরকে খুনি সম্বোধন করেন আবরার ফারাবী। তিনি লেখেন, ‘২০০১ সালের ২৯ ডিসেম্বর খুনি জামায়াত-শিবিরের হাতে নির্মমভাবে নিহত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি, জনপ্রিয় ছাত্রনেতা শহীদ আলী মরতুজা চৌধুরী ভাইয়ের ২০তম মৃত্যুবার্ষিকীতে গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি। দল টানা ক্ষমতায় থাকার পরও দুঃসময়ে জীবন দেওয়া একজন জনপ্রিয় ছাত্রনেতার নির্মম হত্যাকাণ্ডের বিচার এখনো না পাওয়াটা অত্যন্ত বেদনাদায়ক।’

ফেসবুকে তাঁর পোস্টের স্ক্রিনশট ছড়িয়ে পড়া এবং এ সমালোচনার বিষয়ে ছাত্রশিবিরের পক্ষ থেকে তাঁকে কিছু বলা হয়েছে কি না, তা জানতে চাইলে আবরার ফারাবী বলেন, ‘আমাকে শুধু বলা হয়েছে-তুমি তো স্বীকার করেছিলে ছাত্রলীগ করতে, কিন্তু পোস্টগুলো ডিলিট করোনি কেন?’

জানতে চাইলে ছাত্রশিবির চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সেক্রেটারি মোহাম্মদ পারভেজ প্রথম আলোকে বলেন, ‘কোটা সংস্কার আন্দোলনসহ সব আন্দোলনে ফারাবী যুক্ত ছিলেন। তিনি সোহরাওয়ার্দী হলের শিবিরের কার্যক্রমের সঙ্গেও আগে থেকেই যুক্ত। পরে সভাপতি হয়েছেন, সেটি হলে ছাত্রলীগের নিয়ন্ত্রণ থাকার সময়েই।’

তবে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের ছাত্রশিবির আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সভাপতি আলাউদ্দিন মহসিন। তিনি বলেন, ছাত্রলীগের রাজনীতিতে যাঁরা জড়িত ছিলেন, ক্ষমতার পালাবদলের সঙ্গে তাঁদের আশ্রয় দিয়ে ছাত্রশিবির নিজেদের নেতা-কর্মী বাড়ানোর পরিকল্পনা নিয়েছেন।