শরীয়তপুরে মুক্তিপণের টাকা না পেয়ে অপহৃত শিশুকে হত্যা, আটক ৩

হৃদয় খান
ছবি: সংগৃহীত

শরীয়তপুর জেলা শহরের উপকণ্ঠের একটি ইটভাটা থেকে হৃদয় খান নিবিড় (১১) নামের এক শিশুর লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। আজ মঙ্গলবার ভোরে পালং মডেল থানার পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে।

সদর উপজেলার খিলগাঁও এলাকার মনির খানের ছেলে হৃদয় গতকাল সোমবার বিকেল থেকে নিখোঁজ ছিল। দুর্বৃত্তরা তাকে অপহরণ করে ৫০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেছিল। টাকা না পেয়ে তাকে হত্যা করেছে বলে জানায় পুলিশ। এ ঘটনায় জড়িত অভিযোগে পুলিশ তিন ব্যক্তিকে আটক করেছে।

পালং মডেল থানা সূত্র জানায়, সদর উপজেলার ডোমসার ইউনিয়নের খিলগাঁও এলাকার মনির খান মালয়েশিয়াপ্রবাসী। তাঁর বড় ছেলে হৃদয় খান শহরের শিশুকানন কিন্ডারগার্টেন স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র ছিল। গতকাল দুপুরে মা নিপা আক্তারের সঙ্গে স্কুল থেকে বাড়িতে ফেরে হৃদয়। দুপুরের খাবার খেয়ে সে বাড়িতে খেলছিল। বিকেলের দিকে দুর্বৃত্তরা তাকে অপহরণ করে। সন্ধ্যার দিকে নিপা আক্তারের মুঠোফোনে ফোন করে ছেলেকে অপহরণের কথা জানায় দুর্বৃত্তরা। তখন তাকে মুক্ত করে দেওয়ার জন্য ৫০ লাখ টাকা দাবি করা হয়।

নিপা আক্তার ঘটনাটি তাঁর স্বজনদের জানান। তাঁরা পালং মডেল থানায় অভিযোগ করেন। পুলিশ ওই মুঠোফোন নম্বরের সূত্র ধরে তিন ব্যক্তিকে আটক করে। আটক ব্যক্তরা হলেন সিয়াম, তুহিন গাজী ও শাকিল গাজী। তাঁদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী পুলিশ মনির খানের বাড়ির পাশের একটি ইটভাটার গর্ত থেকে হৃদয়ের লাশ উদ্ধার করে।

হৃদয়ের লাশ উদ্ধারের পর স্বজনদের আহাজারি। আজ মঙ্গলবার সকালে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের মর্গের সামনে
ছবি: প্রথম আলো

হৃদয়ের চাচা নাসির খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের সন্তানকে দুর্বৃত্তরা টাকার জন্য অপহরণ করে হত্যা করবে, তা ভাবতে পারিনি। ফোন করে টাকা চেয়ে আর সময় দেয়নি। পুলিশ নিয়ে আমরা ছেলেকে জীবিত উদ্ধারের চেষ্টা চালাই। কিন্তু তার প্রাণহীন দেহটা উদ্ধার করেছি।’ ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চান তিনি।

শিশুকানন কিন্ডারগার্টেনের প্রধান শিক্ষক বাদল পাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘শরীয়তপুর একটি শান্ত শহর। এখানে অপহরণ করে শিশু হত্যার ঘটনা আমাদের উদ্বিগ্ন করেছে। হৃদয়ের মত মেধাবী ও ভদ্র ছেলের এমন করুন পরিণতি আমরা মানতে পারছি না।’

পালং মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আক্তার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, এক শিশুকে অপহরণ করে ৫০ লাখ টাকা মুক্তিপণ চেয়েছিল দুর্বৃত্তরা। এমন খবর পেয়ে প্রযুক্তির মাধ্যমে অপহরণে জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত করে আটক করা হয়। ততক্ষণে তাঁরা শিশুটিকে হত্যা করেছেন। মাথায় আঘাত করে ও গলাটিপে তাকে হত্যা করা হয়েছে। ওই ঘটনায় আরও কারা জড়িত, তা শনাক্তের কাজ চলছে।