ভোট দিতে গিয়ে ইউএনওর সঙ্গে বাদানুবাদে জড়ালেন মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ

জেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোট দিতে গিয়ে ইউএনওর সঙ্গে বাদানুবাদে জড়ান সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ। সোমবার সকালে জিলা স্কুল ভোটকেন্দ্রে
ছবি: ভিডিও থেকে সংগৃহীত

বরিশাল জেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোট দিতে গিয়ে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মনিরুজ্জামানের সঙ্গে বাদানুবাদে জড়ালেন বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ। মেয়রের নিজের ফেসবুক পেজ থেকে সরাসরি সম্প্রচার করা এমন একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে।

আজ সোমবার সকাল সোয়া নয়টার দিকে মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ ভোট দেওয়ার জন্য বরিশাল জিলা স্কুল কেন্দ্রে যান। এ সময় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি কে এম জাহাঙ্গীর, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান তাঁর সঙ্গে যান। ভোটকক্ষের দরজায় একজন কর্মকর্তা মেয়র সাদিক আবদুল্লাহর সঙ্গে কুশল বিনিময়  করেন এবং একে একে ভোটকক্ষে প্রবেশের অনুরোধ করেন। তখন ইউএনও মো. মনিরুজ্জামান সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

আরও পড়ুন

ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, ভোটকক্ষে একে একে প্রবেশের অনুরোধের জবাবে মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ বলেন, ‘এখানে যাঁরা এসেছেন সবাই ভোটার, এখানে ভোটার ছাড়া কোনো লোক নাই।’ এ সময় ইউএনওকে বলতে শোনা যায়, ‘প্লিজ, একজন একজন করে ভেতরে ঢুকুন।’ তখন মেয়র সাদিক আবদুল্লাহকে দাঁড়িয়ে বলতে শোনা যায়, ‘সমস্যা কোথায় আপনার? আমি কি ঢুকছি, আমি কি ভেতরে ঢুকছি? শুরু থেকে কেন সিনক্রিয়েট করছেন আপনারা? আপনি কে?’ এ সময় ইউএনও মনিরুজ্জামান নিজের পরিচয় দেন।

এরপর মেয়র ইউএনওর উদ্দেশে বলেন, ‘আপনি কী বলতে চান? আমি কি ভেতরে ঢুকছি? আপনি প্লিজ প্লিজ করতেছেন, আপনি কী বলতেছেন, আমি কি বুঝি না, আমি কি বাচ্চা শিশু নাকি?’ এ সময় ইউএনও অনেকটা বিব্রত হন এবং মেয়রকে বলেন, ‘স্যার, আমি এটা বলিনি।’ তখন মেয়র সাদিক আবদুল্লাহকে বলতে শোনা যায়, ‘স্টুপিডের মতো কথা বলেন।’ এরপর ইউএনওকে অনেকটা অপ্রস্তুত দেখা যায়।

আরও পড়ুন

এ সময় মেয়রের সঙ্গে থাকা নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি কে এম জাহাঙ্গীর ইউএনওকে বলেন, ‘এই হচ্ছে মেয়র, আমি জেলা পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান, এই হলো সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান। এখানে যাঁরা এসেছেন, সবাই সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর।’ এ সময় ইউএনও বলেন, ‘আমি আপনাদের কিছু বলিনি।’ তখন মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ ইউএনওর উদ্দেশে বলেন, ‘আপনি কী বলতেছেন, আপনি কী বোঝাতে চান?’

এরপর ইউএনও বলেন, ‘স্যার, আমি আপনাদের কিছু বলিনি।’ সাদিক আবদুল্লাহ বলেন, ‘তাইলে আপনি কী বলতেছেন? আমি কি ভেতরে গেছি নাকি। আসার পর থেকে ওখান থেকে একেকজন বলতেছেন আপনারা। ফাজলামি করেন নাকি? আপনি কানে কথা শোনেননি। যেভাবে ভাবটা করেন, তাতে বোঝায় দল বাঁইধা ঢুকতেছি। ভোটার হইছে ১৭৪ জন। তাহলে সমস্যা কোথায় আপনাদের?’ এ সময় ইউএনও বলেন, ‘স্যার আপনাকে বলিনি।’ এ সময় পাশ থেকে কেউ একজন বলেন, ‘ভিডিও করছে কেন?’ এটা শুনে মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ বলেন, ‘ভিডিও করুক না।’ এরপর মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ ভোট দিতে কক্ষে ঢোকেন এবং ভোট দেন।

আরও পড়ুন

ইউএনও মো. মনিরুজ্জামানের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি নির্বাচনী ডিউটিতে আছি। পরে কথা বলব।’ মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি কে এম জাহাঙ্গীর প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভোটকেন্দ্রে কোনো ঝামেলা হয়নি। আমরা সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে ভোট দিয়েছি। কিচ্ছু হয়নি।’

প্রসঙ্গত, ২০২১ সালের ১৮ আগস্ট রাতে বরিশাল সদর উপজেলা পরিষদ চত্বরে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী ও সদর আসনের সংসদ সদস্য জাহিদ ফারুকের শুভেচ্ছা ব্যানার অপসারণ নিয়ে সদর উপজেলার সাবেক ইউএনও মুনিবুর রহমানের সরকারি বাসভবনে হামলার ঘটনা ঘটে। এ সময় গুলি করার ঘটনা ঘটে। ইউএনও মুনিবুরের সঙ্গে বিরোধে জড়ান মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ। এতে পাল্টাপাল্টি তিনটি মামলা হয়েছিল।

আরও পড়ুন