রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা না দিয়েই প্রথম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হলেন শিক্ষার্থী
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা না দিয়েই প্রথম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হয়েছেন এক নারী শিক্ষার্থী। গত বুধবার প্রকাশিত বিভাগের তৃতীয় বর্ষের প্রথম সেমিস্টার ফলাফলের তালিকা থেকে এ তথ্য জানা গেছে। আজ রোববার দুপুরে বিষয়টি জানাজানির পর বিভাগে চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে। বিষয়টিকে ‘অনিচ্ছাকৃত ভুল’ বলছেন পরীক্ষা কমিটির সংশ্লিষ্ট শিক্ষকেরা।
বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গত ২৬ মে ইতিহাস বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের তৃতীয় বর্ষ প্রথম সেমিস্টারের পরীক্ষা শুরু হয় এবং শেষ হয় ৬ জুন। ১৬ অক্টোবর ওই পরীক্ষার ফলাফল বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়। এতে দেখা যায়, সাদিয়া আফরোজ মারিয়া নামের এক শিক্ষার্থীর ফল জিপিএ ৩ দশমিক ৫০, যিনি পরীক্ষাতেই অংশ নেননি। প্রাথমিকভাবে বিষয়টি কেউ খেয়াল না করলেও আজ দুপুরে বিষয়টি শিক্ষার্থীদের নজরে আসে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সাদিয়া আফরোজ অন্তঃসত্ত্বা থাকায় দ্বিতীয় বর্ষের দ্বিতীয় সেমিস্টার পরীক্ষায় অংশ নেননি। দ্বিতীয় বর্ষের গণ্ডি পেরোতে না পারায় তিনি তৃতীয় বর্ষের প্রথম সেমিস্টার পরীক্ষায়ও অংশ নেননি। এই ফলে ওই শিক্ষার্থীও অবাক হয়েছেন।
সাদিয়া আফরোজ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি মাতৃত্বকালীন অসুস্থতার জন্য দ্বিতীয় বর্ষের দ্বিতীয় সেমিস্টার পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারিনি। তাই আমি এখনো তৃতীয় বর্ষে উঠতে পারিনি। এখন আমি ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের সঙ্গে দ্বিতীয় বর্ষের দ্বিতীয় সেমিস্টারে অধ্যয়নরত। আজকে এক বান্ধবীর মাধ্যমে ফলাফল প্রকাশের বিষয়টি জানতে পেরে খুবই বিস্মিত হয়েছি।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের এক শিক্ষার্থী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, একজন শিক্ষার্থী পরীক্ষা না দিয়েই কীভাবে ফল পেতে পারেন? এ থেকে বোঝা যায়, পরীক্ষা কমিটির সদস্যরা যথাযথভাবে পরীক্ষার খাতা মূল্যায়ন না করে ইচ্ছামতো ফল তৈরি করেন। শিক্ষকদের এ ধরনের কর্মকাণ্ডের কারণে তাঁরা অনেকেই প্রত্যাশিত ফল থেকে বঞ্চিত হন।
জানতে চাইলে পরীক্ষা কমিটির সভাপতি অধ্যাপক আবুল কাশেম বলেন, ‘এটি একটি অনিচ্ছাকৃত ভুল। পরীক্ষা কমিটির তিনজন ট্যাবুলেটর (সদস্য) ছিলেন। মূলত তাঁদের গাফিলতির কারণেই ভুলটি হয়েছে। বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। এটি সংশোধনের জন্য আমরা ইতিমধ্যে কাজ শুরু করেছি।’
পরীক্ষা কমিটির সদস্য অধ্যাপক মর্তুজা খালেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘এটা আসলে একটা ভুল হয়ে গেছে। মূলত একই রোল নম্বরের পুনর্ভর্তির (পূর্ববর্তী শিক্ষাবর্ষ) এক শিক্ষার্থী থাকায় কোনোভাবে ওই শিক্ষার্থীর রোলটি যুক্ত হয়ে গেছে, যা কোনোভাবেই উচিত হয়নি। তবে এটি সংশোধনের সুযোগ আছে। আমরা এটি নিয়ে কাজ করছি।’
এ বিষয়ে ইতিহাস বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ফেরদৌসী খাতুনের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি কথা বলতে অস্বীকৃতি জানান।