ঝালকাঠিতে বাস দুর্ঘটনায় নিহত ১৭ জনের মধ্যে ১৪ জনের পরিচয় মিলেছে

ঝালকাঠি সদর উপজেলার ধানসিঁড়ি ইউনিয়ন পরিষদের কাছে আজ শনিবার সকালে যাত্রীবাহী বাস পুকুরে পড়ে যায়
ছবি: প্রথম আলো

ঝালকাঠিতে যাত্রীবাহী বাস পুকুরে পড়ে নিহত ১৭ যাত্রীর মধ্যে ১৪ জনের পরিচয় মিলেছে। স্বজনদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ময়নাতদন্ত ছাড়াই তাঁদের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছে জেলা প্রশাসন। আজ শনিবার সকাল সোয়া ১০টার দিকে সদর উপজেলার ধানসিঁড়ি ইউনিয়ন পরিষদ-সংলগ্ন একটি পুকুরে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাসটি পড়ে যায়।

দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে ঝালকাঠি জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. মামুন শিবলীকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি করা হয়েছে। কোনো অসচ্ছল পরিবার লাশ বহনে আর্থিকভাবে সমস্যা মনে করলে জেলা প্রশাসন তাঁদের সহায়তা দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে।

আরও পড়ুন

জেলা প্রশাসক ফারাহ গুল ‍নিঝুম প্রথম আলোকে বলেন, প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় ব্যক্তিদের মাধ্যমে জানা গেছে, চালক নিয়ন্ত্রণ হারালে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে বাসটি। এরপরও দুর্ঘটনার কারণ জানতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি করা হয়েছে। প্রতিবেদন পেলে দুর্ঘটনার সঠিক কারণ জানা যাবে।

দুর্ঘটনায় নিহত ব্যক্তিরা হলেন পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া পৌর এলাকার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের তারেক রহমান (৪৫), ৪ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্য ভান্ডারিয়ার সালাম মোল্লা (৬০), তাঁর ছেলে শাহীন মোল্লা (২৫), ভান্ডারিয়া উপজেলার পশুরবুনিয়া এলাকার জালাল হাওলাদারের শিশুকন্যা সুমাইয়া (৬), একই উপজেলার রিজার্ভ পুকুরের পাড় এলাকার রহিমা বেগম (৬০), তাঁর ছেলে আবুল কালাম হাওলাদার (৪৫), একই উপজেলার উত্তর শিয়ালকাঠি এলাকার রাবেয়া বেগম (৮০), বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার চরবোয়ালিয়া গ্রামের দেলোয়ার হোসেনের ছেলে আবদুল্লাহ (৮), মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলার মো. রিপনের স্ত্রী আইরিন আক্তার (২২), তাঁর শিশুকন্যা রিপা মনি (২), ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার নিজামিয়া এলাকার খাদিজা বেগম (৪৩), তাঁর মেয়ে খুশবু আক্তার (১৭), দক্ষিণ রাজাপুরের বলাইবাড়ী এলাকার নুরুল ইসলামের ছেলে মো. নয়ন (১৬) ও কাঁঠালিয়া উপজেলার বাঁশবুনিয়া গ্রামের সালমা আক্তার (৪২)।

ঝালকাঠিতে ‘বাসার স্মৃতি’ নামের যাত্রীবাহী বাস দুর্ঘটনায় আহত যাত্রীরা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন
ছবি: প্রথম আলো

নিহত অন্য তিনজনের পরিচয় এখনো শনাক্ত হয়নি। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও অন্তত ৩৪ জন। তাঁদের ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

নিহত ব্যক্তিদের লাশ সদর হাসপাতালের নিচতলার মেঝেতে সারবদ্ধভাবে রাখা হয়েছে। স্বজনদের আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠেছে হাসপাতালের পরিবেশ। পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া পৌরসভার নবনির্বাচিত মেয়র ফাইজুর রশিদ জোমাদ্দারকে সদর হাসপাতালে কর্মীদের নিয়ে নিহত ব্যক্তিদের লাশ হস্তান্তর ও বহনে ব্যস্ত থাকতে দেখা গেছে।

আরও পড়ুন

মা ও বোনের লাশ নিতে এসেছেন ঝালকাঠির নিজামিয়া এলাকার মো. রহমতুল্লাহ। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘আমি ঢাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করি। মা-বোন দুজন বাড়িতে থাকেন। বোনটি এবার এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। সে মাকে নিয়ে বরিশালে চিকিৎসকের কাছে যাচ্ছিল। বাস ছাড়ার ১০ মিনিট আগেও ঢাকা থেকে তাঁদের সঙ্গে কথা বলেছি। এখন তাঁদের লাশ নিয়ে বাড়ি যাচ্ছি।’

সিভিল সার্জন এইচ এম জহিরুল ইসলাম বলেন, আহত ব্যক্তিদের যথাযথ চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। অনেকেই অতিরিক্ত পানি পান করায় শ্বাসকষ্টে ভুগছেন। তাঁদের অক্সিজেনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। জখম হওয়া রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

আরও পড়ুন

আজ সকালে ‘বাসার স্মৃতি’ নামের যাত্রীবাহী বাসটি ৬৫ জন যাত্রী নিয়ে পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া থেকে বরিশালের দিকে যাচ্ছিল। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সদর উপজেলার ধানসিঁড়ি ইউনিয়ন পরিষদ-সংলগ্ন একটি পুকুরে পড়ে যায় বাসটি। এতে ১৭ জন নিহত ও ৩৪ জন আহত হন। দুর্ঘটনার পর পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা হতাহত যাত্রীদের উদ্ধার করেন। দুর্ঘটনার পর বাসচালক ও সুপারভাইজারের কোনো সন্ধান মেলেনি।