রংপুরের গঙ্গাচড়ায় সেতুর সংযোগ সড়কে ভাঙন

শেখ হাসিনা সেতুর সংযোগ সড়ক হুমকির মুখে পড়েছে। পিচ, খোয়া, মাটি, বালু বের হয়ে ভাঙন।

রংপুরের গঙ্গাচড়ার ‘শেখ হাসিনা সেতুর’ উত্তর দিকের সংযোগ সড়কের নিচ থেকে মাটি ধসে গেছে। গতকাল তোলা
ছবি: প্রথম আলো

রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলায় তিস্তা নদীর ভাঙনে বসতবাড়ি ও ফসলি জমি বিলীন হচ্ছে। একই সঙ্গে শেখ হাসিনা সেতুর সংযোগ সড়ক হুমকির মুখে পড়েছে। সেতু থেকে প্রায় ১৫০ ফুট দূরত্বে সংযোগ সড়কের তলদেশে পিচ, খোয়া, মাটি, বালু বের হয়ে ভাঙন দেখা দিয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) রংপুর কার্যালয় সূত্র জানায়, মূল সেতুর তলদেশে চর জেগে উঠেছে। এর ফলে সেতুর নিচ দিয়ে স্বাভাবিকভাবে পানি প্রবাহিত হতে পারছে না। নদীর গতিপথও পরিবর্তন হওয়ার লক্ষণ দেখা দিয়েছে। ইতিমধ্যে নদীর উজানে শংকরদহ, ইছলি, ইশরকুল এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। এই পথে পানির প্রবল স্রোত সেতুর উত্তর দিকের সংযোগ সড়কে গিয়ে আঘাত হানছে।

সংযোগ সড়কে গিয়ে নদীর পানি আঘাত হানছে। এটি জরুরি ভিত্তিতে সংস্কার করা না হলে এই সড়ক হুমকিতে পড়বে।
আবদুল্লাহ আল হাদী, লক্ষ্মীটারি ইউপির চেয়ারম্যান

গতকাল বুধবার সকালে গিয়ে দেখা যায়, শেখ হাসিনা সেতুর উত্তর প্রান্তের মাত্র ১৫০ ফুটের মধ্যে সংযোগ সড়কের পূর্ব দিকে পানির স্রোতে সড়ক ও সড়কের তলদেশে ভাঙন দেখা দিয়েছে। পিচ, খোয়া উঠে বালু–মাটি বের হয়ে পড়েছে।

পাউবো ও উপজেলার লক্ষ্মীটারি ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় সূত্র জানায়, ২০১৯ সালে সেতু ও সংযোগ সড়ক রক্ষায় ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে সেতুর পশ্চিমে গঙ্গাচড়া উপজেলার লক্ষ্মীটারি ইউনিয়নের শংকরদহ গ্রামে মাটি, বালুর বস্তা ও সিমেন্টের ব্লক দিয়ে ৫০০ মিটার দীর্ঘ বাঁধ নির্মাণ করা হয়। ২০২১ সালে নদীভাঙনে তা বিলীন হয়ে যায়।

লক্ষ্মীটারি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল হাদী বলেন, বিভিন্ন স্থানে চর জেগে ওঠায় নদীর গতিপথের পরিবর্তন হয়েছে। বন্যায় পানির স্রোত উল্টো দিকে যায়। এর ফলে শেখ হাসিনা সেতুর সংযোগ সড়কে গিয়ে নদীর পানি আঘাত হানছে। এটি জরুরি ভিত্তিতে সংস্কার করা না হলে এই সড়ক হুমকিতে পড়বে।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সূত্র জানায়, যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়ন ও ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নতির জন্য লালমনিরহাটের পাটগ্রামে অবস্থিত বুড়িমারী স্থলবন্দরের সঙ্গে রংপুরসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার দূরত্ব কমাতে তিস্তা নদীর ওপর দ্বিতীয় তিস্তা সড়কসেতু (যা পরবর্তী সময়ে শেখ হাসিনা সেতু নামকরণ করা হয়) নির্মাণ করা হয়। লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার কাকিনা ইউনিয়নের রুদ্বেশ্বর ও রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার লক্ষীটারি ইউনিয়নের মহিপুর এলাকায় তিস্তা নদীর ওপর ২০১২ সালের ১২ এপ্রিল এ সেতুর নির্মাণকাজ উদ্বোধন করা হয়। ২০১৮ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেতুর উদ্বোধন করেন। ৮৫০ মিটার দৈর্ঘ্য এবং ফুটপাতসহ ৯ দশমিক ৬ মিটার প্রস্থের সেতুটি নির্মাণে ব্যয় হয় ১২৩ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। ওই বরাদ্দে নদীর উভয় পাশে ১ হাজার ৩০০ মিটার নদী শাসনের জন্য বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে।

সেতুর সংযোগ সড়ক দেখভালের দায়িত্ব এলজিইডির। এলজিইডির রংপুর কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী শাহজাহান আলী বলেন, খুব শিগগির ঘটনাস্থল সরেজমিন পরিদর্শন করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এর আগেও ওই স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছিল। তখন সংস্কার করা হয়েছিল। সেতুর উত্তর ও দক্ষিণ দিকে ৩০ ফুট সংযোগ সড়ক প্রশস্ত করা হবে। মূল সড়কের উভয় পাশে ১৫ ফুট করে সড়ক আরও প্রশস্ত করা হবে। ইতিমধ্যে দরপত্র আহ্বানের প্রস্তুতি চলছে।