টেকনাফে জেলের জালে ১৫ মণ ওজনের মাছ, কেন এটি ধরা নিষিদ্ধ

কক্সবাজারের টেকনাফ উপকূলে ধরা পড়া বিশাল আকৃতির শাপলাপাতা মাছছবি: সংগৃহীত

কক্সবাজারের টেকনাফ উপকূলে এক জেলের জালে ধরা পড়ে ১৫ মণ ওজনের একটি মাছ। দানব আকৃতির এই মাছটি দেখতে অদ্ভুত দর্শন। নৌকা থেকে নামিয়ে তীরে টেনে আনতে হাত লাগাতে হয়েছে বেশ কয়েকজনকে। মুহূর্তেই ভিড় জমে যায় মাছটিকে ঘিরে। বিশাল আকারের মাছটি স্থানীয় জেলেদের কাছে শাপলা পাতা নামে পরিচিত। হাঙর প্রজাতির স্টিংরে পরিবারের এই মাছ বাংলাদেশের বন্য প্রাণী আইনে ধরা ও বিক্রি নিষিদ্ধ।

গতকাল শুক্রবার বিকেলে টেকনাফ সমুদ্রের সাবরাং মুন্ডার ডেইল উপকূলে মাছটি জেলে আবদুল গফুরের জালে ধরা পড়ে এই মাছ। ধরা ও বিক্রি নিষিদ্ধ হলেও মাছটি ৫০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে।

জেলে আবদুল গফুর বলেন, মাছটি ধরা পড়ার পর সাগর থেকে উপকূলে আনতে অনেক কষ্ট হয়েছে। অতিরিক্ত ওজনের কারণে ট্রলারে ভরে উপকূলে তোলা সম্ভব হয়নি। পরে অন্য জেলেদের সহায়তায় মাছটিকে রশি দিয়ে বেঁধে আনতে হয়েছে। বিশাল আকারের শাপলা পাতা মাছ জীবনের প্রথম দেখেছেন বলে জানান তিনি।

টেকনাফ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন বলেন, জেলের জালে ধরা পড়া বিশাল আকারের এই মাছ শাপলা পাতা বা পাতা হাঙর। এই ধরা নিষিদ্ধ।

স্থানীয় জেলেরা বলেন, সাগরের জোয়ার-ভাটার পানির সঙ্গে গভীর সমুদ্র থেকে এই মাছটি আবদুল গফুরের জালে ধরা পড়েছে। অন্যথায় জালটি সমুদ্রের যে স্থানে ফেলা হয়েছিল, সেখানে এই মাছটি ধরা পড়ার কথা নয়। কারণ, এই মাছ গভীর সমুদ্রে বসবাস করে।

স্থানীয় মাছ ব্যবসায়ী নুর আহমদ বলেন, বিশাল আকারের শাপলা পাতা ধরার পর সাবরাং মুন্ডার ডেইল ফিশিং ঘাটে স্থানীয় মানুষের ভিড় বাড়তে থাকে। জেলেরা মাছটিকে রশি দিয়ে বেঁধে টেনে উপকূলে নিয়ে আসেন। ভিন্ন প্রকৃতির এই মাছটিকে একনজর দেখার জন্য বিভিন্ন স্থান থেকে টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কসংলগ্ন সৈকত এলাকায় ঘুরতে আসা পর্যটকেরাও ভিড় জমান।

স্থানীয় ছৈয়দ আলম নামের একজন মাছ ব্যবসায়ী ৫০ হাজার টাকা দিয়ে শাপলা পাতা মাছটি কিনে নেন। ছৈয়দ আলম বলেন, মাছটি কেটে টুকরা টুকরা করে চট্টগ্রামে পাঠানো হবে।

বাংলাদেশ বন্য প্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন অনুযায়ী, শাপলা পাতা মাছ একটি সংরক্ষিত জলজ বন্য প্রাণী। এই আইনের ধারা ৩৮ অনুযায়ী, ‘সংরক্ষিত বন্য প্রাণী হত্যা, সংগ্রহ, অধিকার, ভোগ, পরিবহন, বিক্রয় বা কেনা দণ্ডনীয় অপরাধ। এর জন্য সর্বোচ্চ ১ বছর কারাদণ্ড বা ১ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা অথবা উভয় দণ্ড হতে পারে।’

জানতে চাইলে কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) আবদুল্লাহ আল মামুন প্রথম আলোকে বলেন, শাপলা পাতা বা পাতা হাঙর ধরা, বিক্রি করা বন্য প্রাণী আইনে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। টেকনাফের সাবরাং মুন্ডার ডেইল ফিশিং ঘাটে যে মাছটি ধরা পড়েছে, সে সম্পর্কে আমরা অবগত নই। তবে খুব দ্রুত এ বিষয়ে খবর নেওয়া হচ্ছে। ছৈয়দ আলম নামের যে জেলে শাপলা পাতা কিনেছেন, মাছটি নিয়ে বর্তমানে তাঁর অবস্থান কোথায়—খবর নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।