মুলাদীতে বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি বাতিল দাবির মিছিলে হামলা, আহত ৩০

বরিশাল জেলার মানচিত্র

বরিশালের মুলাদী উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি বাতিলের দাবিতে পদবঞ্চিত নেতা–কর্মীদের উদ্যোগে আয়োজিত মিছিলে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা হামলা চালিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে অন্তত ৩০ নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। মঙ্গলবার দুপুর পৌনে ১২টার দিকে মুলাদী পৌর এলাকার খাদ্যগুদাম এলাকায় এ হামলার ঘটনা ঘটে। হামলায় আহত নেতা-কর্মীরা ভয়ে হাসপাতালে ভর্তি হননি। তাঁরা স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

হামলার শিকার নেতা-কর্মীরা নিজেদের রক্ষা করতে মুলাদী উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আবদুস ছত্তার খানের বাড়িতে আশ্রয় নিলে ওই বাড়িতেও হামলা চালানো হয়। ছত্তার খান মুলাদী উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এবং মুলাদী পৌরসভার সাবেক মেয়র ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান।

ছত্তার খান অভিযোগ করেন, সম্প্রতি মুলাদী উপজেলা বিএনপির যে আহ্বায়ক কমিটি করা হয়েছে, সেখানে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির লোকদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এ কমিটি গঠনে সরকারি দলের পৃষ্ঠপোষকতা রয়েছে। সে জন্যই বঞ্চিত নেতা-কর্মীদের শান্তিপূর্ণ মিছিলে হামলা করেছেন সরকারি দলের নেতা-কর্মীরা।
ছত্তার খান আরও অভিযোগ করেন, মুলাদী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তারিকুল হাসান খানের ছোট ভাই মনিরুল হাসান ওরফে টিপুর নেতৃত্বে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের ১৫-২০ জন নেতা-কর্মী লাঠিসোঁটা ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে এ হামলা চালান।

তবে পদবঞ্চিত নেতা–কর্মীদের মিছিলে হামলার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন মনিরুল হাসান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘মুলাদী কলেজে ছাত্রলীগের নবীনবরণ অনুষ্ঠান চলছিল। ওই সময় বিএনপির মিছিল থেকে আপত্তিকর স্লোগান দিলে দুই পক্ষ মুখোমুখি হয়ে যায়। পরে বিএনপির নেতা-কর্মীরা ছত্তার খানের বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের ওপর ইট ছোড়েন। এতে আমাদের দুই নেতা আহত হয়েছেন। তাঁদের একজন হাসপাতালে ভর্তি। আমি পরিস্থিতি শান্ত করতে সেখানে যাই। আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সত্য নয়।’

পদবঞ্চিত নেতা-কর্মীদের এ আন্দোলনে নেতৃত্বে দিচ্ছেন সাবেক উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবদুস ছত্তার খান ও উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক আবিদুর রহমান শরীফ।

বিএনপির দলীয় সূত্র জানায়, গত ১০ জানুয়ারি ৬১ সদস্যবিশিষ্ট মুলাদী উপজেলা ও ৪১ সদস্যবিশিষ্ট পৌর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। বরিশাল উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও সদস্যসচিব স্বাক্ষরিত পৃথক দুটি কমিটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করেন। ওই কমিটি ঘোষণার পর থেকেই মুলাদী উপজেলা বিএনপির একাংশের নেতা-কর্মীরা তা বাতিলের দাবি জানিয়ে আসছেন। এ দাবিতে তাঁরা এর আগে বিক্ষোভ মিছিল ও সংবাদ সম্মেলন করে তা প্রত্যাখ্যান করেছেন।

পদবঞ্চিত নেতা-কর্মীদের এ আন্দোলনে নেতৃত্বে দিচ্ছেন সাবেক উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবদুস ছত্তার খান ও উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক আবিদুর রহমান শরীফ।

১১ ফেব্রুয়ারি মুলাদী প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে আবিদুর রহমান বলেন, ‘মুলাদী উপজেলায় বিএনপির ত্যাগী, সাংগঠনিক, যোগ্য নেতা-কর্মীদের বাদ দিয়ে অযোগ্য, দলছুট ও অন্য দলের নেতাদের নিয়ে আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। দ্রুত এই কমিটি বাতিল করে ত্যাগী ও যোগ্য নেতাদের দিয়ে মুলাদী উপজেলা ও পৌর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি গঠনের দাবি করেন। যত দিন পর্যন্ত এ কমিটি বাতিল করা না হবে, তত দিন পর্যন্ত আমরা আন্দোলন-সংগ্রাম চালিয়ে যাব।’

অযোগ্য ও দলছুট নেতাদের দিয়ে কমিটি গঠনের অভিযোগের বিষয়ে কথা বলার জন্য বরিশাল উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা দেওয়ান মোহাম্মদ শহীদুল্লাহর মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ধরেননি।