মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা তেঁতুলিয়ায়, হিম বাতাসে কাবু জনজীবন

সকালের হাড়কাঁপানো শীত উপেক্ষা করে প্রয়োজনের তাগিদে বের হয়েছেন সাধারণ মানুষ। আজ শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে পঞ্চগড় জেলা শহরসংলগ্ন করতোয়া সেতুতেছবি: প্রথম আলো

কাঁধে মাটি কাটার ভার আর কোদাল নিয়ে কুয়াশাচ্ছন্ন সকালে কাজের সন্ধানে পঞ্চগড় শহরে এসেছেন খয়রুল ইসলাম (৫৫) ও এনামুল হক (৫০)। দুজনের পরনে জ্যাকেট, লুঙ্গি আর গলায় প্যাঁচানো মাফলার। সকাল পৌনে ১০টার দিকে শহরের বানিয়াপট্টি এলাকায় কথা তাঁদের সঙ্গে। খয়রুল ইসলাম বলেন, ‘আজি কুয়াশাতে কিছু দেখা যায় না, আজি বোধে (মনে হয়) এইবারকার (এবারের) সবচেয়ে বেশি ঠান্ডা। তারপরও কাজকাম পাবার আশায় শহরোত আসিনো। ঠান্ডার সময় কোনো দিন কাজ পাওয়ায় যাছে, আর কোনো দিন নাই। কিন্তু পেট তো আর ঠান্ডা বুঝে না বাপু।’

খয়রুলের কথার সঙ্গে যোগ দিয়ে এনামুল হক বলেন, ‘হামরা গরিব মাইনষি, কাম না করিলে পেটোত ভাত নাই। ঠান্ডা করিলেও কাম করিবা নাগিবে, না করিলেও নাগিবে। যে কুয়াশা দেখা যাছে কাজকাম পামো কিনাই সন্দেহ নাগেছে।’

শ্রমিক খয়রুল আর এনামুলের বাড়ি পার্শ্ববর্তী বোদা উপজেলা ফুলতলা এলাকায়। প্রতিনিয়ত শহরে এসে মাটিকাটাসহ রাজমিস্ত্রির সহকারী হিসেবেও কাজ করেন তাঁরা। তীব্র শীত আর ঘন কুয়াশায় শুধু তাঁরা দুজনই নন, দেশের উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের বিভিন্ন পেশার মানুষ বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন।

পঞ্চগড়ে রাতভর টিপ টিপ বৃষ্টির মতো কুয়াশা ঝরে ভিজে গেছে পিচঢালা পথ। ঘন কুয়াশায় আচ্ছন্ন হয়েছে চারদিক। উত্তরের হিমেল বাতাসে কাবু জনজীবন। তীব্র শৈত্যপ্রবাহে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন উত্তরে জেলা পঞ্চগড়ের খেটে খাওয়া নিম্ন আয়ের মানুষ।

তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার সূত্রে জানা গেছে, আজ শুক্রবার সকাল ৯টায় তেঁতুলিয়ায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৫ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা এই মৌসুমে সারা দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। এ সময় তেঁতুলিয়ায় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ১০০ শতাংশ। তবে আজ বেলা সাড়ে ১১টার পর দেখা মিলেছে সূর্যের। উঠেছে ঝলমলে রোদ।

গত মঙ্গলবার থেকে তেঁতুলিয়ায় তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় তেঁতুলিয়ায় দিনের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৮ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকাল সন্ধ্যার পর থেকেই বাড়তে থাকে উত্তরের হিমেল বাতাসের দাপট। রাত গভীর হওয়ার সঙ্গে বাড়তে থাকে কুয়াশাও। ঘন কুয়াশার কারণে সকালে সড়কে যানবাহনগুলোকে চলতে দেখা গেছে হেডলাইট জ্বালিয়ে। গায়ে শীতের পোশাক জড়িয়ে কাজে যেতে দেখা গেছে খেটে খাওয়া নিম্ন আয়ের মানুষদের। আবার সকালে কেউ কেউ খড়কুটা জ্বালিয়ে করেছেন শীত নিবারণের চেষ্টা। তবে বেলা সাড়ে ১১টার পর ঝলমলে রোদ দেখা দেওয়ায় স্বস্তি ফিরেছে জনমনে।

এদিকে টানা প্রায় এক মাসের কনকনে শীতে পঞ্চগড়ে বেড়েছে ঠান্ডাজনিত রোগীর সংখ্যা। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তিরা জ্বর, সর্দি, কাশি, ডায়রিয়া, নিউমোনিয়াসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। ঠান্ডাজনিত এসব রোগ এড়াতে সচেতন থাকার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকেরা।

সকাল সাড়ে নয়টার দিকে জেলা শহরের চৌরঙ্গী মোড়ে অটোরিকশা থামিয়ে রেখে কয়েকজনের সঙ্গে আগুনের তাপ পোহাচ্ছিলেন রিকশাচালক ফারুক হোসেন। তিনি বলেন, ‘সকালে রিকশা নিয়া বাইর হইচু। শহরোত লোকজন খুব কম। ভাড়া (যাত্রী) পাওয়া যায় না। রিকশাখান চালাইলে হাত-পাওলা ঠান্ডাতে বিষাচে (ব্যথা করছে)। এই তানে আগুনখানো গরম করে নেছু (নিচ্ছি)।’

বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রাসেল শাহ মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, আজ তেঁতুলিয়ায় চলতি মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। এটা তীব্র শৈত্যপ্রবাহ। বেলা ১১টার পর ধীরে ধীরে কুয়াশার পরিমাণও কমে গেছে। আকাশে মেঘ নেই। এ জন্য রোদ উঠেছে। তবে উত্তরের হিমেল বাতাস অব্যাহত আছে বলে তিনি জানান।

আরও পড়ুন