বাসায় ডেকে প্রেমিককে খুন, লাশ বস্তাবন্দী করে দুই দিন রাখেন খাটের নিচে
নরসিংদীর পলাশ উপজেলার একটি পুকুরপাড় থেকে গত শুক্রবার বস্তাবন্দী এক অজ্ঞাতপরিচয় তরুণের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে তদন্তে জানা যায়, স্বামী-স্ত্রী মিলে ওই তরুণকে ফোন করে বাসায় ডেকে এনে হত্যা করেন। হত্যার পর তাঁর হাত-পা বেঁধে কাঁথায় মুড়িয়ে প্লাস্টিকের বস্তায় ভরে দুদিন খাটের নিচে রেখে দেন। এরপর একটি পুকুরপাড়ে লাশ ফেলে যান।
এ ঘটনায় গ্রেপ্তার ফারজানা আক্তার মিথিলা (২৪) নরসিংদীর আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়ে হত্যাকাণ্ডের বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন।
নিহত তরুণের নাম নয়ন চন্দ্র মজুমদার (২৮)। তাঁর বাড়ি চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ উপজেলার উত্তর মগধরা গ্রামে। নয়ন নরসিংদীর পলাশ উপজেলার ঘোড়াশাল বাজার এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় পরিবার নিয়ে বসবাস করতেন। পাশের ঘাগড়া গ্রামে নিজের সেলুনে কাজ করতেন তিনি।
গ্রেপ্তার ফারজানা আক্তার মিথিলা পলাশের ঘোড়াশাল পৌর এলাকার দক্ষিণ মিয়াপাড়া গ্রামের মৃত সোহেল মিয়ার মেয়ে। এ হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্ত তাঁর স্বামী ফয়সাল এখনো পলাতক। তাঁকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
পুলিশ জানায়, আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে ফারজানা বলেন, নয়নের সঙ্গে তাঁর দীর্ঘদিনের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। একপর্যায়ে অন্যত্র বিয়ে হলেও নয়নের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ ছিল। এ নিয়ে স্বামীর সঙ্গে ফারজানার প্রায়ই কলহ হতো। একপর্যায়ে স্বামী-স্ত্রী মিলে নয়নকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেন।
জবানবন্দি অনুযায়ী, ৯ ডিসেম্বর রাতে ‘স্বামী বাড়িতে নেই’—এ কথা বলে ফারজানা ফোন করে নয়নকে বাসায় ডেকে নেন। নয়ন সেখানে গেলে তাঁদের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে রুটি বানানোর বেলুন দিয়ে নয়নের মাথায় আঘাত করা হয়। একাধিক আঘাতে রক্তাক্ত অবস্থায় তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়।
হত্যার পর নয়নের হাত-পা বেঁধে কাঁথায় মুড়িয়ে একটি প্লাস্টিকের বস্তায় ভরে তাঁরা দুদিন খাটের নিচে লাশ লুকিয়ে রাখেন। বৃহস্পতিবার রাতে ওই বস্তাসহ আরও কিছু মালামাল নিয়ে ব্যাটারিচালিত একটি অটোরিকশায় ওঠেন তাঁরা। পরে জিনারদী ইউনিয়নের কাটাবের এলাকার সড়কসংলগ্ন একটি পুকুরপাড়ে কৌশলে বস্তাটি ফেলে যান।
পরদিন শুক্রবার দুপুরে ওই পুকুরপাড় থেকে বস্তাবন্দী অবস্থায় নয়নের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পিবিআই পরিচয় শনাক্ত করার পর তাঁর মা ঝর্ণা রানী মজুমদার অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে মামলা করেন। মামলার তদন্তে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় ফারজানাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে তিনি হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন।
পলাশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহেদ আল মামুন বলেন, ফারজানা আদালতে ১৬৪ ধারায় দেওয়া জবানবন্দিতে হত্যার দায় স্বীকার করেছেন। হত্যাকাণ্ডে জড়িত ফারজানার স্বামী ফয়সাল পলাতক। তাঁকে গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান চলছে।