‘কম্বল পাইয়া ভালো হইছে, ঠান্ডায় বহুত উপকার হইব’

প্রথম আলো ট্রাস্টের পক্ষ থেকে শীতবস্ত্র কম্বল পেয়ে খুশি তাঁরা। বৃহস্পতিবার সকালে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার হোসনাবাদ চা–বাগানেছবি: প্রথম আলো

‘বাগানো বিকাল থাকি বেজান (বেশি) ঠান্ডা লাগে। হামরা (আমরা) টাউন থাকি বহুত দূরের বাগানে থাকি। সব সুবিধা টাউনের মানুষ পায়। এত দূরে কেউ কম্বল লইয়া আয় না। এই ঠান্ডার মধ্যে অনেক কষ্ট হয় আমরার। টাকার লাগি একটা নতুন কম্বল কিনতে পারি না। পুরান কম্বল দিয়া অনেক কষ্টে শীত পার করি। আপনারা হামদের (আমাদের) কথা ভাবিয়া এত দূরে আইয়া কম্বল দিছেন। কম্বল পাইয়া ভালো হইছে, ঠান্ডাত বহুত উপকার হইব। ভগবান আপনাদের ভালা করবে।’

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে প্রথম আলো ট্রাস্টের পক্ষ থেকে কম্বল পেয়ে ৬৫ বছর বয়সী অম্বরতী তাঁতি এভাবেই অনুভূতি প্রকাশ করেন। এদিন অম্বরতীর মতো শ্রীমঙ্গলের বিভিন্ন চা–বাগানের শীতার্ত শ্রমিকদের মধ্যে দুই শতাধিক কম্বল বিতরণ করা হয়। কম্বল পেয়ে হাসি ফুটে ওঠে শীতার্ত অসহায় মানুষের মুখে।

কয়েক দিন ধরে শ্রীমঙ্গলের তাপমাত্রা নিম্নমুখী। দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রাও রেকর্ড হয়েছে কয়েক দিন আগে। এমন পরিস্থিতিতে শ্রীমঙ্গলের হোসনাবাদ, নন্দরানী, জঙ্গলবাড়ি, এম আর খান চা–বাগান ঘুরে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সহযোগিতায় প্রথম আলোর স্থানীয় প্রতিনিধি অসহায় মানুষের তালিকা তৈরি করেন। আজ বৃহস্পতিবার সকালে হোসনাবাদ চা–বাগানের নাটমণ্ডপ প্রাঙ্গণে তাঁদের হাতে তুলে দেওয়া হয় প্রথম আলো ট্রাস্টের কম্বল। বয়সের ভারে যাঁরা আসতে পারেননি, তালিকা দেখে তাঁদের বাড়িতে কম্বল পৌঁছে দেওয়া হয়।

ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধ মালেক মিয়া বলেন, ‘কম্বলটা ভালো হইছে। গায়ে জড়িয়া ঘুমাইলে ঠান্ডা লাগতো নায়। ঘর থাকি বার হইলেও চাদ্দরের কাজ করব। ঠান্ডায় বহুত উপকার হইব।’ চা–শ্রমিক সবিতা প্রথম আলোকে বলেন, ‘সন্ধ্যা থাকি প্রচুর ঠান্ডা বাতাস বয়। ঘরের ভিতরেও ঠান্ডা। আমার বাচ্চাটা ঠান্ডায় পড়াশোনা করতে পারে না। এই কম্বল গায়ে দিয়া বিছানায় বইয়া পড়তে পারব।’

প্রথম আলো ট্রাস্টের কম্বল বিতরণ। বৃহস্পতিবার শ্রীমঙ্গলের হোসনাবাদ চা–বাগানে
ছবি: প্রথম আলো

শীতার্ত মানুষের মধ্যে কম্বল বিতরণের সময় বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সহসভাপতি পংকজ কন্দ; সাংগঠনিক সম্পাদক বিজয় হাজরা; চা–শ্রমিকনেতা ও শ্রীমঙ্গল উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান প্রেম সাগর হাজরা; হোসনাবাদ চা–বাগান পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি সুদাম তাঁতি; শ্রীমঙ্গল উপজেলা প্রেসক্লাবের দপ্তর সম্পাদক জহিরুল ইসলাম; আলোকচিত্রী কাজল হাজরা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

চা–শ্রমিকনেতা বিজয় হাজরা প্রথম আলোকে বলেন, চা–বাগানে একটু বেশি শীত পড়ে। শ্রমিকেরা যে মজুরি পান, তা দিয়ে সংসারের খাবার জোগাড় করাই কষ্টকর। প্রথম আলো ট্রাস্ট যেভাবে চা–বাগানের মানুষের জন্য এগিয়ে এসেছে, সরকারের পাশাপাশি দেশের বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো এভাবে মানবতার কাজে এগিয়ে আসুক। এতে অসহায় শীতার্ত মানুষের কষ্ট দূর হবে। শীতার্তদের জন্য উদ্যোগ নেওয়ায় প্রথম আলো ট্রাস্টকে ধন্যবাদ।

শ্রীমঙ্গলের বিভিন্ন চা–বাগানের শীতার্ত শ্রমিকদের মধ্যে দুই শতাধিক কম্বল বিতরণ করা হয়। কম্বল পেয়ে হাসি ফুটে ওঠে শীতার্ত অসহায় মানুষের মুখে। বৃহস্পতিবার সকালে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার হোসনাবাদ চা–বাগানে
ছবি: প্রথম আলো

প্রথম আলো ট্রাস্টের এই উদ্যোগে সহযোগিতা করছে ইলেক্ট্রো মার্ট লিমিটেড (কনকা)। শীতার্ত মানুষের জন্য প্রথম আলো ট্রাস্টে পাঁচ লাখ টাকা অনুদান দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এই অনুদানের টাকায় কেনা কম্বল অসহায় ও শীতার্ত মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।

শীতার্ত মানুষের সহযোগিতায় আপনিও এগিয়ে আসতে পারেন।
হিসাবের নাম: প্রথম আলো ট্রাস্ট/ত্রাণ তহবিল
হিসাব নম্বর: ২০৭২০০০০১১১৯৪
ঢাকা ব্যাংক লিমিটেড, কারওয়ান বাজার শাখা, ঢাকা।
অথবা বিকাশে পেমেন্ট করতে পারেন: ০১৭১৩-০৬৭৫৭৬ এই মার্চেন্ট অ্যাকাউন্ট নম্বরে। বিকাশ অ্যাপে ডোনেশন অপশনের মাধ্যমেও আপনার অনুদান পাঠাতে পারেন।