সংযোগ সড়ক নেই, ভোগান্তি

মূল সড়ক থেকে এ সেতু প্রায় ছয় ফুট উঁচু। তাই বাঁশের খুঁটির ওপর কাঠ-বাঁশের পাটাতন দিয়ে সেতুর দুই দিকে সাঁকো তৈরি করেছেন স্থানীয় লোকজন।

রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার সারাই ইউনিয়নের নায়রা এলাকায় সেতুর সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হয়নি। গত মঙ্গলবার সকালে
ছবি: প্রথম আলো

রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার মানাস নদের ওপর সেতু নির্মাণের দেড় বছর পরও দুই দিকে সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হয়নি। এ ছাড়া, সেতু রেলিংসহ বিভিন্ন কাজ বাকি। এ অবস্থায় আট গ্রামের মানুষ চলাচলে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। স্থানীয় লোকজন নিজেদের উদ্যোগে কাঠের একটি সাঁকো তৈরি করে কোনোরকমে যাতায়াত করছেন।

উপজেলার সারাই ইউনিয়নের নায়রা গ্রামে মানাস নদের ওপর এ সেতু অবস্থিত। কাচু মহেষওয়ালা মোড়-নায়রা সড়কের যাতায়াতের জন্য এ সেতু নির্মাণ করা হয়।

গত মঙ্গলবার সরেজমিনে দেখা যায়, সেতুটির দুই দিকের রেলিং এখনো করা হয়নি। পিলারের ভেতর থেকে রড বের হয়ে আছে। মূল সড়ক থেকে এ সেতু প্রায় ছয় ফুট উঁচু। তাই বাঁশের খুঁটির ওপর কাঠ-বাঁশের পাটাতন দিয়ে অসমাপ্ত সেতুর দুই দিকে সাঁকো তৈরি করেছে স্থানীয় লোকজন। এ সাঁকো দিয়ে বাইসাইকেল ও মোটরসাইকেল কোনো রকম চলাচল করতে পারে। অধিকাংশ মানুষ পায়ে হেঁটে চলাচল করছেন।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সেতুর পশ্চিম প্রান্তে মদামুদন, বকুলতলা, নোয়াখালীটারী, কাচু মধ্যপাড়া গ্রাম আছে। আরও আছে একটি মাধ্যমিক স্কুল, দুটি প্রাথমিক স্কুল ও বাজার। আর পূর্ব প্রান্তে ঢুলিপাড়া, রামচন্দ্রপুর, সটিপাড়া, মাছহাড়ী গ্রাম। পূর্ব পাড়ে একটি মাধ্যমিক স্কুল ও প্রাথমিক স্কুল রয়েছে। প্রতিদিন শত শত মানুষ মহেষওয়ালা বাজার থেকে নায়রা সড়ক দিয়ে চলাচল করেন। সেতুর নির্মাণকাজ শেষ না হওয়ায় এই আট গ্রামের মানুষ দুর্ভোগে পড়েছেন।

সারাই ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নম্বর ওয়ার্ড মেম্বার সাইফুল ইসলাম বলেন, সেতুটি নির্মাণের জন্য কতবার দেনদরবার করা হলো উপজেলা প্রকৌশলীর দপ্তরে। কিন্তু কাজ আর হচ্ছে না। শুধু বলা হয় এই হচ্ছে, এই হচ্ছে।

মদামুদন এলাকার বাসিন্দা পল্লিচিকিৎসক আবদুর রশিদ বলেন, আগে এখানে একটি ছোট সেতু ছিল। সেটি ভেঙে ফেলে নতুন সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। সেই কাজও দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে। এখন এই সেতুর ওপর দিয়ে চলাচল করা যায় না। তাঁরা চান দ্রুত এই সেতুর কাজ শেষ করা হোক।

কাচু গ্রামের বাসিন্দা ব্যবসায়ী মজনু মিয়া বলেন, ‘ব্যবসার মালপত্র নিয়া যাওয়া যায় না। আগোতে ছোট সেতু সেইটায় ভালো ছিল হামার গ্রামের মানুষগুলার জন্যে।’

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) উপজেলা কার্যালয় সূত্র জানায়, এলজিইডির অধীনে ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১৫ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৭ মিটার প্রস্থের এ সেতু নির্মাণের দরপত্র আহ্বান করা হয়। এতে ব্যয় ধরা হয় ২ কোটি ২১ লাখ ৯১ হাজার টাকা। ২০২০ সালের ৩ এপ্রিল সেতু নির্মাণের কার্যাদেশ পায় কে জেড এইচ সি (জেভি) নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। যার মালিক রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার বাসিন্দা এনামুল হক। কার্যাদেশ পাওয়ার এক বছরের মধ্যে ২০২১ সালের ৩ এপ্রিল নির্মাণকাজ শেষ করার কথা থাকলেও নির্ধারিত সময়ে সড়ক ও সেতুর কাজ হয় ৭০ শতাংশ। এরপর প্রায় দেড় বছর ধরে বন্ধ রয়েছে।

এ বিষয়ে ঠিকাদার এনামুল হক জানান, তাঁর নিবন্ধন নিয়ে অন্য একজন এই কাজটি করছেন।

এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলী আসাদুজ্জামান বলেন, শিগগিরই সেতুর সংযোগ সড়কসহ যাবতীয় কাজ শুরু করা হবে।